নিউজ৩৯ এর সাথে দোহার থানা অফিসার ইন চার্জ সাজ্জাদ হোসেনের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার

713

একটি এলাকার শান্তি, শৃংখলা বিশেষতঃ সরকারের সুশাসন নির্ভর করে সেই এলাকার আইন শৃংখলা বাহিনী তথা পুলিশ বাহিনীর উপর। আর সেই উপজেলা যদি হয় ঢাকা-১ সংসদীয় আসন; তাহলে তার গুরুত্ব কতখানি তা সহজেই অনুমেয়। পুলিশ বাহিনী কি জনগণের বন্ধু না’কি তার সাথে রয়েছে দূরত্ব, এলাকার উন্নয়নে বা তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে কেমন স্বপ্ন বা কর্মপন্থা নিয়েছে দোহার থানা পুলিশ?  এমন প্রশ্নসহ মাটরসাইকেল দূর্ঘটনা রোধ, বিয়ে বাড়ীতে অহেতুক শব্দ দূষণের মতো জীবননাশি অপরাধ, মাদকের করাল গ্রাস রোধ,  শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে রাস্তায় রাস্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রমিত বাংলার প্রচলনসহ নানা স্বপ্ন বাস্তাবায়নের কথা দোহার থানা পুলিশের প্রধান – অফিসার ইন চার্জ সাজ্জাদ হোসেন।

নিউজ৩৯ এর পক্ষ থেকে এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন সিনিয়র সাব-এডিটর আছিফুর রহমান সজল ও দোহার করোসপন্ডেণ্ট জোবায়ের হাসান শরিফ। নিচে পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরে হলোঃ

প্রশ্নঃ কেমন আছেন? কেমন লাগছে দোহার, দোহারের জন-সাধারণ?

সাজ্জাদ হোসেনঃ আলহামদুল্লিল্লাহ, ভাল আছি। আসলে আমার কাছে আগে মনে হতো উত্তর বঙ্গের মানুষ ভাল। এমন একটা কনসেপ্ট আমার ছিল। কিন্তু দোহারে আসার পর আমার সেই ধারনাটা ভেঙ্গে গেছে। দোহারের মানুষ অনেক আন্তরিক। এখানে আসার পর মানুষ আমাকে যেভাবে গ্রহন করেছে তা সত্যই অসাধারন।

প্রশ্নঃ আপনার পরিবার ও শিক্ষা জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন?

সাজ্জাদ হোসেনঃ আমরা আসলে দূর্ভাগা। আমাদের বাবা-মা বেচে নেই। আমরা ৫ ভাই ও ১ বোন। বোনটিও আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে। আমার বাবা তার জীবনে খুব স্ট্রাগল করে আমাদের মানুষ করেছেন। তার ফলশ্রুতিতে আমরা ৫ ভাই ও এক বোন কিন্তু উচ্চ শিক্ষিত হতে পেরেছি।

আমরা এক ভাই ও এক বোন পাস কোর্স ডিগ্রিধারী। আমরা চার ভাই অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী ধারী। এর মাঝে আমি সহ তিন ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেছি আর এক ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেছে। সবার ছোট ভাই সে আমেরিকাতে সেটেলড হয়েছে। তার দুই ছেলে, তারা জন্মসূত্রে আমেরিকান। তার সুত্রে আমরাও ২০২৪-২৫ সালে আমেরিকান ভিসা পাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে।

আমি দর্শন নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েছি। মতিহারের সেই সবুজ উদ্যান এখনো আমি মিস করি। আমি যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন আমার দাড়িগোঁফ কিছুই হয় নি। সেই হিসাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ই আমার সেকেন্ড হোম। রাজশাহী শহর আমার প্রাণের শহর। সেখান থেকেই আমি পুলিশের অফিসার ক্যাডেটে যোগদান করি। সেখান থেকে সারদায় ট্রেনিং শেষ করে ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে পুলিশ ফোর্সে জয়েন করি। সেখানে আমার প্রথম পোস্টিং হয় রংপুর জেলায়। সেখান থেকে দুই বা তিন মাস পর আমার ঢাকায় পোস্টিং হয়। মুলত ২০০০ সালেই আমাদের জেনারেশনের পড়াশোনা শেষ।

এখন ভাতিজা-ভাতিজিরা পড়াশোনা করছে। দুই ভাইজির একজন এমএ পরীক্ষা দিবে আরেকজন অনার্সে পড়ে। এক ভাতিজা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। আর আমার স্ত্রী ডাবল ডিগ্রীধারী একই সাথে পাসকোর্স ও অর্থনীতিতে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। আমার ছেলে ইংলিশ ভার্সনে মোহাম্মদপুর প্রিপ্রেইটরিতে দশম শ্রেণিতে। আর মেয়েটা ইংলিশ ভার্সনে মোহাম্মদপুর প্রিপ্রেইটরিতে ক্লাস সিক্সে। মাশায়াল্লাহ ছেলে আমার সমান লম্বা হয়ে গেছে আর মেয়েটিও তার মায়ের মতো লম্বা হয়ে গেছে।

প্রশ্নঃ আপনি দোহারে দায়িত্ব নিয়েছেন প্রায় ৬ মাসের মতো। আপনি আসার পর দোহারের কি কি সমস্যা আপনার চোখে পড়েছে?

