ধূমপান বিরোধী নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগে এতো অনিহা কেন?

669

দুই হাজার পাঁচ সনে বাংলাদেশে ধূমপান বিরোধী নিয়ন্ত্রণ আইনের খসরা করা হয়। যাহা ধূমপান ও ‘তামাকজাত দ্রব্য ব্যাবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ নামে অভিহিত। এই আইনে তামাকের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে “ ‘তামাক’ অর্থ কোন নিকোটিনা টাবাকাম বা নিকোটিনা রাসটিকার শ্রেণিভুক্ত উদ্ভিদ বা এতদসম্পর্কিত অন্য কোন উদ্ভিদ বা উহাদের কোন পাতা বা ফসল, শিকড়, ডাল বা উহার কোন অংশ বা অংশ বিশেষ।”
ধূমপান কাহাকে বলা হবে সে বিষয়ও সংজ্ঞায়িত করেছেন এখানে “ ‘ধূমপান’ অর্থ কোন তামাকজাত দ্রব্যের ধোঁয়া শ্বাসের সহিত টানিয়া নেওয়া বা বাহির করা, এবং কোন প্রজ্বলিত তামাকজাত দ্রব্য ধারণ
করা বা নিয়ন্ত্রণ করাও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে।”

এইসব কর্ম কেউ পাবলিক প্লেসে করলে তার ‘শাস্তির
বিধান রাখা হয়েছে অনধিক তিনশত টাকাএবং উক্ত অপরাধ কেউ দ্বিতীয়বার সংঘটন করিলে তিনি পর্যায়- ক্রমিকভাবে উক্ত শাস্তির দ্বিগুণ দিতে ব্যাধ্য’।

এবার দেখাযাক আমাদের পাবলিক প্লেসের ধূমপানের অবস্থা। ২০২০ সনের ১৫ ই মার্চে রংপুর প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে “অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট(এসিডি) নামক এক সংস্থা। রংপুর শহরের পাবলিক প্লেসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রতিপালনে বর্তমান অবস্থা যাচাই” শীর্ষক অনুষ্ঠানে তাদের জড়িপের ফলাফল তুলে ধরেন। তারা চারটি স্থানে জড়িপ চালিয়েছেন। সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ সেবা কেন্দ্র, হোটেল ও রেষ্টুরেন্ট। সব কয়টিরই ভয়ংকর চিত্র ফুটে উঠেছে। ‘৯৬ ভাগ সরকারি অফিস ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে, ৯৯ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৯১ ভাগ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, ৯৬ ভাগ হোটেল ও রেষ্টুরেন্টে দেদারসে লঙ্ঘিত হচ্ছে এই আইন’।(সূত্র: বার্তা২৪.কম, রংপুর) এর ধারবাহিতা যদি দেশব্যাপী হয় তাহলে শঙ্কিত না হয়ে আর উপায় নেই।

অন্য খবর  পানি বৃদ্ধিতে একাধিক স্থানে ফাটল: হুমকীর মুখে দোহারের নির্মাণাধীন বাহ্রা-মেঘুলা বাঁধ

কতটা ভয়াবহ চিত্র ভাবা যায়। অনন্য স্থানের কথা না হয় বাদই দেওয়া হইলো। সরকারি অফিস আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্র যদি এতোটা প্রলয়ঙ্কারী হয় তাহলে “ধূমপান বিরোধী নিয়ন্ত্রণ আইন” করে লাভ কি?

আরো আতঙ্কের তথ্য তুলে ধরেছেন “ক্যাম্পেইন ফর ক্লিন এয়ার” নামক একটি সংগঠন। ২০১৯ সালে
বিভিন্ন কিশোর ও তরুণদের উপর জড়িপ করে তাদের উন্নতিতে রীতিমত ভিমরি খাওয়ার উপক্রম। ‘২০১৮ সালের ৫৭ শতাংশ থেকে ১১ শতাংশ বেড়ে ৬৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে কিশোর ধূমপায়ীদের অবস্থান’। ভাবা যায় আমাদের শিশু কিশোরদের অবস্থা। তারা কতটা বিপদগামি। শুধু ‘আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী প্রতিবছর বাংলাদেশে তামাক সেবনজনিত কারণে মৃত্যু ঘটে ৫৭ হাজার মানুষের’।

অথচ তামাক বিরোধী নিয়ন্ত্রণ আইনে স্পষ্টত উল্লেখ করা হয়েছে ‘১৮ বছরের নিচে কারো কাছে তামাক বিক্রি করা নিষিদ্ধ’। এবং কোন কিশোরকে বিক্রি বা বিতরণ কাজেও নিয়োজিত করতে পারবে না। যদি কেউ এই আইনের লঙ্ঘন করে তার শাস্তি ৫ হাজার টাকার অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবে আমাদের প্রতিটা স্থানের চিত্র ভয়ানক ভয়াবহ। এই ভয়াবহতা থেকে রেহাই পেতে হলে আইনের সঠিক প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধূমপান বিরোধী সচেতনতামূলক লিফলেট খুঁজে পাওয়া অনেকটাই ধুষ্কর ব্যাপার। সরকারি অফিস- গুলো তো সবকিছুর আওতার বাহিরে। তারাই সব নিতিনির্ধারক, আইন ব্যাবহারের উর্ধ্বে। এক্ষেত্রে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গুলো সফলতার পরিচয় দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট স্থান ব্যাতীত কেউ ধূমপান করার দুঃসাহস দেখানোর স্পর্ধা কারো নাই। কিছুদিন আগেও সরকারি অফিসের চেয়ারে বসে সিগারেট ফুকার দৃশ্য কারো চোখ এড়ায়নি। কিছু কিছু দৃশ্য থাকে চোখ ধাঁধানো। কিন্তু সেই দৃশ্যেও উৎকৃষ্টতার অভাব থাকে না। তেমনই একটা দৃশ্য অফিসে বসে সিগারেট সেবন করা। তবে এসব দৃশ্য কিন্তু নৈতিকতার স্খলনের পর্যায়েই পরে। সবশেষে এতটুকু বলা যায় আইন তৈরিতে বাধ্যবাধকতা না রেখে আইন প্রয়োগের বাধ্যবাধকতায় নজর দেয়া অতীব জরুরী।

অন্য খবর  জেলা পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা

-আবুল বাশার-

আপনার মতামত দিন