রুপকথায় অনেক গল্প হয়, সে-সব গল্পে আছে দৈত্য-দানবের কথা আবার আছে প্রজানিষ্ঠ শাসকের কথা। ঢাকা-১ আসন, দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলা। আর দোহার উপজেলার প্রাণকেন্দ্র জয়পাড়া পৌরসভা। সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রধান মাধ্যম স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মাধ্যম হচ্ছে পৌররসভা। একসময়ের জয়পাড়া ইউনিয়নের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম মিয়া এখানকার পৌরপিতা। কিন্তু আব্দুর রহিম মিয়ার বিরুদ্ধে যখন জুতা-ঝাড়ু মিছিল হয়, পৌর অফিসে তিনি অবরুদ্ধ হন তখন রুপকথার অনেক খলনায়কের কথা মনে আসে জনসাধারণের মনে।
দোহার উপজেলার জয়পাড়া, রাইপাড়া ও সুতারপাড়া ইউনিয়নের অংশ নিয়ে ২০০০ সালে গঠিত হয় দোহার পৌরসভা। সে বছর ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছিল পৌরবাসী। গত ১৫ বছর পূর্বে নিবার্চন অনুষ্ঠিত হলেও এরই মাঝে কেটে গেছে এক যুগেরও অধিকাল। এলাকাবাসী আধুনিক যেসব সুযোগ-সুবিধা পাবে বলে আশা করেছিল তার কিছুই পাচ্ছে না। সীমানা জটিলতা ও নামকরণ নিয়ে আদালতে মামলা ঝুলে থাকায় আর কোনো নির্বাচনও হয় নি। এরই মধ্যে পৌরসভাটি ‘১ম শ্রেণী’তে উন্নীত হয়েছে। যদিও এই মামলার পিছনে বর্তমান পৌরমেয়রের হাত বলে অনেকের অভিযোগ।
পৌর বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌর এলাকার রাস্তাজুড়ে খানাখন্দে আর গর্তে ভরা। নেই প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পাবলিক টয়লেট, সুপেয় পানির সরবরাহ ব্যবস্থায়, ট্রাফিক, পরিচ্ছন্ন কর্মীর স্বল্পতা, অভাব স্বাস্থ্যকর্মীর। ডোবা নালায় পঁচা পানিতে মশা মাছির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় শুধু করের বোঝা বহন করছে পৌরবাসী। কোন নাগরিক বা জন্মসনদ পেতে হলে অপেক্ষা করতে হয় পৌর মেয়রের মন-মর্জির। সড়ক বাতি থাকলেও তা নিন্মমানের।
নিউজ৩৯ এর সরেজমিন পর্যবেক্ষণের পর পৌরফিস থেকে জানানো হয়, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে কর দাতার হার কম, তাই খুলে নিয়েছেন কোটি টাকা খরচ করে পৌরসভা থেকে লাগানো রাস্তার বাতি। শুধু কর আদায়ের হার কম বলে পৌরসভার এমন সিদ্ধান্তে হতবাক ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। অথচ লাখ লাখ টাকা ব্যায়ে পৌরভবনের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য পৌরসভার মনোরম গেট নির্মান করা হয়েছে। জনগণের অভিযোগ, পৌর মেয়রের নাগরিক সুযোগ সুবিধার বদলে এ কেমন আচরণ !! একদিক যেমন কোটি টাকা খরচ করে বাতিগুলা লাগানো হয়েছে ঠিক তেমনি আবার এখন লাখ টাকা খরচ করে বাতিগুলো খুলে এনে পৌরসভার গুদামে ফেলে নষ্ট করা হচ্ছে। মাঝখান থেকে পৌরসভার নিয়ন আলোতে নিরাপদে চলার পথ এখন রাতের আধারে হয়ে পড়েছে বিপদজনক। ফলে পূর্বে কিছু দিন চোরের উৎপাত না থাকলেও এখন আবার শুরু হয়েছে চোরের উৎপাত আর মাদকসেবীদের স্বর্গ রাজ্য; এতে যত্র-তত্র ছিনতাই, রাহাজানি ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
