দোহার-নবাবগঞ্জের নিচু এলাকায় বর্ষার মৌসুমে ঘর থেকে বের হলেই প্রয়োজন হয় নৌকার। আবহমানকাল থেকে বর্ষার মৌসুমে কোষা নৌকা ব্যবহার করে আসছে। নাগরিক জীবনে এ কারণে কদর বেড়ে যায় কাঠের তৈরি এ যানটির। জণমগ্ন হয়ে পড়ছে দোহার-নবাবগঞ্জের নিচু এলাকার খাল-বিল ও নদী-নালা। বর্ষার পানিতে যখন খাল-বিল ও বাড়ির চারপাশ থৈ থৈ করে তখন মানুষজন কোষা নৌকার মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে।
বর্ষাকালে নিচু এলাকায় বসবাসকারী লাখো মানুষের চলাচলে এ সময়ে নৌকা গুরুত্ব অপরিসীম। বর্ষার পানিতে প্লাবিত এসব এলাকায় যাত্রায়াত ও কৃষিপণ্য বহনে কোষা নৌকাই একমাত্র ভরসা। তাই ঐ সব এলাকায় নৌকার কদরও এখন বেড়ে গেছে। ফলে দোহার-নবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে কোষা নৌকার হাট। বর্ষার কারণে নৌকা তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কারিগররা। রাত-দিন পরিশ্রম করে তারা তৈরী করছেন ছোট-বড় নৌকা। কোষা নৌকা নির্মাণ, বিপণন ও ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে দুই উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার।
পদ্মা পানিতে প্লাবিত হওয়া নিচু ভূমি বর্ষার মৌসুমে একমাত্র চলাচলের বাহন হিসাবে স্থান পায় কোষা নৌকা। তাই এ মৌসুমে দোহার-নবাবগঞ্জের নৌকা কারিগরদের নৌকা তৈরী ও ক্রয়-বিক্রয়ের কার্যক্রমকে ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে জীবন-জীবিকা। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নবাবগঞ্জ উপজেলার ব্রাক্ষ্রাখালী গ্রামের কাঠ মিন্ত্রিরা দিনের সবটুকু সময়ই ব্যায় করছেন নৌকা তৈরির কাজে। ঘামঝরা পরিশ্রম করে দিনে ২/৩ টি নৌকা তৈরি করছেন তারা। দুই উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও রাস্তার পাশে এখন নৌকা বিক্রি করতে দেখো যাচ্ছে এছারা দোহার-নবাবগঞ্জের বিশেষ বিশেষ কয়েকটি হাটবাজারে এ নৌকা বিক্রির ধুম পড়ে যায় বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে। বর্তমানে রাস্তাঘাট বৃদ্ধি ও পানি কম হওয়ায় এর নির্মাণ ও ব্যবহার কমে আসছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে এ নৌকার ব্যবহার কমলেও এ পেশার সঙ্গে সংশিষ্টদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করার দাবি জানিয়েছে নির্মাণকারীরা। নির্মাতারা জানান, বর্তমানে কোষা তৈরির গাছগুলো বিলুপ্ত হওয়ায় রেইনট্রি, কড়ই, চাম্বুল ইত্যাদি গাছের কাঠ দিয়ে বেশিভাগ কোষা তৈরি করা হয়। ব্রাক্ষনখালী গ্রামের কাঠমিস্ত্রিরা জানান, তারা জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকে কোষা তৈরির কাজ করেন। জারলি, গোয়ারা, পউয়া বা উড়িয়া আম কাঠের একেকটি কোষা তৈরি করতে ১ দিন সময় লাগে। প্রকার ভেদে বিক্রি করা হয় ২-৮ হাজার টাকা। প্রতি শুক্রবার বারুয়াখালীর হাটে এ কোষা নৌকা গুলো বিক্রি করা হয়। ব্রাক্ষনখালী গ্রামের গ্রামের ২ জন জানান, ভালো কাঠ না থাকায় তারা কড়ই ও চাম্বুল কাঠ দিয়ে কোষা তৈরি করছেন। একটি কোষা তৈরি করতে ৫০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়।
বারুয়াখালীর হাট বাজার কমিটির সভাপতি শাহিন ভূইয়া জানান, প্রতি শুক্রবার বারুয়াখালীর হাটে ১০০ থেকে ১৫০ কোষা নৌকা বিক্রি হয়। নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, কোষা নৌকা নির্মাণ ও ব্যবহারের সুদীর্ঘকালের ঐতিহ্য রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এ বাহনকে ধরে রাখতে এবং নির্মাণ শ্রমিকদের টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই কোষা নৌকাসহ নির্মাণ শ্রমিকদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।