কেমন আছে দোহার-নবাবগঞ্জের বেসরকারি বিদ্যালয়-মাদ্রাসার শিক্ষকেরা

298
দোহার-নবাবগঞ্জের শিক্ষকেরা

করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত সারা বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক ভাবে খুবই কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশের জনগন। প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও থেমে নেই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। এরই মাঝে ৩১ তারিখ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদে সবই খুলছে। সরকারি ও এমপিও ভুক্ত শিক্ষকরা নিয়মিত সরকারি বেতন পেলেও কেমন যাচ্ছে নন-এমপিও, কিন্ডারগার্ডেন ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের দিন সেটা খোঁজ নেয়ার কেউইউ নেই। টানা ৩ মাস ধরে বেতনবিহীনভাবে জীবন কাটানো এই শিক্ষকেরা কেমন আছেন? তাদের কি খোঁজ খবর নিচ্ছেন কি কেউ? এরা কি সরকারি সহযোগিতার আওতায় এসেছে? এরা কি ত্রানের জন্য লাইন ধরে দাড়িয়েছিল? সব মিলিয়ে কেমন আছে দোহার-নবাবগঞ্জের বেসরকারি বিদ্যালয়-মাদ্রাসার শিক্ষকেরা? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজার চেষ্টা করেছে নিউজ৩৯.নেট।

জয়পাড়ার সুপরিচিত এক মাদ্রাসা শিক্ষক, করোনাভাইরাস মহামারীর আগে আর দশজন শিক্ষকের মতই দিন কেটে যাচ্ছিল তার। বাসায় ২ মেয়ে, স্ত্রী, বোন, বাবা-মা এদের নিয়েই সংসার। বাবা ১ বছর আগে সৌদি আরব থেকে দেশে এসে স্থির হয়েছেন। ৭ সদস্যের এই পরিবারে একমাত্র উপার্যনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। কোন জমা না হলেও মাদ্রাসার বেতন দিয়ে সুন্দরভাবেই চলে যাচ্ছিল সেই শিক্ষকের জীবন।

নিউজ৩৯ এর সাংবাদিকের সাথে তার কথা হয় ঈদের পর। নিজেদের বর্তমান অবস্থার যে মর্মস্পর্ষী বর্ননা দিয়েছেন তা এক জন শিক্ষকের জন্য খুবই দুঃখজনক। তিনি তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি মাদ্রাসা থেকে শেষ বেতন পেয়েছেন ফেব্রুয়ারী মাসে। এরই মাঝে মার্চের বেতন পাওয়ার আগেই সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে মার্চ, এপ্রিল, মে মাস টানা তিন মাস তিনি বেতনবিহীন অবস্থায় আছেন। মার্চের বেতন শেষ হয়ে যাওয়ায় এক প্রকার মানবেতর জীবন যাপন করছে এই শিক্ষকের পরিবার। বিভিন্ন দোকানে বাকি পড়ে গেছে অনেক। বাকি পরিশোধ করতে না পারায় এরই মাঝে বাকি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে দোকানদার। কারও কাছে ঋণ করবে সেরকম ঋণও কেউ দিচ্ছেন না। তারপরো ঋণে টাকা এনে কয়েকদিন চলার পর ঋণের চাপে পড়ে গেছেন এরই মাঝে। সরকারি সহায়তার জন্য লাইনে দাড়াবেন বা কারো কাছে বলবেন চক্ষু লজ্জার কারনে সেটাও বলতে পারছেন না এই শিক্ষক। এরপর রোজার ঈদ চলে আসলে ভাল কিছু রান্না বান্না ছাড়াই কাটিয়ে দিয়েছেন ‌ঈদ। এক দিকে বেতন নেই, আরেক দিকে ৭ সদস্যের পরিবার, ঋণের চাপ সব মিলিয়ে দিশেহারা জীবন কাটাচ্ছেন এই শিক্ষক।

অন্য খবর  দোহারে শামীমা রাহিম শিলার বই বিতরণ

একই গল্প দোহারের আর এক মাদ্রাসা শিক্ষকের। নবাবগঞ্জের এই মাদ্রাসার শিক্ষক, গত ৩ মাস ধরে বাড়িতে প্রায় অনাহারেই দিন কাটছে তার। মাদ্রাসায় ছাত্র নেই, দান নেই, ফলে বেতনও পাচ্ছেন না ঠিক মত। ৪ সদস্যের পরিবার নিয়ে শেষ কবে মাছ খেয়েছেন ভুলে গেছেন তিনি। অর্ধাহারে রোজার মাস ও ঈদ পার করলেও এখন কি করবেন সেটা ভেবে পাচ্ছেন না এই মাদ্রাসা শিক্ষক। ঈদের ভেতর দুই বাচ্চাকে একটু সেমাই মুখে তুলে দিতে পারেন নি তিনি।

একেবারে খারাপ অবস্থায় না হলেও ভাল নেই দোহারের একটি কিন্ডারগার্ডেনের শিক্ষক। নিজের শিক্ষার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন সাথে পরিবারের খরচে কিছুটা অংশীদার হওয়া এই নিয়েই জীবন চলছিল শিলাকোঠার এক কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষকের। করোনার কারনে আজ তার আয়ের পথ বন্ধ। বাসার কারও কোন কাজ নেই। এই মহামারীর সময়ে নিজে কিছু যোগ করতে পারছেন না, সেই সাথে নিজেও চলতে পারছেন না। এই সময়কে এই শিক্ষক শতকের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

শিক্ষকদের এই দুরবস্থা নিয়ে নিউজ৩৯.নেট কথা বলে দোহার উপজেলার অন্যতম স্বনামধন্য ও বিখ্যাত মাদ্রাসা মালিকান্দা মেঘুলা ফজলে খোদা মাদ্রাসার মুহতামিম আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন আমরা যতটুকু পারি দিচ্ছি, তবে এভাবে কতদিন চালানো যাবে তা তিনি জানেন না বলেন। তবে সব মাদ্রাসার চিত্র এইক রকম না। অনেক মাদ্রাসায় ঈদের বেতন পর্যন্ত দিতে পারে নি মাদ্রাসা কতৃপক্ষ।

অন্য খবর  করোনাকে পাশে রেখেই চলতে হবে!!

দোহার কিন্ডারগার্টেন এ্যাসোসিয়েশন এর সহ-সভাপতি ও পদ্মা সরকারি কলেজের একাউন্টিং বিভাগের শিক্ষক এমারত হোসেন ইমরান জানান, এই করোনাভাইরাস সংকটকালে আমাদের কিন্ডারগার্টেন এর সকল শিক্ষকরা খুবই দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। অধিকাংশ শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে না স্কুল মালিকরা। সরকার ও ফজলুর রহমান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের আমরা কিছুটা সহায়তা করার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

কবে থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে তা এখনো পরিস্কার নয়, শিক্ষকদের এই দুরবস্থা তাই কবে দূর হবে তা কেও ভাবতে পারছেন না।

আপনার মতামত দিন