সাজ্জাদ হোসেনঃ দোহারে আসার পর যে সমস্যাটা প্রকট হিসাবে আমার চোখে ধরা দেয় তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে মাদকের সমস্যা। এই মাদক সমস্যা নিয়ে কাজ করার সময় প্রথমে আমার হিমশিম খেতে হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি ধীরে ধীরে মাদকের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসার। এক্ষেত্রে যার কথা না বললেই নয়, আমার অভিভাবক, ঢাকা জেলা পুলিশের আইকন, সমগ্র বাংলাদেশ পুলিশের আইকন, সজ্জন ব্যাক্তি, দূর্নীতির উর্ধে যার আসলে চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই দেশের সেবা ছাড়া সেই ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান মোহাম্মদ শফিউর রহমানের দিক নির্দেশনায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

আর মাদকের ব্যাপারে বলতে গেলে এটা আসলে জিরো করা সম্ভব নয়। তবে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। সেই নিয়ন্ত্রনের কাজটাই আসলে আমরা করছি। আমরা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছি সেইভাবে কাজ করে গেলে আমরা সেটা নিয়ন্ত্রনে আনতে পারবো। আসলে আমি দায়িত্ব নেয়ার কিছু দিন পরই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এসে যায় যা একটি গুরুত্বপূর্ন চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলাদেশ পুলিশের উপর। সেটি মোকাবেলা করতে গিয়ে সেই কাজগুলো কিছুটা শিথিল হয়ে যায়। নির্বাচন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায়। তার নির্দেশে সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গীবাদ ও দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে আমরা নিয়োজিত। আর এটি দোহারের মানুষই মূল্যায়ন করতে পারবে কতটুকু কাজ হয়েছে।

আর দোহারে দায়িত্ব নেয়ার পর আমি আরেকটা জিনিস খেয়াল করেছি যে এখানে খুব অল্প বয়সী ছেলেরা মটরসাইকেল চালায়। যা রাস্তার শৃঙ্খলা ব্যাহত করে। এবং প্রানহানীর ঘটনাও ঘটে। এখনও মাঝে মাঝে এই দুঃখ জনক ঘটনাগুলো ঘটছে। আমরা এই বিষয়টি নিয়েও কাজ করেছি। পাশাপাশি জুয়ার একটা বিষয়ও ছিল। আমরা গত ছয়মাসে জুয়ার যে স্পটগুলো ছিল সেগুলো পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়েছি।

প্রশ্নঃ দোহারের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের ভবিষ্যৎ ভাবনা কি? আপনি কেমন দোহার দেখতে চান।

সাজ্জাদ হোসেনঃ আমি আসারপর দেখেছি দোহারের মুল এন্ট্রি পয়েন্ট তিনটি। এর মাঝে শ্রীনগর দিয়ে একটি, গালিমপুর দিয়ে একটি আরেকটি মাঝিরকান্দা দিয়ে। এই তিনটি পয়েণ্ট যদি আমরা নিরাপদ রাখতে পারি তাহলে দোহারে অপরাধীদের ঢুকার প্রবনতা আমরা বন্ধ করতে পারবো। আর রাস্তায় যে দস্যুতা ও ছিনতাই এর ঘটনা ঘটে থাকে তা মুলত এই তিনটি পয়েন্টেই ঘটে থাকে। বিশেষ করে নিকড়া-গালিমপুর ও বাশতলা-মাঝিরকান্দা সড়কে। সেখানে আমার অফিসার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত থাকে। আমরা আসলে একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান মাফিক আগাচ্ছি। সারা রাত পাহাড়া দেয়ার চেয়ে এই সঙ্ঘবদ্ধ ডাকাতদলকে পাকড়াও করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

আরেকটা জিনিস আমি ভেবেছি এবং একটি কোম্পানীর সাথে আলোচনাও করেছি। আমি চাচ্ছি দোহারের ব্যস্ততম এলাকাগুলোকে সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসার। মাননীয় পুলিশ সুপার শাহ মিজান মোহাম্মদ শফিউর রহমানের নেতৃত্বে এই কাজ করা হবে। এর জন্য আমি বেশ কিছু জায়গাও সিলেক্ট করেছি। আয়োজন মোড়, রতন চত্ত্বর, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মোড়, উপজেলা পরিষদ, ওয়ান ব্যাংক মোড়, করম আলীর মোড়, থানার মোড়, লটাখোলা ব্রীজ। এই জায়গা গুলো যদি আমরা সিসি টিভির আওতায় নিয়ে আসতে পারি। এতে অপরাধীরা যখন দেখবে এই জায়গাটি সিসিটিভি ক্যামেরাও আওতাধীন তখন তারা আর ক্রাইম করতে চাইবে না।

