রাজধানী ঢাকার আটটি এলাকাকে আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ পরিকল্পনার আওতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) এই এলাকাগুলোতে বাড়বে সেবার মান, উন্নত হবে এখানকার মানুষদের আর্থসামাজিক অবস্থা, রাস্তাঘাটসহ সার্বিক পরিবেশও হবে উন্নত। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য হাতে নেওয়া হচ্ছে ‘ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং’ নামের একটি প্রকল্প।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার (৫ মার্চ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে এই মেগা প্রকল্প। এর আওতায় থাকা ঢাকা দক্ষিণের এলাকাগুলো হলো— কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, নয়াবাজার, সূত্রাপুর, গুলিস্তান, খিলগাঁও, মুগদা ও বাসাবো।
প্রকল্পের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এসব এলাকায় উন্মুক্ত স্থান বাড়বে, পরিবেশের উন্নয়ন হবে, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট উন্নত হবে, পার্ক-খেলার মাঠ-কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন অবকাঠামোরও উন্নয়ন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, রোববার (৩ মার্চ) পরিকল্পনা বিভাগ থেকে একনেক সভার নোটিশ জারি করা হয়েছে। এতে উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে ৯টি প্রকল্প। এর মধ্যে ৭ নম্বর তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ ঢাকার আট এলাকা উন্নয়নের এই প্রকল্পটি।
জানা গেছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা রয়েছে ৮৩৪ কোটি টাকা। তবে প্রকৃত ব্যয় নির্ধারণ করা হবে প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে। গত বছরের ১৯ নভেম্বর অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা।
প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র। এ কারণে নগর জীবনের প্রত্যাহিক প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরি করা প্রয়োজন। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় গত ৪০ বছরে এ শহরের জনসংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্বের ১১তম বড় শহর। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ শহরে পরিণত হবে। জনসংখ্যা হবে প্রায় ২৭ মিলিয়ন। এই শহরে প্রতি হেক্টরে বর্তমানে বসবাস করছে ৪৪০ জন মানুষ।
এ পরিস্থিতিতে ঢাকাকে বসবাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রস্তাব করা হয়েছে প্রকল্পটি। এটি তৈরি করার ক্ষেত্রে ছোট আকারের এলাকা নির্বাচনের পরিবর্তে পাশাপাশি অবস্থিত বড় আকারের এলাকা উন্নয়নের ধারণার ভিত্তিতে ‘নেইবারহুড’-এর বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন এরকম প্রতিবেশী এলাকা চিহ্নিত করে প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছে।
পিইসি সভা সূত্র জানায়, পিইসি সভায় অভিমত দেওয়া হয়, এ প্রকল্পে বেশকিছু পরামর্শকের সংস্থান রাখা হয়েছে, যা প্রয়োজন নেই। উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন কনসালট্যান্ট ফর কামরাঙ্গীরচর’ নামে একটি পরামর্শক খাতে ১৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আর্কিটেকচার, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন ও সুপারিভিশন খাতে ৪৪ কোটি টাকার প্রস্তাব রয়েছে। এরকম মেগা প্রকল্পে এরই একটি অংশের কাজের জন্য আলাদা পারামর্শক খাতে এত বরাদ্দ যৌক্তিক নয় বলে মত দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ‘অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন ফর নেইবারহুড’ শীর্ষক পরামর্শক সেবা খাতে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা রাখা হয়েছে প্রকল্পের প্রস্তাবনায়। কিন্তু এটি সিটি করপোরেশেনের নিয়মিত কাজের অংশ হওয়ায় এ ব্যয় বাদ দিতে বলা হয়েছে পিইসি সভায়। পাশাপাশি ‘ফিজিবিলিটি অ্যান্ড কনসেপচ্যুয়াল ডিজাইন ফর গুলিস্তান মাল্টিপারপাস কমিউনিটি সেন্টারে’র জন্য পরামর্শক খাতে বরাদ্দ ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকারও প্রয়োজন নেই বলে মত দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রকল্প প্রস্তাবে নতুন ১৮টি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য ৩৩৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকার প্রস্তাব রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি কমিউনিটি সেন্টারের জন্য ১৮ কোটি ৬৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রাক্কলন রয়েছে। এ ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে কিভাবে এই ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে, তা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।