এক সময়ের প্রমক্তো ইছামতি আজ যৌবন হারা মৃত প্রায়। এই ইছামতির মূল উৎস পদ্মা থেকে। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার সৈয়দপুর থেকে নদীটি পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে মানিকগঞ্জ থেকে আগত কালিগঙ্গা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এক সময় গোয়ালন্দ থেকে রাজধানীতে বড়-বড় লঞ্চ চলাচল করত, এখন সেখানে নৌকাও ঠিকমতো চলাচল করতে পারছেনা।

কিছু-কিছু এলাকায় নদীতে একদম পানি থাকে না আবার কিছু-কিছু এলাকায় হাঁটুপানি থাকলেও কচুরিপানায় ঢেকে থাকে। কচুরিপানার পচনে সৃষ্টি হচ্ছে দূর্গন্ধ। এতে বেশ কিছু স্থানে মশার বসতি। ইছামতি নদীর ওপর কার্তিকপুর এলাকায় রাস্তা নির্মাণ করায় লঞ্চ চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে। কাশিয়াখালি এলাকায় বেড়িবাঁধ দেয়ায় ওই পথেও ইছামতি নদীতে পানি আসা বন্ধ।

নানা জায়গায় বাঁধ নির্মানের ফলে ধীরে ধীরে এই নদী আর যৌবন ধরে রাখতে পারছে না। বষা মৌসুমে সামান্য প্রবাহ ফিরে পেলেও শুস্ক মৌসুমে মৃত প্রায়। কোথাও ধূঁধূঁ করে বালি আর বালি। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদি খান , শ্রীনগর ও টঙ্গীবাড়ি, ঢাকা জেলার দোহার ও নবাবগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী মানুষের ইছামতির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় দেড় যুগ যাবৎ। অথচ এক সময় এই অঞ্চলের মানুষগুলোর যাতায়াতের একমাত্র উপায় ছিলো ইছামতি। শুস্ক মৌসুমে পানি শূন্য হওয়ায় মাছের পরিমান হ্রাস পায়। ফলে মাছের উপর নিভরশীল পশু পাখি কমে যায়- এর ফলশ্রুতিতে গাছ পালা কমে যায়। কৃষকরা পানির জন্য গভীর নলকুপের উপর নিভরশীল হয়ে পড়ে। ক্রমাগত পানির উত্তোলনের ফলে পানির স্তরও নীচে নেমে যাচ্ছে। একদিকে বৃক্ষশূন্যের সাথে জীব বৈচিত্রের ক্রমাগত হ্রাস এবং পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এই অঞ্চলটি মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইদানিং ভূপৃষ্ট উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। নদী তীরবর্তী মানুষ সহ কৃষি, মৎসের উপর নিভরশীল মানুষগুলোর অস্থিত্ব রক্ষার জন্য এবং এই অঞ্চলটির পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ইছামতি নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।

অন্য খবর  বেক্সিমকোর অর্থায়নে নবাবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের উদ্বোধন

তিন জেলার ৬টি উপজেলায় নাড়ের মতো পেঁচিয়ে আছে ইছামতিঃ ইছামতির নদীর শাখা মুন্সীগঞ্জের ভেতর দিয়ে সবচেয়ে বেশী প্রবাহিত হয়েছে। যা অন্য কোন নদীর ক্ষেত্রে দেখা যায় না। বিশেষ করে সিরাজদিখান, শ্রীনগর ও টঙ্গীবাড়িতে এর অসংখ্য শাখা বিভিন্ন গ্রামে ঢুকেছে। স্বাধীনতার পর থেকে নদী পরিবেশ নষ্ট হতে থাকে। নদীতে পলি ও বালি পড়ে নাব্যতা হ্রাস পেতে থাকে। বর্ষা এলে আবার নদী ফুলে-ফেপে ওঠে।এ সময় নদীটিকে সাপের আঁকাবাঁকা শরীরের মতো দেখা যায়। জলপ্রবাহ মওসুমী প্রকৃতির । ডিসেম্বর-মার্চ পর্যন্ত পানির প্রবাহ থাকে না। আগস্টে সবচেয়ে বেশি প্রবাহ হয় । এর পর পানির প্রবাহ কমতে থাকে। ক্রমাগত পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার বিরুপ প্রভাব পড়ছে ঢাকা জেলার দোহার-নবাবগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান,শ্রীনগর ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বাসিন্দারের উপর। বিশেষ করে নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার প্রায় ৫ লক্ষাধিক বাসিন্দাদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।

মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার যমুনা নদী থেকে বের হয়ে ঘিওর, শিবালয়, হরিরামপুর, নবাবগঞ্জ, দোহার হয়ে ধলেশ্বরী নদীর তীরবর্তী সিরাজদিখান উপজেলার রাজানগর-সৈয়দপুর ইউনিয়নের ফুলহার নামক স্থান দিয়ে মুন্সীগঞ্জে এর অনুপ্রবেশ। হযরতপুর (গোপালপুর), গণশেমপুর ও শেখনগর এখানে এসে ইছামতি নদীটি দু’ভাগ হয়ে একটি আলমপুর, বিল আড়িয়াল, ষোলগর, শ্রীনগর ও লৌহজং উপজেলার হলদিয়া দিয়ে পদ্মার সাথে মিলিত হয়েছে। অপরটি শিকারপুর, নিমতলা, কালারচর, ব্রজেরহাটি, বাসাইল, রামানন্দ, উত্তর রাঙ্গামালিয়া, চোরমদ্দন, সিরাজদিখান, রাজদিয়া, টেঙ্গুরিয়া পাড়া, বাহের ঘাটা, ছোট পাউলদিয়া, দোসর পাড়া, জামাই হাঁটি, চৌদ্দগড়, বয়রাগাদি, ফুরশাইল, তালতলা বাজার, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পূর্ব রায়পুর, উত্তর বেতকা.বৃন্তসার, সেলিমাবাদ, সদর উপজেলার ইমামচর, তেলখিরা, কুমারিয়া হয়ে তিলার্দ্দি নামক স্থান দিয়ে ধলেশ্বরীতে পতিত হয়েছে।

ইছামতির যৌবন ফিরে পেতে যা যা করা প্রয়োজনঃ ইছামতির যৌবনকে ফিরিয়ে আনতে তরুন সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক সংগঠনগুলোক সচেতন হতে হবে এবং জনগণকে সচেনতা বৃদ্ধি করতে হবে।বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় জলাশয়, হাওর, বিল, ছোট বড় ২৫০-৩০০ খাল উদ্ধার করতে হবে। ছোট বড় বিলগুলোকে কোন অবস্থায় পানি বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। নদীতে পানির নিস্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। পুরাতন খালগুলোক খনন করতে হবে। আঁড়িয়ালবিল কুঠাবাড়ী , বাহ্রা, কৈইলাল, খৈশ্শার বিল, হরিকুলের বিল সহ আরো ছোট বড় বিলের সাথে ইছামতির পানি নিস্কানের ব্যবস্থা করতে হবে- যাহাতে বৃষ্টিসহ ঢলের পানি ইছামতিতে গড়িয়ে পড়ে। েইছামতিকে খননের ব্যবস্থা করতে হবে। খননের পাশপাশি নদী পরিস্কার ও দখলমুক্ত রাখতে হবে। ইছামতির বেশ কয়েকটি মুখে সুইন্স গেটের ব্যবস্থা করতে হবে। কার্তিকপুর, কলাকোপা, কাশিয়াখালী দোহার অভিমুখে সুইন্স গেটের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে যে খালগুলো ইছামতির সাথে সংযুক্ত ছিলো তাকে উদ্ধার করে নদীর সাথে সংযুক্ত করতে হবে- যাহাতে শুস্ক মৌসুমেও ইছামতিতে পানি প্রবাহ থাকে। ইছামতির সাথে ধলেশ্বরী ও কালিগঙ্গা নদীকেও নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে- তাহলে পানি প্রবাহ টেকসই হবে। শুধু ইছামতি খনন এবং সুইন্স গেট লাগালে ইছামতির যৌবন ফিরিয়ে আনা সম্ভবপর হবে ন।

অন্য খবর  দেশখ্যাত সুরকার, দোহারের গর্ব সেলিম আশরাফ আর নেই

গভীর নলকুপে বন্ধ করে নদীর মাধ্যমে কৃষকের সেচকায পরিচালনা করতে হবে। জায়গায় জায়গায় বাঁধ দিয়ে পানির গতিরোধ করা যাবে না। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। মাছের পরিমান বৃদ্ধি পেলে জীব বৈচিত্র বৃদ্ধি পাবে এবং জীব বৈচিত্র বৃদ্ধি পেলে গাছ গাছলার পরিমান বৃদ্ধি পাবে। এই অঞ্চলটি সবুজে শ্যামলে ভরে উঠবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে। নদী তীরবর্তী মানুষগুলো আবার ফিরে পাবে তাদের হারানো জীবকা।

ইছামতি নিয়ে এই কমযজ্ঞ শুরু হোক, তরুনরা এগিয়ে আসুক, সামাজিক সংগঠনগুলো জনগণকে সচেতন করে তুলোক- কৃষক ও মৎসজীবীরা আবার ফিরে পাক তাদের হারানো ্ঐহিত্যকে- এই কামনাই করছি।

আপনার মতামত দিন