এই সিসিটিভির কাজটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে ইভটিজিং, বখাটেপনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।

আর মটর সাইকেল কারা বেশি গতিতে চালাচ্ছে, অল্প বয়সী কারা মটর সাইকেল নিয়ে বেরুচ্ছে এটাও মনিটরিং করা যাবে।

আর মাদকের ব্যাপারটি আমরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করতে চাই। আর দস্যুতা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে এসেছি। এটা পুরোপুরি নির্মুল করতে চাই। দুই একটি দুঃখজনক ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে থাকলেও এটি আর ঘটবে না আসা করি।

আর দোহারে আমি আরেকটা জিনিস দেখেছি সেটা হচ্ছে এই এলাকার প্রচুর মানুষ প্রবাসে থাকে। প্রবাসে থাকার কারনে বেশিরভাগ বাড়িই পুরুষ শুন্য। শুধু মহিলা ও বাচ্চারা সেখানে থাকে। সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিকিউরিটির অভাব দেখা যায়। ফলে এই সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধীরা এই বাড়িগুলোকে টার্গেট করে থাকে। আমরা সাধারন মানুষের মাঝে নিরাপত্তার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য নিয়মিত সভা করছি। নিরাপত্তার শুরু যেন ব্যক্তি পর্যায় থেকে হয় সেই লক্ষে আমরা কাজ করছি, সচেতনতা বৃদ্ধি করছি।

প্রশ্নঃ দোহারে অবাধে চলছে বালু ব্যবসায়। নির্দিষ্ট কোন বালু মহাল দোহারে না থাকলেও পদ্মা থেকে অবাধে বালু উত্তলন করা হচ্ছে। এই বালু ব্যবসায় এর ব্যাপারে দোহার থানা পুলিশ কতটুকু অবগত বলে মনে করেন?

সাজ্জাদ হোসেনঃ প্রতিটি উপজেলাতেই দুইটি প্রশাসন থাকে। একটি সিভিল প্রশাসন আরেকটি পুলিশ প্রশাসন। সিভিশ প্রশাসনের প্রধান ইউএনও আর পুলিশ প্রশাসনের প্রধান ওসি। সিভিশ প্রশাসনের যে কাজ কর্ম সেটা ইউএনও সাহেব দেখেন। পুলিশ প্রশাসনের কাজ কর্ম ওসি দেখা শোনা করেন।

এখন ডেভেলপমেন্টের জন্য বালি দরকার এটা বলার অবকাশ রাখে না। দোহারে যেভাবে ব্যক্তি পর্যায় ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে তার জন্য বালি দরকার। তবে দোহারের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ করা যাবে না। এটা থানার পক্ষ থেকে সকল বালু ব্যবসায়ীকে বলে দেয়া হয়েছে। তবে হ্যা পদ্মার চর থেকে ড্রেজিং করে বালু এনে যদি দোহারের উন্নয়ন কাজ হয় এবং সেই বালু উত্তলনের ফলে দোহারের যদি কোন ক্ষতি না হয় তাহলে সমস্যা নেই। পদ্মার উপার থেকে যারা বালু কেটে এনে বিক্রি করে এবং দোহারের ভৌগলিক সীমানায় ক্ষতি না করে তাহলে তাদের কিছুটা ছাড় দেয়া যায়। কিন্তু দোহারের ক্ষতি হয় এমন কোন জায়গা থেকে যদি বালু উত্তলন হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর বালু মহাল নিয়ে আমার ইউএনও ম্যামের সাথে কথা হয়েছে। দোহারে যেহেতু কোন বালু মহাল নেই সেক্ষেত্রে দোহারের বালু উত্তলনের যায়গা গুলো বালু মহাল মহাল ঘোষনা করে কিছু রাজস্ব যদি আদায় করা যায় তাহলে সেটা ভাল।

অন্য খবর  দোহারে গাঁজাসহ চার মাদক ব্যবসায়ীকে আটক

প্রশ্নঃ দোহারের বালু ব্যবসয়ের সাথে আরেকটি সংযোজিত দিক হচ্ছে বালুর ট্রাক। বেশির ভাগ ড্রাইভারদের লাইসেন্স না থাকলেও তারা অবাধে দোহারের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বিগত এক বছরে বালুর ট্রাকের কারনে দূর্ঘটনায় মারা গেছে বেশ কয়েক জন। দোহারের রাস্তায় এই লাইসেন্সবিহীন বালুর ট্রাক বন্ধ হচ্ছে না কেন?

