আব্দুর রহমান আকন্দ: সুস্থ্য রাজনীতির আলোক বর্তিকা

1157
আব্দুর রহমান আকন্দ

আব্দুর রহমান আকন্দ, দোহার উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। জয়পাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সর্বশেষ নির্বাচিত জিএস। জয়পাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে উঠে আসা এই তরুন ছাত্রনেতা রাজনীতির কড়াল ও নোংরা গ্রাস থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছেন সব সময়। নোংরা রাজনীতির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে সব সময় থেকেছেন সত্য ও ন্যায়ের পথে। কর্মীদেরও চেষ্টা করেছেন নোংরা রাজনীতি যতটা সম্ভব দূরে রাখতে। আপাদমস্তক ভদ্র ও সজ্জন এই ব্যক্তি এখনো আছেন রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ভাবে। রাজনীতিতে তার অবস্থান অনেকটাই স্বাধীনতাত্তর নেতাদের মতো; যেখানে দেশপ্রেম, জনসেবা আর ত্যাগটাই মুখ্য।

১৯৯৬ সাল, দোহারে রাজনীতির তখনকার কেন্দ্র জয়পাড়া ডিগ্রী কলেজ। জয়পাড়া ডিগ্রী কলেজে তখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সর্বশেষ বারের মতো ছাত্র সংসদ নির্বাচন। বিএনপির অংগসংগঠন ছাত্রদলের হেভিওয়েট একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী। পুরো দোহার তখন ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত। পুরো দোহারে সাজ সাজ রব- টান টান উত্তেজনা। ছাত্রদল প্রার্থীদের জয়লাভ যখন সময়ের ব্যাপার বলে মনে হচ্ছিল ঠিক তখনই সব কিছু পাল্টে দিয়ে সাধারন ছাত্রদের ভোটে ভিপি,জিএস ও এজিএস পদে জয়লাভ করে ছাত্রলীগ। ২১ প্যানেলের কমিটিতে তখন ভিপি নির্বাচিত হন ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান দোহার উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আলমাস উদ্দিন(ভিপি আলমাস) ও জিএস নির্বাচিত হন ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান দোহার উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহমান আকন্দ। বাকি ১৮টি পদে ছাত্রদলের নেতা-কর্মিরা।

দোহার উপজেলায় তখন থেকেই রাজনীতিতে একটি পরিচিত মুখ হিসাবে পরিচিত হন আব্দুর রহমান আকন্দ। প্রিয় রহমান ভাই তখন থেকেই দোহারের রাজনীতিতে একটি জনপ্রিয় মুখ। অত্যন্ত সফল ভাবে জয়পাড়া কলেজে জিএসের দায়িত্ব পালন শেষে করে হটাৎ করেই ফ্রান্সে চলে যান এই ছাত্রলীগ নেতা। প্যারিসে ছিলেন বেশ কয়েক বছর। ২০০০ সালে প্যারিসে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাভ করেন ইউনেক্সো শান্তি পুরস্কার। ফ্রান্সের বাংলাদেশ দুতাবাসের আমন্ত্রনে উপস্থিত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানেও। খুব কাছে থেকে দেখেছেন শেখ হাসিনার পাওয়া ইউনেক্সো শান্তি পুরস্কার গ্রহন করতে। সেখানে  মূলত শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে সিদ্ধান্ত নেন আবার দেশে ফিরে আসার।

অন্য খবর  ধোঁকা দিয়ে স্ত্রীকে সৌদি নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ 

অতঃপর ক্ষমতার পট পরিবর্তনে ২০০৭ সালে ক্ষমতায় আসে সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। দেশে যখন রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরম সংকট।  তখনই আবার উদয় আব্দুর রহমান আকন্দের। সারা দেশের মতো দোহার উপজেলায় যখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সংকট, নেতা-কর্মিরা আত্মগোপনে; তখন আবার দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের অংগ সংগঠন যুবলীগের দায়িত্বভার তুলে নেন আব্দুর রহমান আকন্দ ও ভিপি আলমাস। দুঃসময়ে পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের। এই দুই নেতা দীর্ঘদিন ছিলেন নিজের ঘর-বাড়ী ছাড়া। সংগঠিত করতে থাকেন দোহার উপজেলা যুবলীগকে। দোহার উপজেলায় যুবলীগ প্রথমবারের মতো শক্তিশালী সংগঠন হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায় এই দুই বন্ধুর হাতে।

