টানা তৃতীয় দিনের মতো সোমবারও ঢাকা-১ (নবাবগঞ্জ-দোহার) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের নির্বাচনী জনসভা ও নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা, ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত নবাবগঞ্জ ও দোহারের বিভিন্ন এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।
একই সঙ্গে এ এলাকায় সালমা ইসলামের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ার কারণে ইউনিয়ন পরিষদের একজন চেয়ারম্যানসহ অনেক নেতাকর্মীকে হুমকি দেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের পক্ষ থেকেও নানা রকম ভয়ভীতি দেখানো অব্যাহত আছে।
এসব ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে অনতিবিলম্বে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও মটরগাড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।
জানা যায়, সোমবার দুপুরে দোহার লটাখোলা এলাকায় সালমা ইসলামের নির্বাচনী সভায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে সন্ত্রাসীরা। দুপুর আড়াইটার দিকে ২০-৩০ জন সন্ত্রাসী সভার মঞ্চ, চেয়ার, টেবিল, মাইকসহ বিভিন্ন উপকরণ ভেঙে ফেলে।
এ সময় সভায় আসা কর্মী ও সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সভাস্থল থেকে বিতাড়িত করে সরকারি দলের নামধারী ক্যাডাররা। বেলা ৩টার দিকে সালমা ইসলাম ঘটনাস্থলে এলে ভোটার ও সমর্থকরা একজোট হয়ে সভাস্থলে পুনরায় ফিরে আসেন। এরপর শুরু হয় সভা।
এ সময় ভোটার ও সমর্থকরা সালমা ইসলামকে সাহস জুগিয়ে বলেন, ‘আপনি আমাদের মা-বোনের মতো। যতই হুমকি-ধমকি, ভাংচুর আর অগ্নিসংযোগ করা হোক না কেন আমরা আপনার পক্ষে আছি। আমরা কাউকে ভয় পাই না। আমরা এ অন্যায়ের জবাব দেব ৩০ ডিসেম্বর মটরগাড়ি মার্কায় ভোট দিয়ে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বেলা আড়াইটার দিকে ২০-২৫ যুবক লাটিসোটা নিয়ে মঞ্চসহ চেয়ার-টেবিল ভেঙে ফেলে। তারা বলেন, কিন্তু যখনই ঘটনাস্থলে আমাদের প্রিয় নেত্রী সালমা ইসলাম এসে উপস্থিত হন তখন আমরা সভাস্থলে হাজির হই।
মটরগাড়ি মার্কার সমর্থক মিলন খান জানান, সন্ত্রাসীদের এমন হামলা ও ভাংচুরেও আমরা শঙ্কিত নই। বরং তাদের এসব কর্মকাণ্ডের ফলে সালমা ইসলামের ভোট আরও বাড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একজন কর্মী জানান, দোহারের একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এসব হামলার ঘটনা ঘটছে। আমরা সব জানি। এর জবাব জনগণ তাকে দেবে।
নবাবগঞ্জের দিঘিরপাড় এলাকায় সালমা ইসলামের দুটি নির্বাচনী ক্যাম্পে রোববার মধ্যরাতে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তারা নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দিয়ে পোস্টার ও ব্যানার পুড়িয়ে দেয়। ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা মটরগাড়ি প্রতীকের কর্মী নূর হোসেন এ তথ্য জানিয়ে যুগান্তরকে বলেন, রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা ক্যাম্পে হামলা করে।
এদিকে নয়নশ্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিপন মোল্লা অভিযোগ করে প্রতিবেদককে বলেন, ‘শনিবার রাতে পুলিশ সাদা পোশাকে আমার বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে বলেছে যেন আমি মটরগাড়ি প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নেই। পুলিশ আমার বৃদ্ধ বাবাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে ঘরের আসবাবপত্র তছনছ করে। সরকারি দলের কয়েকজন নেতাও তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া বর্ধনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও বিএনপি কর্মী আসলাম অভিযোগ করেন, রোববার রাতে নবাবগঞ্জ থানা থেকে পুলিশ আমার বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে বলেছে নির্বাচনের আগে যেন আর ঘরে না ফিরি। তাই ভয়ে আমি বাড়িতে যেতে পারছি না।
তিনি আরও জানান, সন্ত্রাসীরা তার ভাই নবাবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ ওসমানী এবং তার স্ত্রীকেও শাসিয়ে গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, অনেকের বিরুদ্ধেই নাশকতার মামলা রয়েছে। এ কারণে পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা করছে। কিন্তু যদি তারা জামিনে থাকেন তাহলে কেন আমরা গ্রেফতার করব। তিনি দাবি করেন, কাউকে হুমকি দেয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।