সাজ্জাদ হোসেনঃ বালুর ট্রাক দোহারে একটি আলোচিত বিষয়। এটি নিয়ে উপজেলায় লাস্ট মিটিং এ আলোচনা হয়েছে। সেই মিটিং এ দোহার-নবাবগঞ্জের স্বপ্ন সারথী যার জন্য দোহার-নবাবগঞ্জ বাসী বাংলাদেশের একটি মডেল উপজেলা হওয়ার স্বপ্ন দেখে সেই সর্বজন শ্রদ্ধেয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন, পূর্নমন্ত্রীর মর্যাদার মাননয়ি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সালমান ফজলুর রহমান স্যার বলেছেন উন্নয়ন কাজে বালুর দরকার, সবার প্রয়োজনও। তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন অতি দ্রুত এই বালুর ট্রাকের সাথে যারা জড়িত তাদের সাথে বসার। এবং বালুর ট্রাক চলাচলের জন্য তাদের রাতের একটা সময় নির্দিষ্ট করে দেয়ার জন্য বলেছেন। যাতে রাস্তার শৃঙ্খলা নষ্ট না হয়।

প্রশ্নঃ নো হেলমেট, নো পেট্রোল এ উদ্যোগ দোহারে কতটুকু সফলতা লাভ করেছে বলে মনে করেন?

সাজ্জাদ হোসেনঃ সড়ক দূর্ঘটনা রোধে ঢাকা জেলার মাননীয় পুলিশ সুপার শাহ মিজান মোহাম্মদ শফিউর রহমান স্যারের একটি উদ্যোগ ছিল। সেই অনুযায়ী আমরা দোহারের একমাত্র পেট্রোল পাম্পসহ দোহারের বিভিন্ন স্থানে আমরা সাইনবোর্ড করে দিয়েছিলাম। এখানে লক্ষনীয় বিষয় হলো জেলা শহরে আইন প্রয়োগ যতটা সহজ উপজেলা গুলোতে তত সহজ নয়। এখানে অনেকে হেলমেট ছাড়া গাড়ি চালায়, লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালায়, অনেক পুরতন মটর সাইকেল কিন্তু অনটেস্ট লিখে এখনো চালাচ্ছে, অল্প বয়সে মটর সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছে। তাদের ধরতে গেলে অনেক পরিচিত মুখ। আমরা আসলে যে কাজটা করতে চাচ্ছি যেন মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। মানুষ যাতে নিজেই আইন মানতে উৎসাহী হয়।

যখন আমি দোহার পেট্রোল পাম্পের সাথে এই বিষয়ে কথা বললাম তখন তারা বলেছিল স্যার এটি করতে গেলে তো আমি তেলই বিক্রি করতে পারবো না। তখন আমি তাদের বলেছিলাম, তেল দিবেন কিন্তু তাদের বলবেন হেলমেটের কথা। হেলমেটটা তো তাদের সেফটির জন্যই। একটি দূর্ঘটনা ঘটলে হেলমেট তাদের কতটুকু সেফ রাখে সেটা বলবেন। হায়াত-মওত আল্লাহর হাতে ঠিক আছে। তাই বলে নিজে সেফ থাকতে হবে না। নিজে সেফ থাকলে আল্লাহও তাকে সেফ রাখে। আমরাও কাউন্সিলিং করার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে কাউন্সিলিং করছি। সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হবো।

প্রশ্নঃ দোহারের স্কুল-কলেজগামীদের মটর সাইকেল চালনা অত্যাধীক। বয়স ও লাইসেন্স ছাড়াই দোহারে তারা অবাধে মটর সাইকেল চালাচ্ছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে কি? ১৮ এর নিচে বাইক নয়, এরকম কোন অভিযান চলা উচিত বলে মনে করেন কি’না?

সাজ্জাদ হোসেনঃ আমি প্রথমেই বলেছি দোহারের মানুষের মটর সাইকেলের কথা। এখানকার একটা কালচার দেখেছি, এইখানের প্রচুর মানুষ প্রবাসে থাকে। ফলে এই অঞ্চলে স্বচ্ছলতার হারও বেশি। আমি দেখেছি প্রবাসে থাকার কারনে কারো ছেলে যদি ১৫ থেকে ১৬ বছর হয়ে যায় তখন যদি কোন কিছুর আবদার করে সেটা তিনি আর ফেলতে পারেন না। যেভাবে হোক মাকে ম্যানেজ করে মটর সাইকেল কিনে নেয়। তাদের ভাবনা মটর সাইকেল কিনে তো দিয়েছে আমার বাবা-মা। আমাকে চালাতে দিবে না কেন। আসলে প্রথম থেকেই আইনের প্রতি এক ধরনের অজ্ঞতাই এই অঞ্চলের অপ্রাপ্ত বয়স্কদের হাতে মটর সাইকেল চলে যাওয়ার একটি অন্যতম কারন। স্কুলে যদি ট্রাফিক আইনের ব্যাপারে কোন কিছু সংযোজন করা হতো,  তাহলে তার মাথায় ঢুকতো আরে আসলেইতো আমি ১৮ বছরের আগে মটর সাইকেল বা গাড়ি চালাতে পারবো না। আসলে আমাদের সচেতনতা আগে দরকার। তারপরও আমরা ১৮ এর নিচে যাদের মটর সাইকেল চালাতে দেখি তাদের ধরে থানায় নিয়ে আসি এবং তাদের অভিভাবকদের ডাকি। তাদের অভিভাবকদের আমরা ভতসনা করি। তাদের নিরুৎসাহিত করি তাদের হাতে মটর সাইকেল তুলে না দেয়ার জন্য। এটা একটা কঠিন।

