মুমিনদের সহজ পথ অনুসরণের নির্দেশ

29
মুমিনদের সহজ পথ অনুসরণের নির্দেশ

ইসলাম পৃথিবীর সহজতম ধর্ম। ব্যক্তিগত অশিক্ষা, অপশিক্ষা, অর্ধশিক্ষা, ব্যাখ্যা এবং রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় অনেকে ইসলামকে পৃথিবীর কঠিনতম ধর্মে পরিণত করছে। তাদের কি অন্তরে রূঢ়তা পেয়েছে? মহান আল্লাহ বলেন, ‘…তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে, তা তো পাথরের মতো অথবা তার চেয়েও কঠিন…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৭৪)

মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি।

ইসলাম কখনোই জটিল বা কঠিন নয়। পবিত্র কোরআনের বাণী—‘তোমাদের পক্ষে যা সহজ আল্লাহ তা-ই চান এবং তোমাদের পক্ষে যা কষ্টকর তা তিনি চান না…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

ইসলাম মানুষের মুক্তি, কল্যাণের পথ দেখায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমার ওপর কোরআন এ জন্য নাজিল করিনি যে তুমি দুঃখ-কষ্ট ভোগ করবে।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১-২)

তিনি আরো বলেন, ‘তিনি (আল্লাহ) দ্বিনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৭৮)

সত্য উপলব্ধিতে অক্ষম-অযোগ্যরাই ইসলাম নিয়ে বিরোধ-বিভ্রান্তি ছড়ায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘একদল লোককে তিনি সঠিক পথ দেখিয়েছেন, আর দ্বিতীয় দলটির ওপর গোমরাহি ও বিদ্রোহ ভালোভাবেই চেপে বসেছে; এরাই (পরবর্তী সময়ে) আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানদের নিজেদের অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে, (তবু) তারা নিজেদের সৎপথপ্রাপ্ত মনে করে।’ (সুরা : আল আরাফ, আয়াত : ৩০)

অন্য খবর  অস্ট্রেলিয়াতে বৈষম্যের শিকার মুসলিমরা

ইসলাম সব সময় সহজ ও মধ্যপন্থায় বিশ্বাসী। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, দ্বিন (দ্বিনের বিধি/পন্থাসমূহ) অত্যন্ত সহজ ও সরল। কিন্তু যে ব্যক্তি দ্বিনের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করবে সে পরাজিত হবে…। (বুখারি)

প্রিয় নবী (সা.) আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.)-কে একদিন বলেন, আমি কি এটা ঠিক শুনেছি যে তুমি প্রতিদিনই রোজা রাখো এবং সারা রাত সালাত আদায় করো? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসুল (সা.)। তখন রাসুল (সা.) বলেন, তা কোরো না। রোজা রাখবে। আবার খানাপিনাও করবে। সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়াবে; আবার ঘুমাবেও। কারণ, তোমার ওপর তোমার দেহের অধিকার আছে; তোমার ওপর তোমার চোখের অধিকার আছে; তোমার স্ত্রীর অধিকার আছে তোমার ওপর; তোমার অতিথিরও অধিকার আছে তোমার ওপর। (বুখারি)

মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, অযথা কঠোরতা অবলম্বনকারীরা ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি এ কথাটি তিনবার বলেছেন। (মুসলিম)

হটকারিতা, গোপন কূটকৌশল ইসলামের দর্শন নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমার রবের পথে প্রজ্ঞার সঙ্গে এবং উত্তম উপদেশের মাধ্যমে (মানুষকে) আহ্বান করো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২৫)

শুধু কি তা-ই, জীবনের সব ক্ষেত্রে বিপর্যয় মোকাবেলার উপায় হলো ঐক্য-সংহতি। মুসলিম ভ্রাতৃত্ব, ঐক্যকে পবিত্র কোরআনে ‘সিসা ঢালা প্রাচীর’, ‘বুনিয়ানুম মারসুস’ বলা হয়েছে। হাদিসে এ চেতনাকেই ‘এক দেহ’ ‘এক সৌধ’ ‘একই আদমের সন্তান’ তুল্য বলা হয়েছে। তাই ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের কারণে বৃহত্তম ঐক্যের বিনাশসাধন ইসলামের শিক্ষা নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে (বিধান, রহমত) দৃঢ়তার সঙ্গে ধারণ করো, তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যেয়ো না।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ১০৩)

অন্য খবর  কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত

বস্তুত ইসলাম শান্তির ধর্ম, বিশ্বধর্ম। সারা দুনিয়া মুসলমানের ইবাদতের গালিচাস্বরূপ। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, সহজ করো, কঠিন কোরো না; সুসংবাদ জানিয়ে আহ্বান করো, ভীতি প্রদর্শন করে তাড়িয়ে দিয়ো না। (বুখারি)

কাজেই অনাচার অনৈক্য পরিহার করা আমাদের সংকল্প। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘আমি নির্দেশ দিচ্ছি দলগত জীবন, নেতার আদেশ শ্রবণ ও আনুগত্যের…।’ (ভাবানুবাদ : তিরমিজি)

লেখকঃ মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ

আপনার মতামত দিন