বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ও তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) বা জাতীয় জোট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। ৩২টি দলের সমন্বয়ে গঠিত এই জোটের পক্ষে ৫৭ প্রার্থীর তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমাও দেওয়া হয়েছে। তবে ‘প্রধানমন্ত্রীর সুবিবেচনা’ ও যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে কমপক্ষে ২৫টি আসনে ছাড় পাবে বলে আশা করছে জোটটি।
যেসব আসনে সমঝোতা চায় বিএনএ :প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী বিএনএ ও তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঢাকা-১ ও ঢাকা-১৭ আসনের মনোনয়ন চেয়েছেন।
একইভাবে বিএনএর কো-চেয়ারম্যান ও বিএলডিপির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ যশোর-৪; মহাসচিব ও বাংলাদেশ জাগো বাঙালির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমান খুলনা-৩ ও খুলনা-৪; সাংগঠনিক সম্পাদক ও তৃণমূল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আক্কাস আলী খান মুন্সীগঞ্জ-১; সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা কুমিল্লা-২; খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক ও বিএলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোল্লা মুজিবুর রহমান খুলনা-৩ এবং রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক ও রাজশাহী মহানগর বিএলডিপির আহ্বায়ক অধ্যাপক সরদার সিরাজুল করিম (এবল) রাজশাহী-৪ আসনে নির্বাচন করতে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন চাইছেন।
এই জোটের অন্যতম প্রধান শরিক তৃণমূল বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরও মনোনয়ন চাইছেন দলটির কো-চেয়ারম্যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম রাজবাড়ী-১; মহাসচিব ব্যারিস্টার আকবর আমীন বাবুল কুমিল্লা-৩; সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আরিফ মাঈন উদ্দিন চট্টগ্রাম-৯; জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন মানিকগঞ্জ-২; সাবেক সংসদ সদস্য মজহারুল হক শাহ চৌধুরী চট্টগ্রাম-২; ড. জাভেদ সালেহ উদ্দিন ফরিদপুর-১; ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কে এ জাহাঙ্গীর মাজমাদার ঝিনাইদহ-১; আবেদ আলী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২; চলচ্চিত্রাভিনেতা আহম্মেদ শরীফ কুষ্টিয়া-৩; এল কে চৌধুরী লক্ষ্মীপুর-২; অধ্যাপক শাহজাহান সাজু ফেনী-২; অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম ঢাকা-১৯; যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শামসুদ্দিন ছিদ্দিকী (মুন্না শাহ) চট্টগ্রাম-৯; জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এম খালেক কুষ্টিয়া-১; চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক হাসান সিকদার চট্টগ্রাম-৮; চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদুল আলম বাবলু অথবা অ্যাডভোকেট সাইফুল আলম মাসুদ চট্টগ্রাম-৫ আসন এবং ডা. শাহনাজ আলম চট্টগ্রাম-১ আসন।
আরেক শরিক বিএলডিপির কো-চেয়ারম্যান সোহরাব উদ্দিন ঢাকা-৪; মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন খান নরসিংদী-২; উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য আক্তার উজ জামান বাবুল ফরিদপুর-৪; সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি চুয়াডাঙ্গা-১; প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান স্বাধীন রাজশাহী-৩; মীর মহি উদ্দিন আলমগীর নওগাঁ-৬; টিপু সুলতান বগুড়া-৫; ভাইস চেয়ারম্যান আল মামুন সেলিম আর রশিদ (মায়া রাজ) লালমনিরহাট-২; যুগ্ম মহাসচিব শাহ মোহম্মদ মাশরেকুল হারুন (জুয়েল) দিনাজপুর-৬; অতিরিক্ত মহাসচিব এ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম কুষ্টিয়া-৩; সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আমিরুল ইসলাম মনা কুষ্টিয়া-২; বগুড়া জেলা সভাপতি আইয়ুব আলী বগুড়া-৩; বাগেরহাট জেলা সভাপতি মোশারফ হোসেন বাগেরহাট-৩; রাজশাহী জেলা সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান রাজশাহী-৫; মোহাম্মদ আবদুল হান্নান রাজশাহী-১; কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সাঈদ মাহমুদ মোরশেদ ময়মনসিংহ-১০; এ কে এম মহিউদ্দিন আযম তালুকদার চট্টগ্রাম-২; খলিলুর রহমান বগুড়া-৬ এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ইসমাত জেরিন খান পাবনা-২ আসন।
