পদ্মায় বিলীন হাজারো ঘরবাড়ি: হারিয়ে গেলো চিরদিনের ঠিকানা

    1130

    বর্ষার শুরুতেই পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে দোহার উপজেলার কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি। সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় দুই হাজার পরিবার। ভাঙন আতংকে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীপারের মানুষজন। হারিয়ে যাচ্ছে চিরদিনের  বাপ – দাদার ঠিকানা।  এ অসহায় পরিবারগুলোর আশ্রয় এখন বিভিন্ন স্থানে। ভেঙ্গে যাচ্ছে পারিবারিক যৌথ পরিবার। কারও আশ্রয় মিলেছে আত্মীয়স্বজনের বাসায়, কারও আশ্রয় কেন্দ্রে, কেউ রাস্তার পাশে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।এসেছে নতুন ড্রেজার কিন্তু আতংক বা আশংকা কোনটাই দূর হয়নি এলাকাবাসীর। প্রতিদিনই ২/৪টি পরিবারকে দেখা যায় ঘর-বাড়ি ভেংগে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে।আবার কেউ বা গাজীপুর অথবা সাভারে জমি কিনে চলে যাচ্ছেন দোহার ছেড়ে। বিশেষ করে নারিশা ইউনিয়নের রানীপুর গ্রাম এখন সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে মেঘুলা বাজারসহ ওই এলাকার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।

    ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে আরও কয়েক হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি। এর ফলে ধীরে ধীরে দোহারের মানচিত্র থেকে অনেক গ্রাম হারিয়ে যাওয়ারও আশংকা রয়েছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মেঘুলা বাজারের দক্ষিণে রানীপুর গ্রামের ব্রিজটির অধিকাংশই পানির নিচে ডুবে আছে। স্থানীয়দের অভিযোগ কর্তৃপক্ষের আশ্বাস সত্ত্বেও নদী শাসনের কোনো পদক্ষেপ হলো না আজও। ২ বছরে প্রায় ২ হাজার পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অসহায় পরিবারগুলো সর্বস্ব হারিয়ে দুঃখে-কষ্টে জীবন কাটছে।

    অন্য খবর  নবাবগঞ্জে ৮৯ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত, মোট আক্রান্ত ১৫২

    নারিশা পশ্চিম চরের সুমন বলেন, গত বছরের অক্টোবরে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এব ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা সালমান এফ রহমান ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। কিন্তু পরিস্থিতি উত্তরণে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেই। ফলে নদীপারের মানুষের মধ্যে হতাশা ও আতংক কাজ করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নেতারা তাদের প্রয়োজনে ঠিকই আসেন। সান্ত্বনা দিয়ে যান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।

    নারিশা ইউপি চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন দরানী বলেন, বিভিন্ন অফিসে দৌড়াদৌড়ি করে নারায়নগঞ্জের বরফ কল এলাকা থেকে সরকারে সদ্য  ক্রয় কৃত আধুনিক ড্রেজার মেশিন আনা হয়েছে, এটি দিয়ে নদী খনন করে নাব্য করা হবে, বালু উত্তোলন করে জিও ব্যাগে ভরে ভাংগন প্রবণ অঞ্চলে ফেলা হবে। সবাই দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন নদী ভাংগন ঠেকিয়ে দেন।

    দোহার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীম আরা নিপা বলেন, নদী ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু হওয়ার কথা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসককেও অবগত করা হয়েছে।

    এদিকে উপজেলার নয়াবাড়ি ইউনিয়নের ভাঙনরোধে স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপির নিরন্তর প্রচেষ্টায় নদী শাসনের জন্য সরকার ২১৭ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকের সভায় পাস করে। যার কার্যাদেশ হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষেই কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। মাহমুদপুরের পুরুলিয়া থেকে নারিশা ইউনিয়নের পূর্বচর পর্যন্ত নদীপারের প্রায় ২টি গ্রাম পদ্মা ভাঙনের কবলে পড়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।

    আপনার মতামত দিন