এরপরেই চলে আসে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০০৯ । স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন; প্রায় ৩৪ বছর দোহার তথা ঢাকা-১ আসনে পাস করতে না পারা আওয়ামী লীগ এই আসন থেকে মনোনয়ন দেয় তৎকালীন কারাগারে আটক শেখ হাসিনার আইনজীবি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক  এডভোকেট আব্দুল মান্নান খানকে। আব্দুল মান্নান খানের নির্বাচনী প্রচারণায় আব্দুর রহমান আকন্দ পালন করেন অগ্রণী ভূমিকা।

নির্বাচনের পর  ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, দোহার উপজেলা যুবলীগের কাউন্সিলে সাধারন সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন আব্দুর রহমান আকন্দ। সেই সাথে ঢাকা-১ এর নির্বাচিত সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খানের একান্ত ব্যক্তিগত সচিব হিসাবে ৫ বছর সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন আব্দুর রহমান আকন্দ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নজন এপিএস এর দায়িত্ব পালন করলেও তারা হয়েছেন দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন আব্দুর রহমান। আপদমস্তক ভদ্র, সজ্জন বলে পরিচিত এই লোকের কাছে প্রয়োজনে সাহায্য চেয়ে সাহায্য পাননি এমন লোক খুব কম ছিল দোহারে। নিজের সাধ্যের সবটুকু করেছেন তিনি।

অন্য খবর  নিখোঁজ হাফসার সন্ধান চায় তার পরিবার

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দোহার-নবাবগঞ্জে আওয়ামীলীগের প্রার্থী নিয়ে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে দোহার-নবাবগঞ্জ আওয়ামীলীগ।  বিভিন্ন বিতর্কে মান্নান্ খান হয়ে যান একলা । তার সাথে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে পাওয়া যাচ্ছিল না দোহার-নবাবগঞ্জের অনেক পরিচিত মুখকে। আবার এডভোকেট সালমা ইসলামের সাথে অনেকে আঁতাতও করেছে নিজ দলের প্রার্থীকে ফেল করাতে। তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হুমকি-ধামকির মোকাবেলা করে দলের প্রতি আনুগত্য থেকে যে কয়জন নির্বাচনী মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের মাঝে সামনে ছিলেন ভিপি আলমাস ও এজিএস আব্দুর রহমান আকন্দ। আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন নেতা কর্মীরা যখন জাতীয় পার্টির সাথে মিশে আওয়ামী লীগকে ফেল করাতে ব্যস্ত তখনও দোহার উপজেলা যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ দাঁড়িয়েছিল আওয়ামী লীগের ব্যানার হাতে নিয়ে।

নির্বাচন পরবর্তী দোহারের রাজনৈতিক সহিংসতায় আওয়ামী লীগই হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগের শত্রু। দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলা তখন মান্নান-মাহবুব গ্রুপে ভাগ। নির্বাচনী সহিংসতার দায়ে মান্নান খান পন্থী বলে পরিচিত হুকুম আলী চোকদার, বাশার চোকদার, যুবলীগ সভাপতি ভিপি আলমাসকে জেল খাটতে হয়।  এসময় রাজনৈতিকভাবে দোহার উপজেলায় আওয়ামীলীগ-যুবলীগকে আবারো সুসংগঠিত করার পিছনে আব্দুর রহমান আকন্দের ছিল অন্যতম বড় ভূমিকা। নির্বাচন পরবর্তী এই উত্তপ্ত ডামাডালে জীবনের ঝুকি নিয়ে কিনেছিলেন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ফর্ম। যদিও দলীয় সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত করেননি উপজেলা নির্বাচন। কিন্তু তার এই নমিনেশন ক্রয় ছিল দোহার উপজেলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান খানের জন্য নবজন্মের প্লাটফর্ম।

আব্দুর রহমান আকন্দ এখনও আছেন দলের সাথে। সব সময় দোহার উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক হিসাবে উপস্থিত থাকেন উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যুবলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। সব সময় সাধারন কর্মীদের প্রিয় রহমান ভাই থাকতে চান তার কর্মীদের সাথেই, থাকতে চান সবার প্রিয় রহমান ভাই হয়েই। থাকতে চান নিজ এলাকার মানুষের সাথেই, তাদের সুখে দুঃখে তাদের ভালবাসা নিয়েই।

আপনার মতামত দিন