তদবিরের প্রার্থীকে চাকরি না দেয়ায় লংকাকাণ্ড ঘটিয়েছেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম জালাল শিমু। তিনি শুধু নিজেই অশোভন আচরণ করেননি, দলীয় ক্যাডার বাহিনী দিয়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা পণ্ড করে দিয়েছেন। তার নির্দেশে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ছাড়াও গায়ে ধাক্কা দিয়ে জোরপূর্বক সব কর্মকর্তাকে সভাস্থল থেকে বের করে দেয়া হয়। এমনকি মহিলা কর্মকর্তাদেরও লাঞ্ছিত করতে তারা পিছপা হয়নি।
ঘটনার আকস্মিকতায় উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিবুল আহসানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ইউএনওর কক্ষে আশ্রয় নেন। এরপর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে পুরো বিষয়টি জানানো হয়।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ ধরনের আচরণ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল ৪টায় নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে মাসিক সভা শুরু হয়। যথারীতি উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়।
তিনি স্বাগত বক্তব্য দেয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল আহসান সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্য দিয়ে উপজেলার ১৭টি বিভাগের মধ্যে প্রথমে কৃষি কর্মকর্তাকে বক্তব্য উপস্থাপন করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু সভায় উপস্থিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম জালাল সজোরে টেবিল চাপড়ে বলেন, ‘এ মিটিং হবে না। গত মাসিক সভায় যে নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেখানে তার সুপারিশকৃত প্রার্থীকে চাকরি দেয়া হয়নি। তাই এ সভা করতে দেয়া হবে না।’
এরপর তাকে শান্ত করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান মাইক নিলে তিনি বেশি কিছু বলার সুযোগ পাননি। এসময় বাইরেদাড়িয়ে থাকা মরিয়ম জালাল শিমুর সমর্থক ৩০-৩৫ জনের একটি দল হুড়মুড় করে সভাস্থলে ঢুকে পড়ে। ঢুকেই তারা মরিয়মের পক্ষে অবস্থান নিয়ে একযোগে কর্মকর্তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় তারা চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে ‘এ সভা হতে দেয়া হবে না, সবাইকে বেরিয়ে যেতে হবে।’ এ সময় একজন মহিলা কর্মকর্তাও তাদের হাতে লাঞ্ছিত হন।
এসময় বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা ইউএনওর কক্ষে এসে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি উপর মহলে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। এরপর উপজেলা প্রশাসনের ২১ জন কর্মকর্তার পক্ষ থেকে বিষয়টি লিখিতভাবে ঢাকা জেলার ডিসিকে জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক নিউজ৩৯কে বলেন, ‘বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখানে আমার কিংবা ইউএনওর একক কোনো সিদ্ধান্তে হয়নি। নিয়োগটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে মেধার ভিত্তিতে হয়েছে। কোনো প্রকার অনিয়ম করা হয়নি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল আহসান বলেন, ‘সভা চলাকালীন সময়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন লোক এসে সভা পণ্ড করে দেয়। অকথ্য ভাষায় কর্মকর্তাদের গালিগালাজ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে সবাইকে তারা সভাকক্ষ থেকে বের করে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কর্মকর্তারা এখানে কাজ করতে নিরাপদ বোধ করছি না। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম জালাল নিউজ৩৯কে বলেন, ‘পরিষদের কাউকে না জানিয়ে ও সম্মতি না নিয়ে ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান তাদের পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়েছে। বিষয়টি সবার দৃষ্টিগোচর হলে আমি, ইউপি চেয়ারম্যান ও পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্যরা এর প্রতিবাদ জানাই।’
প্রসঙ্গত, উপজেলা পরিষদের ‘অফিস সহায়ক’-এর দুটি শূন্য পদে নিয়োগ দিতে গত সেপ্টম্বরে চাকরিপ্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম জালাল তার একজন প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য ইউএনওর কাছে জোর তদবির করেন। কিন্তু যোগ্যতার পরীক্ষায় তার প্রার্থী উত্তীর্ণ না হওয়ায় বাদ পড়ে যায়। এতে তিনি উপজেলা প্রশাসনের ওপর চরম ক্ষেপে যান। বিষয়টি উচ্চপর্যায়কে অবহিত করা হলে যথানিয়মে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। সে ক্ষেত্রে নিয়োগ কমিটির কিছুই করার ছিল না।