এছাড়া এই জোটের পক্ষে প্রগতিশীল ন্যাপের (ভাসানী) চেয়ারম্যান হামিদুর রেজা খান ভাসানী (পরশ ভাসানী) টাঙ্গাইলের একটি; কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) চেয়ারম্যান মাহবুব আলম বরিশাল-৩, চাঁদপুর-৪ ও চাঁদপুর-৫; বাংলাদেশ মাইনরিটি ইউনাইটেড ফ্রন্টের চেয়ারম্যান দিলীপ দাশ গুপ্ত ঢাকা-৬; বাংলাদেশ গণজাগরণ পার্টির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম হায়দার লালমনিরহাট-২; সম্মিলিত নাগরিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ম্যানুয়েল সরকার গাজীপুর-৫; বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টির (বিএমপি) চেয়ারম্যান ডা. আফরোজা বেগম হ্যাপি মুন্সীগঞ্জ-১; দেশরক্ষা আন্দোলনের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ওয়ারেসুল হাসান টাঙ্গাইল-৪; বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলনের চেয়ারম্যান আশরাফ আলী হাওলাদার পটুয়াখালী-৩; আবদুল মান্নান চৌধুরী কুমিল্লা-১৪; জাতীয় গণতান্ত্রিক দলের (জাগোদল) চেয়ারম্যান রাকিবুর রহমান খান চৌধুরী (লিটন খান চৌধুরী) কুষ্টিয়া-৪; বাংলাদেশ আওয়ামী পার্টির চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ সিকদার ঢাকা-১৮ এবং কৃষক শ্রমিক পার্টির (কেএসপি) চেয়ারম্যান সালাম মাহমুদ পিরোজপুর-১ ও মহাসচিব ড. মোজাহেদুল ইসলাম মুজাহিদের জন্য বাগেরহাট-৩ আসন চাওয়া হয়েছে।
এই জোটের প্রধান নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা তৃণমূল বিএনপি ছাড়াও এ জাতীয় জোটের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন। বেশ কিছুদিন থেকেই জোটটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের ‘সহযোগী জোট’ হিসেবে কাজ করে আসছে। এর আগে থেকে তারা ১৪ দলীয় জোটে সরাসরি যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে এলেও ক্ষমতাসীন জোটটির বর্তমান শরিক দলগুলোর তীব্র আপত্তির মুখে সম্ভব হয়নি। আদর্শগত অমিল থাকায় তাদের সঙ্গে জোট শরিক হিসেবে কাজ করতে আপত্তি রয়েছে ১৪ দল শরিকদের। তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোট হিসেবে মহাজোটে বিএনএকে যুক্ত করা হলে আপত্তি নেই তাদের। এ অবস্থায় গত ১৮ জুলাই তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান নাজমুল হুদাসহ নয়টি দলের নেতারা (যাদের বেশিরভাগ দল বিএনএ জোটেও আছে) ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহের কথা জানান।
বিএনপি ছেড়ে ২০১২ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সহসভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। ২০১৩ সালে বিএনএফ ছেড়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে আরেকটি দল গঠন করেন। পরে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আরও ২৯টি দলকে সঙ্গে নিয়ে বিএনএ জোট গঠন করেন তিনি। নভেম্বরে তৃণমূল বিএনপি গঠন করে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এর চেয়ারম্যান হন। পরে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর দৌহিত্র হামিদুর রেজা খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল ন্যাপ (ভাসানী) এই জোটে যুক্ত হলে জোটের মোট দলসংখ্যা দাঁড়ায় ৩২টি।
এ ব্যাপারে বিএনএ চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সমকালকে বলেন, বিএনএ জোট হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক প্রকৃত জাতীয়তাবাদী জোট। যাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি থেকে সাম্প্রদায়িকতাকে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করে সুস্থ রাজনীতির ধারা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্য থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চান তারা।
সূত্রঃ সমকালঃ