ইংরেজি আদ্যক্ষর এ ফর অটোমেটিক, এ ফর এক্সিডেন্ট, এ ফর অটোরিকশা! সবই যেন মিলে যায় দোহারে ক্রমবর্ধমান অটোরিকশার ক্ষেত্রে। অটোরিকশাগুলো এখন দোহারবাসীর গলার কাঁটা। রাস্তায় চলতে-ফিরতে চোখে পড়ে অটোরিকশার নানা নৈরাজ্য। এ যেন নিয়ন্ত্রণহীন এক যান। দেখারো কেউ নেই। মাঝে মাঝে প্রশাসনের সাথে অটোরিকশা চালকদের চলে ইঁদুর-বিড়াল খেলা। প্রশাসন বা পুলিশ রাস্তা থেকে সরে যেতেই আবার ঠিক আগের নৈরাজ্য। নেই লাইসেন্স, নাই নিয়ন্ত্রণ এমনকি লাগে না কোন প্রশিক্ষণও। এ যেন ইচ্ছ্বে যাদু। ইচ্ছ্বে হলেই অটোরিকশা নিয়ে নেমে পড়া যায় রাস্তায়। আর রাস্তায় নেমেই হয়ে ওঠে রাস্তার রাজা। তাই বুঝি, তার চলাচল রাস্তার মধ্য রেখা বরাবর। মাঝে মাঝেই আবার রাস্তাতেই গড়বড়।
আবার প্রয়োজনের তুলনায় অধিক অটোরিকশা রাস্তায় হওয়া স্বত্ত্বেও, তাতে নেই ট্রাফিক কন্ট্রোলিং ব্যবস্থা, নেই সাইড লাইট, নেই বা থাকলেও কাজে লাগে না ব্রেক! আছেন অদক্ষ ড্রাইভার, সাথে অতিরিক্ত গতি! ফলাফল অটোমেটিক এক্সিডেন্ট। এটি এখন দোহারের রাস্তাগুলোর বাস্তব চিত্র।
দোহারের রাস্তাগুলো এখন যেকোন সময়ের তুলনায় প্রশস্থ এবং মসৃণ। প্রতিনিয়ত বড় করা হচ্ছে রাস্তাগুলো, কিন্তু সুফল পাচ্ছেনা জনগণ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাহ্রাঘাট থেকে ফুলতলা পর্যন্ত সড়কটি বেশ মসৃণ এবং প্রসস্থ। রাস্তায় নেই কোন প্রতিবন্ধকতা। তবুও যেন দোহারের গুলিস্তান জয়পাড়া বাজার , কার্তিকপুর বাজার, ময়নট ঘাটের রাস্তা, জয়পাড়া থানার মোড় এবং জয়পাড়া কলেজের সামনে থেকে জয়পাড়া ওয়ান ব্যাংক পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে যানজট লেগেই থাকে। আর এর করণ জয়পাড়া কলেজের সামনে থাকা সিএনজি আর অটোরিকশার রাস্তা ও ফুটপাত দখল!
যত্রতত্র পার্কিং, অটোরিকশার আধিক্ষ্য, অদক্ষ ড্রাইভার, ফিটনেস বিহীন গাড়ী, অধিক গতি, যত্রতত্র গাড়ী ঘুরাতে গিয়ে জ্যামের সৃষ্টি করে অটোগুলো। আর এ কারনেই যানজট লেগেই থাকে।
মাসুদ রানা নামে এক ব্যাক্তি নিয়মিত ফুলতলা টু জয়পাড়া যাতায়াত করেন। তিনি অভিযোগ করেন, অধিকাংশ অটোচালকই অদক্ষ, অযোগ্য ও অপরিণত বয়সের। তাদের কারণেই প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে জয়পাড়া বাজারে। তাঁরা নিবন্ধনহীন অটোরিকশার দৌরাত্ম্যের জন্য কর্তপক্ষের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন।
দক্ষিন জয়পাড়ার বাসিন্দা নাজমুল নিউজ৩৯কে জানান, প্রতিদিন বেড়েই যাচ্ছে অটো রিক্সা, সাথে সাথে বাড়ছে জ্যাম ও দুর্ঘটনা। রাস্তা পারাপারে বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অটোরিকশার গতিতে নেই নিয়ন্ত্রণ, রিক্সার বডি ফিটনেস নেই। আর এই অটোরিকশার জন্য বিদ্যুৎ এর উপরও চাপ বাড়ছে। ফলে নিয়মিত বিদ্যুৎ চাহিদা দোহারে বাড়ছে, বাসা বাড়ির মিটারে চলছে বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে অটো চার্জের ব্যবসা। ফলে বাড়ছে বিদ্যুৎ লোডশেডিং।
উল্লেখ্য দোহার উপজেলার যানজট নিরসনে ইতঃমধ্যে দোহার উপজেলা প্রশাসনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৬/১০/২০ তারিখের দোহার উপজেলা সভাকক্ষে দোহার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম ফিরোজ মাহমুদের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় যানজট নিরসন ও দোহার উপজেলার প্রাণকেন্দ্র জয়পাড়া বাজার এলাকার প্রধান সড়কে ইজিবাইক এবং যত্রতত্র মোটরসাইকেল, মালবাহী গাড়ীর পার্কিংয়ের চাপ কমাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে এই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । যানজট নিরসনে ১লা নভেম্বর থেকে এটি কার্যকর করা হবে বলে সভা থেকে জানানো হয়েছিলো। এছাড়া দোহার থেকে ঢাকাগামী দুইটি গণপরিবহন আরাম ও নগরের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কথা থাকলেও এখনো কিছুই হয়নি।
এ বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম ফিরোজ মাহমুদ নিউজ৩৯ কে বলেন, দোহার উপজেলার প্রাণকেন্দ্র জয়পাড়া বাজার, থানার মোড় থেকে ওয়ান ব্যাংক মোড় হয়ে জয়পাড়া কলেজ মার্কেট পর্যন্ত কোনো যত্রযত্র গাড়ী পার্কিং, রিক্সা, ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক, সিএনজি ও ফুটপাতে দোকান বসাতে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি মেঘুলা বাজারে প্রতিদিনের যানজট কমাতে রাস্তার উপরে রাখা মটরসাইকেল পার্কিং বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসময় রাস্তার উপরে থাকা ফুটপাত সরিয়ে নিয়ে বাজারের অন্য পাশে স্থানান্তরের প্রস্তাবনা দেন মেঘুলা বাজার কমিটির সভাপতি।
মাসিক সভায় উপস্থিত ছিলেন দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, ঢাকা জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো.ফজলুল হকসহ অন্যান্যরা