মশা নিয়ন্ত্রণে ড. কবিরুল বাশারের মত ও পরামর্শ পালনের নির্দেশ হাইকোর্টের

58

মশা বা মশাবাহিত রোগের সমস্যা কেবল হযরত ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা সিটি করপোরেশন এলাকার সমস্যা না। সমস্যাটি সারা দেশের। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই সমস্যা আরো বাড়বে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদ, গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক কবিরুল বাশার। বিমানবন্দর এলাকার মশা নিয়ন্ত্রণের উপায় নিয়ে হাইকোর্টে উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে তিনি এ মত দিয়েছেন। রবিবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক–আল জলিলের দ্বৈত বেঞ্চে তিনি নিজেই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

এদিন আদালতে আরো উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ পেয়েছেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান। পরে আজ সোমবার আদালত আদেশ দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মশা ও মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ১৯৭৫ সালে ভেকটর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টার (ভিসিআরসি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত আধুনিক ও যুগোপযোগী। বাংলাদেশে এমন একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি হলে বাহক বাহিত রোগ ও বাহক মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত কীটনাশক, যন্ত্রপাতি এবং এর রোগতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করা যাবে।

অন্য খবর  এক কিলোমিটার দৌড়ে ছিনতাইকারীকে ধরলেন দোহারের এসি ল্যান্ড সালমা খাতুন

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান তৈরি করলেই হবে না, এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দিতে হবে কীটতত্ত্ববিদদের হাতে। প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব অভিজ্ঞদের হাতে না দিলে তা অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ নিবে।

দেশে ১২৬ প্রজাতির মশা, ঢাকায় ১৬ প্রজাতিরঃ 

কবিরুল বাশারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে এখন পর্যন্ত ১২৬ প্রজাতির মশা সনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকায় শনাক্ত হয়েছে ১৬ প্রজাতির মশা। আর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাওয়া গেছে ৯ প্রজাতির মশা। এগুলো হচ্ছে- কিউলাস কুইনকিউফেসিয়েটাস, কিউলেক্স ট্রিটাইনায়োরিঙ্কাস, কিউলাস গেলিডাস, এডিস ইজিপটি, এডিস অ্যালবোপিকটাস, ম্যানসোনিয়া অ্যানুলিফেরা, ম্যানসোনিয়া ইউনিফর্মিস, আর্মিজেস সাবলবাটাস, টক্সোরিঙ্কাইটস স্প্লেডেনস।’

বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ প্রয়োজনঃ

এ কীটতত্ত্ববিদ তার প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘প্রজাতি ভেদে মশার প্রজনন স্থল, প্রজনন ঋতু ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভিন্ন। তাই মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতার জন্য এর জীবনাচরণ সম্পর্কে জানা দরকার। মশার বায়োলজি, ইকোলজি, স্বভাব পর্যালোচনা করে এর নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ প্রয়োজন।’

বিমানবন্দর এলাকায় মশার প্রজনন স্থল হিসেবে দুটি বড় খাল, ছোট-বড় পাঁচটি জলাশয়, খোলা ড্রেন, পরিত্যক্ত টায়ার, ছোটো-বড় বিভিন্ন ধরনের পাত্র, গাছের কোটর এবং বিমানবন্দর ঘিরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ড (১, ১৭, ৪৯, ৫০ ও৫২), এয়ারফোর্স এরিয়া, প্রিয়াঙ্কা হাউজিং ছাড়াও রাজউকের কিছু জায়গার কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

অন্য খবর  দোহারে মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন

প্রতিবেদনে এ শিক্ষক বলেছেন, ‘যেহেতু মশা চার কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে, তাই বিমান বন্দরকে মশামুক্ত করতে হলে এর চারপাশে চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মশার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তার জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। কাজটি করা কঠিন নয়।’

বিমানবন্দর এলাকার চারপাশে চার কিলোমিটার এলাকা মশামুক্ত রাখা নিয়ে ‘আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য প্রবিধান’র বিভিন্ন বিধি ও ৮টি সুপারিশ প্রতিবেদনে তুলে ধরেন এই গবেষক।

আদালতে রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ নিজেই শুনানি করেন। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ -বেবিচকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাইফুর রশীদ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রিমি নাহরীন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

আপনার মতামত দিন