‘মহাবিপদ’ সংকেত বলতে যা বোঝায়

85

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে নদী ও সমুদ্রবন্দরগুলোতে ১ থেকে ১১ পর্যন্ত সতর্ক সংকেত দেখানো হয়। যদিও আবহাওয়া বিভাগ উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্যও সতর্কতা হিসেবে একই সংকেত ব্যবহার করে। এই সংকেতগুলোর প্রতিটির পৃথক পৃথক অর্থ রয়েছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর কারণে উপকূলীয় ৯টি জেলায় ১০ নম্বর ‘মহাবিপদ’ সংকেত দেখানো হচ্ছে। এই মহাবিপদ সংকেত বোঝাতে তিনটি লাল পতাকা ওড়ানো হয়। এর মানে হচ্ছে, প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে এবং ঘূর্ণিঝড়টি খুব কাছ দিয়ে, অথবা সরাসরি ওপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গবেষকরা জানান, সংকেতগুলো তৈরি করা হয়েছে শুধু সমুদ্রবন্দর এবং নদীবন্দরকে লক্ষ্য করে। এই সংকেত জনসাধারণের জন্য নয়। কোন দিক থেকে বাতাস বইছে, আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ হচ্ছে এবং বিপদ আরও বাড়ছে কিনা, তা বোঝা যায় এসব সংকেতের মাধ্যমে। তবে বন্দর এলাকা ছাড়াও উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথের মধ্যে থাকা জেলাগুলোর স্থানীয় প্রশাসন এসব সংকেত দেখে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ১ নম্বর হচ্ছে দূরবর্তী সতর্ক সংকেত, ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত, ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত, ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত, ৫, ৬ ও ৭ বিপদ সংকেত, ৮, ৯ ও ১০ মহাবিপদ সংকেত এবং ১১ ঘূর্ণিঝড়ের প্রচণ্ডতার কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

অন্য খবর  রাজধানীর মগবাজার মোড়ে ককটেল বিস্ফোরণ

৮ থেকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ও ১১ নম্বর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার সংকেত বোঝাতে তিনটি লাল পতাকা ওড়ানো হয়ে থাকে। ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের অর্থ— প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় হবে এবং বন্দরের আবহাওয়া খুবই দুর্যোগপূর্ণ থাকবে। ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণ দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে (মোংলা বন্দরের বেলায় পূর্ব দিক দিয়ে)।

৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের অর্থ হলো— প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের উত্তর দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে (মোংলা বন্দরের বেলায় পশ্চিম দিক দিয়ে)।

১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের অর্থ প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে এবং ঘূর্ণিঝড়টি বন্দরের খুব কাছ দিয়ে, অথবা ওপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

১১ নম্বর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার সংকেতের অর্থ হচ্ছে— ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তার বিবেচনায় চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান  জানান, ‘সতর্ক সংকেতগুলো মূলত বন্দরের জন্য। ৮ নম্বর মানে ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণ দিক দিয়ে যাবে, ৯ নম্বর মানে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের উত্তর দিক দিয়ে যাবে, ১০ নম্বর মানে ঝড় সরাসরি আঘাত হানবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য এগুলো সতর্কতার বার্তা বহন করে। স্থানীয় প্রশাসন আন্দাজ করে নেন ঝড়ের প্রকৃতি কেমন হতে পারে এবং জলোচ্ছ্বাস কতটুকু উঁচু হতে পারে। ফলে সংকেত বুঝে তারা আগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেন।’

অন্য খবর  শপথ নিলেন নবনির্বাচিত এমপিরা

এ বিষয়ে খুলনা আবহাওয়া অফিসের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানিয়েছেন, ‘সমুদ্র বন্দরের জন্য ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা করা হয়েছে। নদী বন্দরের জন্য তিন নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত রয়েছে। মোংলা ও পায়রা বন্দর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুর ও এর আশপাশের এলাকার জন্য ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। সংকেত অনুযায়ী ঝড়ের প্রভাব আন্দাজ করে স্থানীয় প্রশাসন এবং এলাকাবাসী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

আপনার মতামত দিন