ভেঙ্গে যাচ্ছে দোহার-নবাবগঞ্জ রক্ষা বেড়িবাঁধ

445

”খালি মন্ত্রী-এমপিরা আমাগো লিগা ব্যবস্থা নিবার কতা কয়। ভোট গেলে তাগো আর খবর থাহে না। তাই আমরা আর কাউরে ভোট দিমু না। হাসিনা মা কয়ছিল আমাগো রক্ষায় গাঙ্গে বান দিব। কই কিছুই তো করলো না” অনেকটা আক্ষেপের সাথে কথা গুলো বলেন ধোয়াইর গ্রামের হাসিনা আক্তার (৩৫)।

সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু পদ্মা পাড়ের মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। গত বছর পদ্মার ভয়াবহ ভাঙ্গেনের শিকার প্রায় ১৫০০ পরিবারের এখনও আশ্রয় এর ব্যবস্থা গ্রহন করেনি সরকার। কিন্তু গতবছর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শনের সময় স্থানীয় প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান সকল পরিবারকে আশ্রয় দেয়ার কথা বলেছিলেন। এই বছর বিভিন্ন দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার কারনে পদ্মার সেই ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে গত কয়েক দিনের ভাঙ্গনে  প্রায় ৩০টি পরিবার তাদের ভিটে মাটি হারিয়ে পথে বসে গেছেন। এছারা দোহার-নবাবগঞ্জ রক্ষায় দোহার-মানিকগঞ্জ (কাশিয়াখালী বাধ) বেড়ীবাধের ধোয়াইর বাজার সংলগ্ন দেওয়ান বাড়ীর মোড় এর বেশির ভাগ অংশ ভেঙ্গে গেছে। এর ফলে বেড়িবাধের উপর দিয়ে বর্তমানে গাড়ী চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সাধারন জনগন চরম ভোগান্তীর মধ্যে আছে। কিন্তু ভাঙ্গনের পর সরকার বাধঁ রক্ষায় কোন ধরনের সংস্কার কাজ না করায় দোহার-নবাবগঞ্জের লক্ষাধিক মানুষ চরম ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এই বাধেঁ বেশ কয়েকটি স্থানে ভেঙে যাওয়ার ঝুকির মধ্যে আছে। গতবছর ভাঙ্গনের সময় স্থানীয় প্রতিমন্ত্রী, পানি মন্ত্রী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং সরকারী লোকজন শুষ্ক মৌসুমে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে যান। কিন্তু কার্যত দেখা যায় বছর গেলেও  হয়নি কোন সংস্কার। ফলে যে কোন মুহূর্তে উত্তল পদ্মার পানির চাপে এই বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ন এলাকা প¬াবিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। নয়াবাড়ী ইউনিয়নের ৬০% পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে।

অন্য খবর  দোহার-নবাবগঞ্জে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করণ: শুরু ২৫শে জুলাই

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অত্র এলাকার সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পদ্মার ভাঙ্গন চলছে মাত্র ১০০ গজ দূরে। যে কোন সময় ভেঙ্গ যেতে পারে গুরুত্বপূর্ন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া স্কুল, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও মসজিদ সহ এসব এলাকার প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গনের মারাত্বক ঝকির মধ্যে রয়েছে। ছোট বড় ৫টি বাজারও সে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে।

বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক লূৎফর রহমান বলেন, মন্ত্রীমহাদয় বার বার ওয়াদা দেয়ার পরও কেন বাধ রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহন করা হলো না তা বুঝতে পারলাম না। আমার এই স্কুলে ২কোটি টাকার ভবন আছে। এগুলো রক্ষা করার জন্যে খুব দ্রুত ব্লক ও বালুর বস্তা ফেলা খুবই জরুরী। মন্ত্রী কি আমাদের এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা একটুও ভাবে না?
পদ্মার ভাঙ্গনের ফলে হাতনি গ্রামের মাত্র একটি বাড়ি অবশিষ্ঠ আছে। সেই বাড়িরও কিছু অংশ এরই মধ্যে ভেঙ্গে গেছে। বাড়িটি বাশ ও ছন দিয়ে রক্ষায় ব্যস্ত বাড়ীর মালিক জালাল দেওয়ান (৪৫) কান্না জরিত কন্ঠে বলেন, এই বাড়িটা ভাইঙ্গা গেলে আমরা কোথায় যামু? আমাগো গ্রামের সব বাড়ি ভাইঙ্গা গেছে। এহন আমারটাও ভাঙ্গতাছে। তাই চেষ্টা করতাছি বাড়িডা রক্ষা করা যায় কিনা।
নয়াডাঙ্গীর মিজানুর রহমান বলেন, আমরা মন্ত্রীর কাছে ভাত চাই না। আমরা আমাদের মাটি রক্ষায় বাধ চাই। আমাদের দুঃখ একটাই মন্ত্রী আমাদেরকে একটু সান্তনা দেয়ার জন্যও এলো না।
সেখান থেকে আমারা চলে যাই বর্তমানে দোহারের শেষ পানকুন্ডু গ্রামে। সেই গ্রামের সোবহান মল্লিক বলেন, সরকার আমাগো জন্যে অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও আমারা ২টাকার একটা বিস্কুটও পাই নাই। সরকার শুধু আশ্বাস দিয়ে যায়। বর্তমানে আমার মাইনসের বারিতে আশ্রয় নিছি। এইডাও কোনসুম যেন ভাইঙ্গা যায়। আমারা আতঙ্গের মধ্যে আছি।
পাদ্মার ভাঙ্গনের শিকার কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি বাবু নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, গত বছরের ভাঙ্গনে নয়াবাড়ী ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ড ভেঙ্গে গেছে। মসজিদ, মাদ্রাসা ও একটি বড় বাজার সহ দের হাজার পরিবার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। তাদের জন্যে আমরা লঙ্গর খানা খুলেছিলাম। জননেত্রী শেখ হাসিনা ওয়াদা করেছিল ভাঙ্গন রক্ষায় বাধ দেয়া হবে। আমরা সেই ওয়াদা পূরন করতে সচেষ্ট আছি।

আপনার মতামত দিন