কয়েকটি কোটি টাকা খরচ করে দোহার পৌরসভার ৯ টি ওয়ার্ডে লাগানো হয়েছিল নিয়ন বাতি। নিম্ন মানের বাতি লাগানোর কিছুদিন পরই কিছু বাতি বিকল হয়ে পরে। তারপরও যা ও ছিল তা কিছুদিন পরই খুলে নিয়ে আসে পৌরসভা। দোহার পৌরসভার মেয়র আব্দুর রহীম মিয়ার বক্তব্য, এই সব ওয়ার্ডে কর আদায়ের হার কম, তাই পৌরসভার পক্ষে এই ওয়ার্ডের বাতির বিদ্যুৎ বিল দেয়া সম্ভব না। তাই পৌরসভা নিজ উদ্দ্যোগে বাতি খুলে এনেছে বলে জানান আব্দুর রহিম মিয়া। পৌরসভার ফান্ড কম বলে এই সব ওয়ার্ডের বাতি খুলে নেয়া হলেও ৪০ লাখ টাকা খরচ করে পৌরসভার গেট করা হচ্ছে যা আসলে জনগনের প্রত্যক্ষ কোন উপকারেই আসছে না।
পৌরসভার এই রাস্তার বাতি নিয়েও আছে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ। আর এই অভিযোগের বেশির ভাগ তীর গেছে পৌরসভা মেয়র আব্দুর রহীম মিয়া ও পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলীর দিকে। তাদের দিকে অভিযোগ তারা পৌরসভাকে পরিণত করেছে এক দুর্নীতির আড্ডা খানায়। কম দামে অতি নিম্ন মানের বাতি কিনে লাগানো হয়েছে। যা কয়েকদিন পরই নষ্ট হয়ে গেছে অনেক জায়গায়। নামে বাতি সারানোর কথা হলেও ১ থেকে ৬ নং ওয়ার্ডের অনেক জায়গারই সড়ক বাতি কোন কাজ করছে না। উল্টো এই সড়ক বাতির নামে ঐ এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে উল্লেখযোগ্য পরিমান অতিরিক্ত ট্যাক্স। ফলে সড়ক বাতি হয়ে দাড়িয়েছে গলায় কাটা। যার উপর ভিত্তি করে দোহার পৌরসভার ব্যাংকের একাউন্ট হচ্ছে ভারী, আর সুফল ভোগ করছে দোহার পৌরসভার হাতে গোনা কিছু মানুষ ।
পৌরসভার এই কার্যক্রম সম্পর্কে ঢাকা জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ মোল্লা বলেন, জনগনের জন্য পৌরসভার কাজ করার কথা থাকলে কোন এক অদৃশ্য কারণে পৌরসভা কেন যেন ট্যাক্সের পিছনে ছুটছে। পৌরবাসীর প্রতিটি বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে কেটে নিচ্ছে ৩০ টাকা। কিন্তু এর সুবিধা তারা পাচ্ছে না। যা খুবই দুঃখজনক।
পৌরসভা একটা এলাকার উন্নয়নের ছায়া বয়ে নিয়ে আসলেও দোহার পৌরসভা এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। প্রতিনিয়তই পৌরসভা দ্বারা শোষিত হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষ। যার আসল কোন প্রতিকার বর্তমান মেয়র আব্দুর রহিম সাহেবের নেই বলে মনে করেন এলাকার অধিকাংশ মানুষ। বয়সের ভারে নূজ্ব বর্তমান মেয়রের মেয়াদের অবসান হলে হয়তো আলোকিত হবে দোহার পৌরসভা অর্থাৎ পৌরসভার নিয়ন বাতি – এটাই মনে করেন অনেকে।