ধানক্ষেত : তুমি আর আমি
কাঁচা মরিচের সবুজের মতো,
কুমারী ধানের মতো আছো নুয়ে,
আমার হৃদয়ে একান্ত নিবিড় হয়ে, একান্ত নিবিড়;
যেমনি নেতিয়ে থাকে মাচানে
পুঁইয়ের ডগা নিতান্ত স্থবির,
আশ্বিনের সোনাঝরা রৌদ্রটুকু চুয়ে চুয়ে।
তোমাকে দেখেছি আমি কার্তিকের প্রথম ফসলে
শালিকের ভিড়ে, ভাঙা উঠোনের পাশে,
যেখানে চড়ুই বসে বেগুনের ডালে।
কার্তিকের দারুণ রোদ্দুরে যখন কাস্তে হাতে মাঠে নামি,
তোমাকে দেখেছি সেইবেলা,
দেখেছি মাঠের পরে ধানশিষে ফড়িঙের প্রেম-প্রেম খেলা।
নতুন উদ্যমে মনে হয় পৃথিবীটা ধানক্ষেত :
সেখানে শালিকের মতো শুধু তুমি আর আমি।
অস্পষ্ট জননী
আমি যতোদিন তোমাকে ভেবেছি এই দূরপ্রবাসে মা আমার,
যতোদূর মনে পড়ে, স্পষ্টতর নও তুমি; আধো আলো-আঁধারে
আলুথালু চুল, চোখের নীচে ঝুলে পড়া মাংস, অস্থিচর্মসার
তোমাকে হারাই যেন বার বার একদল ভিখারির ভিড়ে।
আমার পড়ার টেবিলের সামনে- প্রচ্ছন্ন দেয়ালের আস্তরণে
তোমাকে প্রতিষ্ঠা করি মাগরেবের সায়াহ্ন-কিরণে- জায়নামাজে,
অনেক মিনতিভরা চোখে তোমাতে তাকাই; তুমি তবু অকারণে
দূর থেকে ফিরে যাও ভিখারিণী বেশে একদল ভিখারির মাঝে।
আমার অস্তিত্ব সর্বদা ঘোষণা করে- আমি এক দূরন্ত পুরুষ;
বাবার বিশাল বক্ষ, তেজোদ্দীপ্ত আঁখি, আমি তাঁরই উত্তরসূরি :
তোমার লাঞ্ছনা দেখে ফেটে পড়ে বিদ্রোহের দারুণ আক্রোশ।