বিশিষ্ট শিল্পপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেছেন, ১৯৭১ সালে আমরা যদি স্বাধীন না হতাম তাহলে আমার মতো, আমাদের মতো অনেকেই শিল্পপতি হতে পারতাম না। বড় বড় শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে পারতাম না। বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল বলেই আজ আমরা গর্বিত জাতি হিসেবে বিশ্ব-দরবারে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বলেই আজ আমরা শিল্পপতি হিসেবে এ দেশের অগ্রগতির চাকাকে সমুন্নত রাখতে পারছি।
শনিবার সকালে গুলশান পার্কে মহান বিজয় দিবসের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বিজয় দিবসের ৪৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গুলশান হেলথ ক্লাব।
আলোচনা সভার আগে পার্কের অনুষ্ঠানস্থলে জাতীয় ও ক্লাব পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন গুলশান হেলথ ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম।
যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশ স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। তার (বঙ্গবন্ধু) নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল বলেই আজ আমি টিভি মিডিয়ার মালিক হতে পেরেছি। পেরেছি যমুনা গ্রুপের মতো এত বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়তে। আজ আমি শিল্পপতি। এজন্য আমি শ্রদ্ধাভরে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
গুলশান হেলথ ক্লাবের সভাপতি আলহাজ এম এ কাদের খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, সহ-সভাপতি আলহাজ মো. নাজির মিয়া, আজমল হোসেন।
আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আলম স্বপন এবং অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ক্রীড়া সংগঠক আমিনুল ইসলাম বাবু।
আজ থেকে ৪৬ বছর আগে ১৯৭১ সালে আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম জানিয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, ৩০ লাখ শহীদ ও ৩ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা লাল-সবুজের একটি পতাকা পেয়েছি। সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ তথা বাঙালি জাতি হিসেবে পরিচয় পেয়েছি। এসবই অর্জন হয়েছে আমাদের বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে।
তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে চলছে, দেশে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশে আরও উন্নয়ন হবে। ইনশাল্লাহ একের পর এক উন্নয়ন চলবে।
দেশপ্রেমে সবাইকে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, শুধুমাত্র বিশেষ দিনে মহান নেতাদের কথা স্মরণ করা হয়। এরপর সবাই ভুলে যায়। ১৬ ডিসেম্বরের পর ১৭ ডিসেম্বর সবকিছু ভুলে যান। ২১ ফেব্রুয়ারির পরের দিন কেন যেন সবাই চেতনার কথা ভুলে যায়। ভুলে যাওয়া নয়, দেশপ্রেম নিয়েই দেশে বেঁচে থাকতে হবে। দেশের উন্নয়ন করতে হবে।
দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্য করে নুরুল ইসলাম বলেন, ওরা কথা দিয়ে কথা রাখে না। নিজের স্বার্থ থেকে এক পা-ও নড়তে চায় না। ওরা রাতে করে কালোবাজারি, ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ার মার্কেট লুট, আর দিনে বলে গরিবের কথা। আমাদের স্বাধীন দেশে দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। দেশ আরও এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। অনেক পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমরা কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাতে পারছি না।
তিনি বলেন, যারা কথা দিয়ে কথা রাখে না, তারা দিনে যেমন ষড়যন্ত্র করে রাতেও ষড়যন্ত্র করে। তাদের চিন্তা কী করে অবৈধভাবে নিজের সম্পদ বানাবে, আর সাধারণ মানুষের মাঝে, গরিব মানুষের মাঝে বড় বড় কথা বলবে।
সবাইকে স্বাধীনতার শক্তির পক্ষে থাকার আহ্বান জানিয়ে যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, সময় এসেছে নিজের অধিকার নিজে আদায় করে নিতে হবে। নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশের জন্য কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার পক্ষে থাকতে হবে। স্বাধীনতার শক্তিকে সমর্থন জানাতে হবে। স্বাধীনতার শক্তির পক্ষে থাকতে হবে। তবেই আমাদের জীবন অর্থনৈতিকভাবে পরিপূর্ণ হবে। ইনশাল্লাহ আমাদের স্বপ্ন একদিন বাস্তবায়িত হবে। আমরা গোটা পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব।