আর আমার একটা উদ্যোগ ছিল স্কুল-কলেজগুলোতে মটর সাইকেলের উপর কিছু সেমিনার করা। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের জন্য সকল কাজগুলো হয়তো হয়নি। কিন্তু এখন আমরা স্কুল ও কলেজগুলোতে মটর সাইকেল ও আইন কি বলে সেটা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলবো। তাদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করবো। আইনের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করবো। যদি এটা করতে পারি তাহলে এই সংস্কৃতি অনেকটাই আমরা পরিবর্তন করতে পারবো বলে মনে করি।

আর স্কুল কলেজের কথা যেহেতু বললেন, এই ভাষার মাসে আমি একটা উদ্যোগ নেয়ার চিন্তা করছি যেটা নিয়ে আমি ইউএনও ম্যামের সাথেও কথা বলেছি। আমি লক্ষ্য করেছি প্রাইমারী স্কুলের ছেলেরা রিডিং ঠিক মতো পড়তে পারছে কিনা, প্রমিত বাংলা উচ্চারন করতে পারছে কি না? এটা নিয়ে কাজ করবো। কারন আমরাই একমাত্র জাতি যারা মায়ের ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি। যার ফলশ্রুতিতে ইউনেক্সো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমি চাই আমরা সবাই শুদ্ধ ও প্রমিত বাংলায় কথা বলি। ভাষার বিকৃতি কোন স্মার্টনেস হতে পারে না। আঞ্চলিক ভাষা থাকবে কিন্তু সেটা নিজের অঞ্চলের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য। কিন্তু নিজেকে স্মার্ট প্রমানের জন্য ভাষার বিকৃতি খুব নিন্দনীয়।

আমি ১৯৯০ সালের পর থেকে ঢাকায় থাকি। আমি এখনও কোন রিক্সাওয়ালাকে মামাও ডাকিনি। চাচা ডাকি, ভাই ডাকি। আমি তুমিও বলি না। আমার বাবা স্কুল শিক্ষক ছিলেন, উনি খুব চমৎকার ইংরেজি বলতে পারতেন। কিন্তু উনি কখনও বিকৃত উচ্চারনে আমাদের সামনে বাংলায় কথা বলেন নি। উনি আমাদের প্রমিত বাংলায় কথা বলা শিখিয়েছেন। এই ভাষার মাসে আমরা স্কুল গুলোতে যেতে চাই, দেখতে চাই তারা সুন্দর বাংলা বলতে পারছে কি না। প্রাইমারী স্কুল গুলোতে ভাষাটি যদি গেথে দেয়া যায় তাহলে সেটাই সারা জীবন কাজ করে।

আর দোহারে তিনটি কলেজ সরকারী পদ্মা কলেজ, জয়পাড়া কলেজ ও মালিকান্দা কলেজ। এই তিনটি কলেজে আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলবো। আমরা ট্রাফিক নিয়ে কথা বলবো, ট্রাফিক আইন নিয়ে কথা বলবো। এই তরুনরাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বে। আমরা অতি দ্রুত এই কার্যক্রম শুরু করতে চাই।  কলেজের অধ্যক্ষদের সাথে অতি দ্রুতই আমি এই বিষয় নিয়ে কথা বলবো।

প্রশ্নঃ দোহারের প্রানকেন্দ্র জয়পাড়া বাজারের যানজট নিরসন করা যাচ্ছে না কেন? হকারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে না কেন?

সাজ্জাদ হোসেনঃ আসলে জয়পাড়া বাজারের যানজট নিরসনে একটি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। দোহার পৌরসভা, উপজেলা প্রশাসনের করনীয় আছে। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের করনীয়ও আছে। আমি আসার পর শুনেছি এই জয়পাড়া বাজার সড়কটি পাশে বাড়ানো হবে। আয়োজন শপিংমলের সামনের রাস্তাটি আরো বড় হবে। উপজেলা মার্কেটটি ভেঙ্গে ফেলা হবে। কিন্তু মামলার কারনে সেটা এখনও করা যায়নি। কিন্তু এই রাস্তা প্রশস্ত করা এখন সময়ের দাবি।

