ঢাকার দোহার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের শত একর জমিসহ প্রায় চারশত ঘরবাড়ী পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে আবাদী ফসল, পনিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার গাছপালা ও শত শত ঘরবাড়ী। কিছু কিছু ঘরবাড়ী অন্যত্র সরানো গেলেও যাদের পরিবারে পুরুষ লোকজন নেই তারা পাদ্মার হাত থেকে কিছুই রক্ষা করতে পারেনি । সরকারের আছে কোটি কোটি টাকার প্রজেক্টের নানান প্রতিশ্রুতি। বাস্তবে কিছুই পাচ্ছে না পদ্মার ভাঙ্গন কবলিত এলাকার অবহেলিত মানুষ। এ যেন এক নীরব বোবা কান্না।
এলাকাবাসীর ধারনা ভাঙ্গন প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অচিরেই উপজেলার নয়ারাড়ী, কুসুমহাটি, মাহমুদপুর, বিলাশপুর ও বিলাসপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম পদ্মায় গিলে ফেলবে। পদ্মার তীর ঘেষে গড়ে উঠা এই ৫টি ইউনিয়নের ভাঙ্গনের ফলে অনেকটা বদলে গেছে দোহারের মানচিত্র। ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে দোহারের আয়তন ও ভৌগলিক অবস্থান।
কয়েকদিন ধরে পদ্মার পানি বৃদ্ধি, প্রচন্ড স্রোতে ও উত্তাল ঢেউয়ের কারণে দোহার উপজেলার সুতারপাড়া, বিলাসপুর, মাহমুদপুর, কুসুমহাটি ও নয়াবাড়ী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ভাঙ্গন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
গত বিশদিনে সুতারপাড়া ইউনিয়নের মধুরচর ও বিলাশপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর, চর বিলাসপুর, আলীনগর গ্রামের চার শতাধিক ঘরবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মার ভাঙ্গনে এ বছর নয়াবাড়ী, মাহমুদপুর ও কুসুমহাটি ইউনিয়নের অনেক পরিবার সর্বস্ব হারিয়েছে। তবে দোহার উপজেলা প্রশাসনের কাছে এধরনের কোন তথ্যই নেই।
একমাত্র সম্বল ভিটে-মাটি ও মাঠের ফসলী জমি হারিয়ে কান্না আর আহাজারিতে দিশেহারা দোহার উপজেলার পদ্মা পারের মানুষ। ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলো কোথায় থাকবে সেটা তারা জানে না। মাথা গুজার ঠাই না পেয়ে অনেকে মধুরচর রেজিঃ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে সেই বিদ্যালয়টিও নদী গর্ভে বীলিন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকে আবার সহায় সম্বল নিয়ে উপজেলার আড়িয়াল বিল এলাকার দুবলী গ্রামে চলে গেছে। গত কয়েকদিনের অব্যাহত ভাঙ্গন হলেও তাদের সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা উপজেলা প্রশাসনের কেউ খোঁজ নিতে আসেনি বলে অভিযোগ করেন বিলাসপুরের আঃ মান্নান মুন্সি (৬৭)।
ভাঙ্গনের শিকার মধুরচর মধুরচর গ্রামের জরিনা বেগম (৫৯) বলেন, পদ্মার ভাঙ্গনে আমরা ভিটা-মাটি হারাইয়া রাস্তায় পইড়া গেলাম বাবা, কেউ তো আমাগো দেখতে আইলো না। আমারা এহন খোলা আকাশের নিচে দশদিন ধইরা পইরা আছি।
নয়াবাড়ীর নান্নু মিয়া (৫০) ঘরদরজা সরানো কাজে ব্যস্ত। তিনি বলেন, এই গ্রাম আওয়ামী লীগের ঘাটি। আমার আওয়ামী লীগ করতে করতে জীবন গেল। এই সাড়ে ৪ বছরের মধ্যে আমাদের সাথে আমাগো এমপি ও মন্ত্রী (আব্দুল মান্নান খান) দেখা করতেও আসে নাই। অসহায় মানুষের বর্তমানে থাকার জায়গাও নেই। তিনি ভিটেহারা মানুষ গুলোকে আশ্রয় দিতে সরকারের প্রতি দাবী জানান।
বিলাশপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা বলেন, গত ২০দিনে আমার ইউনিয়নের ৩টি মৌজার শত একর জমিসহ প্রায় তিনশত ঘরবাড়ী পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। আমার সাদ থাকলেও কিছুই দেয়ার সাধ্য নেই ভাঙ্গন কবলিত মানুষদের।
পদ্মার ভাঙনে দোহারের মানচিত্র বদলে যাচ্ছে
আপনার মতামত দিন