শিল্পপতি নুরুল ইসলাম বলেন, সিঙ্গাপুর আমাদের বাংলাদেশের থেকে ৬ বছর আগে স্বাধীনতা লাভ করেছে। সিঙ্গাপুরে আজ মাথাপিছু আয় ৬৫ হাজার ডলার। আর আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬০০ ডলার। আমরা যদি কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ হাজার ডলারে যেতে পারতাম, তাহলে আমাদের এ অবস্থা আর থাকত না। আমাদের সম্পদ মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে রয়েছে। এখন যদি আপনারা গ্রামে যান, গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলোর দিকে তাকান, তাহলে বুঝতে পারবেন বৈষম্যটা কী। আমাদের দেশে বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে।
প্রয়াত মেয়র আনিসুল হককে স্মরণ
আলোচনা সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হককে স্মরণ করে যুমনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, আজ এখানে দাঁড়িয়ে যখন বক্তব্য দিচ্ছি, তখন আমার বিশেষ বন্ধুর কথা মনে পড়ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক আমার বিশেষ বন্ধু ছিলেন। আমরা একে অপরের ভালো বন্ধু ছিলাম। সেই বন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই, আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন, আমরা এই দোয়াই করি।
আনিসুল হককে স্মরণ করতে গিয়ে এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন নুরুল ইসলাম। কিছু সময় দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন তিনি।
গুলশান হেলথ ক্লাব তথা ক্লাবের এই পার্কের জন্য আনিসুল অনেক কিছু করে গেছেন উল্লেখ করে বিশিষ্ট এই শিল্পপতি বলেন, আমি বন্ধু আনিসুলকে বলেছিলাম, বন্ধু তুমি আমার ক্লাব তথা ক্লাবের পার্কের জন্য কিছু করে দাও। বন্ধুকে আমি বলেছিলাম, বন্ধু ঢাকার এই গুলশান, বনানী, বারিধারার মানুষ তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তোমাকে আপন ভাবে। তুমি আগামীতেও মেয়র হবা। এখানকার মানুষ তোমার পক্ষে রয়েছে। আমার বন্ধু কথা দিয়েছিলেন এবং আমার এ বন্ধু কথা রেখেছেনও। আমাদের ক্লাবের জন্য বন্ধু আনিসুল হক ২০ কোটি টাকা দিয়ে গেছেন। আমরা সেই টাকা দিয়ে পার্কের উন্নয়ন করব। ভবন বানাব। দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। এ পার্ক ও ক্লাবের ভবন অত্যাধুনিক হবে।
সবশেষে দেশকে ভালোবাসার আহ্বান জানিয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা সবাই এ দেশের সন্তান। আমরা মুক্তিযোদ্ধা, আমাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান রয়েছে। আমরা এ দেশকে আরও সুন্দর করে গড়ে তুলব। দেশে দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে, এ উন্নয়নের সুফল আমরা পাচ্ছি এবং পাব।
সভাপতির বক্তৃতায় আলহাজ এম এ কাদের খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আমরা চলছি। তার আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ আজ সবক্ষেত্রে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
যুদ্ধদিনের কথা স্মরণ করে কাদের খান বলেন, আমি যখন যুদ্ধে তখন আমার খোঁজ নিতে আসে পাকিস্তানি বাহিনী, আলবদর ও রাজাকার বাহিনী। আমাকে না পেয়ে তারা আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের ওপর নির্যাতন চালায়। আমার খোঁজ না দেয়ায় আমার দুই চাচাতো ভাইকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। তাই মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরব, অহংকার।
আলোচনা সভা শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কণ্ঠশিল্পী রুমানা ইসলামসহ দেশবরেণ্য শিল্পীরা অনুষ্ঠানে গান পরিবেশ করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে ক্লাবের সদস্যরা আবৃত্তি করেন। আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ক্লাবের সদস্য, সদস্যদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত দিন