থানার মোড় থেকে জয়পাড়া কলেজ মোড় হয়ে ওয়ান ব্যাংক হয়ে করম আলীর মোড় পর্যন্ত রোডে মানুষ ও যানবাহনের যে চাপ সেই হিসাবে এই রাস্তাটি চারলেন করা এখন সময়ের দাবি। আসলে রাস্তা প্রশস্ত না করলে এই জয়পাড়া বাজারের যানজট নিরসন করা সম্ভব না। এই রাস্তায় প্রায় সময় যানজট লেগে যায় তখন আমাকে ফোন করলেই আমি অফিসার পাঠিয়ে দেই যানজট নিরসনের জন্য।

তাছাড়া কোন জাতীয় অনুষ্ঠান ও বিশেষ করে বৃহস্পতিবার আমরা কলেজ মোড়ের পর থেকে ওয়ান ব্যাংক পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে রাখি যানবাহনের জন্য। কারন সংকীর্ণ রাস্তার কারনে যানজট একবার লেগে গেলে সেটা নিয়ন্ত্রন করতে করতে কয়েক ঘন্টা পাড় হয়ে যায়। যানজট নিরসনে তাই রাস্তা প্রশস্ত করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। আর এই কাজটি সম্মন্বিত ভাবে করতে হবে। আইনশৃঙ্গলা রক্ষা কমিটির মিটিং এও এটা নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা চাই, সহায়তা চাই পৌরসভা কতৃপক্ষেরও। বিশেষ করে ব্রীজটা আরো প্রশস্থ করা হোক।

প্রশ্নঃ বিয়ে উপলক্ষে দোহারে রাতভর আনন্দ উৎসবের নামে যে শব্দ দূষন ও মাদক গ্রহন হয়, এই ব্যাপারে আপনি কোন উদ্যোগ নিবেন কি না?

সাজ্জাদ হোসেনঃ আমি আমার একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করি। দায়িত্ব গ্রহনের পর আমি একদিন আমার অফিসার কোয়ার্টারে ঢুকছি। এই সময় আমার মনে হলো চারদিক থেকে সাউন্ড এসে আমার কোয়ার্টার কাপতেছে। রাত তখন সারে বারোটার উপরে বাজে। আমি আমার অফিসারকে জানালাম আমি কিছু শুনতে চাই না এতো রাতে যে সাউন্ড বক্সগুলো বাজছে তাদের আমি থানায় উপস্থিত চাই। পড়ে সেই অফিসার প্রায় ১ ঘন্টার মাঝে এই সাউন্ড বক্সগুলো বন্ধ করে। আর আসলে এটা একটা প্রবনতা হয়ে দাড়িয়েছে যে বিয়েতে হলুদ দেয়া, চলন এই সব অনুষ্ঠানে সাউন্ড বক্স বাজাবে আর সাউন্ড বক্সে বাংলা গানের থেকে হিন্দি গান বেশি বাজানো হবে। আর ৪৫ ডেসিবলের উপরে কোন শব্দ গেলে যে সেটা শব্দ দূষন হয় সেই ব্যাপারে তাদের কোন ধারনাই নেই। আর শব্দ দূষন যে একটা অপরাধ সেটার ব্যাপারেও তাদের কোন ধারনা নেই। আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।

অন্য খবর  দোহারে তারুন্যের বঙ্গবন্ধু -মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

আরেকটা ব্যাপার আমি যোগ করতে চাই, সেটা হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষ সংস্কৃতিমনা। তার কবি গান, জারি গান, বাউল গান, পালা গান খুব পছন্দ করে। এবং রাতভর এই গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। আমি আসার পর তাদের সাথে কথা বলে তাদের অনুষ্ঠানগুলো রাত বারোটার ভিতর বন্ধ করার চেষ্টা করছি। অনেক ক্ষেত্রে তারা আমাকে সহায়তাও করছে।

প্রশ্নঃ দোহারের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের লোকবল যথেষ্ট কি না?

সাজ্জাদ হোসেনঃ এটি আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি প্রশ্ন। ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হলেও ঢাকা থেকে দোহারের অবস্থান প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূর। আমি যখন প্রথম দোহারে আসি তখন আমি যখন ঢাকা ছেড়ে আসি তখন আমার মনে হয়েছিল আমি কোন প্রতন্ত দ্বীপে যাচ্ছি কিনা। ঢাকা থেকে এই দূরত্বের কারনে ঢাকার কেন্দ্রীয় যেই অফিসাররা আছে তারা ঢাকা ছেড়ে কেউ দোহারে আসতে চায় না। আমি আপনাদের মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিতে চাই। আমি আসার পূর্বে এই থানায় সাব-ইন্সপেক্টার ছিল দুই থেকে তিন জন সর্বোচ্চ চার জন। এএসআই ছিল তিন থেকে চারজন। দূরত্ব ও অন্যান্য কারনে এইখানে এসে কেউ থাকতে চাইতো না। আমি আসার পর এই আসুবিধা অনেকটা দূর হয়। আমরা স্বাভাবিক একটা পরিবেশ তৈরি করতে পারছি।

আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আমি প্রথম যখন এখানে আসি তখন আমি আমার বাবুর্চি নিয়ে একাই খেতাম। আমি পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম আমার অফিসাররা কেউ অফিসার মেসে খায় না। রান্নার মান ও পারিপার্শিক অবস্থার কারনে সকলে নিজ নিজ মত খায়। তখন আমি ডিআইজি স্যার ও পুলিশ সুপার স্যারকে বলে মেছের জন্য ভাল বাবুর্চি এনে অফিসার মেছে খাওয়া শুরু করি। আমি কিন্তু এখন অফিসার মেছে খাই আমার বাকি ফোর্সের সদস্যদের সাথে নিয়ে। এতে ফোর্স হিসাবে আমাদের মাঝে যেমন একতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক একই ভাবে অন্যান্য কাজেও সবার সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়া আমি আসার আগে অনেক কিছুই থানার ভিতরে পরিপূর্নভাবে ছিল না। আমি সেইগুলো ঠিক করেছি। রান্নাঘর ঠিক ছিল না সেটা ঠিক করেছি, পিছনে পানি জমতো সেটা এখন পাইপ দিয়ে সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করেছি এবং কাদার জায়গায় পাকা করে দিয়েছি, গোছল খান খারাপ ছিল, সেটা ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করেছি, দূর্গন্ধ হতো যেই জায়গাগুলোতে সেইগুলো ভেঙ্গে পাকা করে দিয়েছি। এই সব কারনে এখন অফিসাররা এই থানায় আসতে চায়। তারপরও দূরে তো, অনেকেরই মন টিকে না। তারপরও মৌলিক চাহিদা পূরন করার ফলে এখন অফিসার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সাব ইন্সপেক্টর আছে আট জন, এএসআই আট জন, প্রবেশনারী সাব ইন্সপেক্টর আছে দুইজন,কনস্টেবল পরিপূর্ন। তবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না মানুষকে প্রপার সার্ভিস দিতে গেলে অফিসারের সংখ্যা আরো বৃদ্ধির প্রয়োজন।

প্রশ্নঃ একজন তরুণের কেন পুলিশ বাহিনিতে আসা উচিত, যারা আসতে চায় তাদের পড়ালেখার প্রস্তুতি সম্পর্কে যদি কোন পরামর্শ থাকে?

সাজ্জাদ হোসেনঃ একজন তরুন কেন পুলিশ বাহিনীতে আসবে। আসলে মানুষ কিন্তু বিপদে পড়ে দুইটি যায়গায় বেশি যায়। এক ডাক্তারের কাছে, দুই পুলিশের কাছে। আমি নিজেও অসুস্থ। আমার চোখে লেন্স লাগাতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালিন সময়ে আমি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম। সাধারন মানুষ বিপদে পড়লে তার শেষ ভরসা পুলিশ। এই পুলিশ বাহিনী হচ্ছে একই সাথে ক্যারিয়ার ও মানব সেবার একটি বিশাল ক্ষেত্র। পুলিশের কাছে কিন্তু টপ টু বটম সব শ্রেণীর মানুষ আসে। তার দেশপ্রেম ও জনগনের সেবা করার সবচেয়ে ভাল জায়গা হচ্ছে পুলিশ। পুলিশ বাহিনীতে থেকে দেশ মাতৃকার সেবা যেমন করা যায় ঠিক একইভাবে নিজের ক্যারিয়ার ও জীবন যাত্রার উন্নতি, সম্মান সব কিছুই অর্জন করা যায়।

যদিও পারিপার্শিক অবস্থার কারনে, লজিস্টিকসের কারনে সব সার্ভিস আমরা দিতে পারি না। কিন্তু এক সময় তো সব পরিপূর্ন হবে এবং এই সেবার দরজা খুলে দেয়ার জন্যই বাংলাদেশের তরুনদের পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেয়া উচিৎ।

প্রশ্নঃ দোহারে স্বল্প সময়ে আপনার সফলতা সম্পর্কে কিছু বলুন?

সাজ্জাদ হোসেনঃ এক্ষেত্রে দোহারের মানুষই বিচার করবে আমি কতটুকু ভাল কাজ করেছি। আমি বললে তো হবে না। দোহারের মানুষই বিচার করবে আমি কতটুকু কাজ করতে পেরেছি।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে বলতে গেলে আমি দোহার থানা পুলিশের সেবা মানুষের দাড়গোড়ায় নিয়ে যেতে পেরেছি। আমি মাঝে মাঝে কেউ থানায় আসলে তার সাথে যেয়ে কথা বলি। পুলিশের সেবাটা আমরা মানুষের কাছে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছি। দোহার থানায় এখন যে কেউ এসে ওসির সাথে কথা বলতে পারে।

আর দোহারে অপরাধের চেয়ে সামাজিক সমস্যাগুলো বেশি, দেখা যায় জমির সীমানা নিয়ে ঝামেলা, পরিবার ভেঙ্গে যাচ্ছে। এই রকম ক্ষেত্রে আমরা দুই পক্ষকে ডেকে মিটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ অন্য কারো কথা না শুনলেও পুলিশের কথা মানুষ শুনে। এবং এই জায়গায় একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে দোহারের মানুষের মাঝে। কেউ না শুনলেও পুলিশ আমার কথা শুনবে এবং আমি ন্যায় বিচার পাবো। তাছাড়া আমি যেকোন অনুষ্ঠানে গেলেই আমি আমার কার্ড দিয়ে আসি, সবাইকে বলে আসি আমার কাছে পৌছাতে কোন মাধ্যম লাগবে না, কোন ব্রোকার লাগবে না। আমার দুয়ার আপনাদের জন্য সব সময় খোলা। আপনারা আসবেন। আমি মনে করি ব্যক্তিগত ভাবে এটাই আমাদের সফলতা।

প্রশ্নঃ নিউজ৩৯ এর ৮০ হাজার পাঠকের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?

সাজ্জাদ হোসেনঃ আমি সেই দিন আমার অফিসারের সাথে প্রবাসীদের নিয়ে কথা বলছিলাম। স্পেশাল ব্র্যাঞ্চে থাকার কারনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে আমার প্রায় ২ বছর চাকরি করার সুযোগ হয়েছিল। বাংলাদেশী হিসাবে যে রেমিট্যান্সের বড়াই আমরা করি সেটা কিন্তু প্রবাসীদের অর্থ। প্রবাসীরা তার পরিবারের জন্য যে ত্যাগ ও কষ্ট শিকার করে, পরিবারের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছে। তাদের এই অর্থনৈতিক তৎপরতার প্রমান আজ দোহারের মত একটি ছোট্ট উপজেলায় প্রায় ৩০টি ব্যাংক। দোহারের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে এই প্রবাসীদের উপর।

আমি যদি ছোট-খাট অপরাধে কাউকে ধরে আনি এবং যদি শুনি সে বাইরে চলে যাচ্ছে তাহলে আমি তার বিরুদ্ধে আর কোন আইনগত ব্যবস্থা নেই না। আমি চাই সে বাইরে চলে যাক, দেশের জন্য কিছু নিয়ে আসুক। দেশের বোঝা না হয়ে তারা প্রবাসে গিয়ে দেশের সম্পদ হোক। প্রবাসীদের প্রতি আমার ব্যক্তিগত ভাবে শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা। প্রবাসীরা অনেকেই আমাকে ফোন করে তাদের সমস্যার জন্য, আমি তাদের কথা শুনি ও আইন আনুযায়ী আমি তাদের সমস্যা গুলো সমাধান করার চেষ্টা করি।

এছাড়া দোহার-নবাবগঞ্জ-কেরানীগঞ্জ-শ্রীনগরের পাঠকদের উদ্দেশ্যে আমার বক্তব্য, আসুন দেশকে ভালবাসী, দেশের আইন মেনে চলি, ছেলে-মেয়েদের ট্রাফিক আইন শিক্ষা দেই, ট্রাফিম আইন মেনে চলি, অল্প বয়সীদের হাতে মটর সাইকেল তুলে না দেই। একটা প্রানহানী যে কত কষ্টের সেটা শুধু সেই পরিবারই বোঝে। আর সবাইকে বলতে চাই, মাদকের যে নীল ছোঁয়া, তা থেকে যেন আমরা পরিবারকে রক্ষা করতে পারি, তরুনদের রক্ষা করতে পারি।

আর আমরা সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই, একটি দেশের উন্নয়ন আইন মানা ছাড়া সম্ভব না। এবং সমাজের সকলের সহযোগীতা ছাড়া আইন প্রয়োগ করা আমাদের পক্ষেও সম্ভব না। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে আইনের প্রতি যে সম্মান সেটা বজায় রাখি, পুলিশকে অপরাধের তথ্য দিয়ে সহায়তা করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন, পূর্নমন্ত্রীর মর্যাদার মাননয়ি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সালমান ফজলুর রহমান স্যার দোহার-নবাবগঞ্জকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন। তিন এই অঞ্চলের স্বপ্ন সারথী। দোহারে নদী শাসনের কাজ হচ্ছে, মেরিন ড্রাইভ হবে, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার হবে সব মিলিয়ে দোহার নবাবগঞ্জের উন্নয়নে সালমান ফজলুর রহমানের সাথে যেন আমরা সবাই আধুনিক দোহার-নবাবগঞ্জ গড়ার কাজ করতে পারি সেই প্রত্যাশায় আমিসহ পুরো দোহার ও নবাবগঞ্জ বাসী।

আপনার মতামত দিন