ধন্যবাদ দোহার-নবাবগঞ্জের প্রবাসী ভাইদের

887

দোহার-নবাবগঞ্জ, পদ্মা বিধ্যত এই অঞ্চলের মানুষ এক সময় কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেছে। পদ্মা বিধ্যত অঞ্চল ও নদী পথে ঢাকার সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় এই অঞ্চলের মানুষের ব্যবসায় সাথে সম্পর্কও খুব খারাপ ছিল না। কিন্তু ব্যবসার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা সবার কাছে না থাকায় চাইলেও অনেকেই ব্যবসার নিয়োজিত হতে পারেন নি। পারিবারিক পেশা কৃষি ও তাঁতেই নিয়োজিত রেখেছিলেন নিজেদেরকে। কিন্তু ১৯৮০ এর দশকে যখন সৌদি আরবে ম্রমিক হিসাবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া শুরু হলো তখন এই অঞ্চলে শুরু হলো এক নিরব বিপ্লব। একে একে এই অঞ্চলের যুবকেরা ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ঝুকে পড়লো প্রবাস জীবনে। সেই শুরু, সৌদি আরবের গন্ডি পেড়িয়ে সেই প্রবাস জীবন আজ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই আজ অবস্থান করছে দোহার-নবাবগঞ্জের প্রবাসীরা। এই প্রবাস জীবন যেমন তাদের অর্থনৈতিক অবস্থায় পরিবর্তন এনেছে তেমনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে রাখছে ব্যাপক ভূমিকা। গল্পটা এই পর্যন্তই শেষ হতে পারতো। কিন্তু না, পরিবর্তন শুধু এক জায়গায় থেমে থাকে না। পরিবর্তন চলে আসে সময়ের দাবিতে, পরিবর্তন কাজ করে নিজের প্রয়োজনে।

পদ্মার কড়াল গ্রাসে দোহার-নবাবগঞ্জের ঐতিহ্যমন্ডিত জনপদগুলো যখন একর পর এক হারিয়ে যেতে শুরু করেছে তখন তার জন্য দোহার-নবাবগঞ্জের কিছু তরুন তখন মাঠে নেমেছিল দোহার-নবাবগঞ্জের মানুষের প্রাণের দাবি পদ্মা বাধের জন্য।  দোহারের প্রানকেন্দ্র জয়পাড়াতে গর্জে উঠেছিল সবাই বাধেঁর দাবিতে। সেই আন্দোলনের ঢেউ ছুটে গিয়েছিল দোহারের নয়াবাড়ি থেকে মুকসুদপুর পর্যন্ত। দলে দলে সাধারন ও ভাঙ্গন কবলিত মানুষ এসে যোগ দিয়েছিল এই বাধেঁর দাবি জানাতে। কিন্তু দোহারের অর্থনীতিতে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি সেই প্রবাসী ভাইরা কি এই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন?

হ্যা হয়েছিলেন। দোহার-নবাবগঞ্জের প্রবাসী ভাইরা হয়তো সরাসরি দোহারে এসে আন্দোলনে অংশ নিতে পারেন নি। কিন্তু তারা ঠিকই অংশ নিয়েছেন এই আন্দোলনে। সেটা ভার্চুয়াল ভাবেই হোক, অর্থনৈতিক ভাবেই হোক বা প্রবাসে দূতাবাসকে কেন্দ্র করেই হোক। তারা ছিলেন, তারা দোহার-নবাবগঞ্জের এই পরিবর্তনের সাথেই ছিলেন। তারা দোহার-নবাবগঞ্জের এই প্রাণের দাবির সাথে ছিলেন শুরু থেকেই। আজ সেই প্রবাসী কিছু ভাইদের কথা বলবো।

অন্য খবর  সুসংগঠনই পারে নির্বাচনে বিজয়ী করতে; নবাবগঞ্জে সালমান এফ রহমান

প্রথমেই যদি কোন ভাই এর কথা আসে সেটা আসবে নবাবগঞ্জের সর্ব পশ্চিমের ইউনিয়ন জয়কৃঞ্ণপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের ফ্রান্স প্রবাসী নুর ইসলাম ও কুসুমহাটি ইউনিয়নের সুন্দরীপাড়া গ্রামের  ফ্রান্স প্রবাসী সারোয়ার পারভেজ সুমনের। দোহার-নবাবগঞ্জের সোশ্যাল মুভমেন্টের এই আন্দোলনের প্রথম থেকেই ভার্চুয়ালী জগতে জনমত তৈরি ও ফ্রান্স প্রবাসীদের মাঝে নদী ভাঙ্গন নিয়ে তাদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে কাজ করে গেছেন।  কাজ করে গেছেন দোহারের অসহায় মানুষের জন্যও। দোহার-নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্টের পক্ষ থেকে অসহায় মানুষের জন্য  ত্রাণ থেকে শুরু করে শীতবস্ত্র সবকিছুতেই তারা ছিলেন সামনের সারিতেই। হয়তো এই প্রবাসীদের সাথে অনেকে অনেকের সাথে পরিচিত নয়, কিন্তু অসহায় মানুষ আর দোহারের স্বার্থে সবাই এক হয়ে দাড়িয়েছেন দোহার-নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্টের ছায়াতলে।

এইছাড়া সৌদি আরব প্রবাসী শ্রদ্ধেয় বড়ভাই শিপন মোল্লার কথা না বললেই নয়। বাংলাদেশের ব্লগিং জগতের অন্যতম পরিচিত এই নাম শুরু থেকেই ছিল দোহার-নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্টের সাথে। অর্থ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরামর্শ, জাতীয় পর্যায়ে পদ্মা ভাঙ্গন ও দোহার-নবাবগঞ্জের অসহায় মানুষদের কথা তুলে ধরতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছেন এই হাসিখুশি মানুষটি।

এখন যার কথা বলবো, এই মানুষটি সম্ভবত প্রবাস থেকেই দোহারের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজটি করেছেন। দোহারের বিলাসপুরে জন্ম নেয়া এই মানুষটির নাম মোহাম্মদ বোরহান। দুবাই এর আজমান প্রবাসী এই সদা হাস্যজ্বল তরুন সেদিন আজমানে তৈরি করেছিলেন নতুন ইতিহাস।  দুবাইতে থাকা দোহার-নবাবগঞ্জের প্রবাসীদেরকে তিনি নিজ উদ্যোগে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন এক স্থানে। বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দুরে থেকে যেটা ছিল অসম্ভবের কাছাকাছি। সেই কাজটিই করেছিলেন এই উদ্যোমী তরুন। পাশে সহযোগী হিসাবে পেয়েছিলেন নয়াবাড়ির আরেক তরুন আবুল কালামকে।

সেই সময়ে তারা আজমানে তৈরি করেছিলেন নতুন ইতিহাস। প্রবাসে থেকে যে তারা দোহারকে ভুলে যায় নি তার বড় একটা প্রমান তারা সেদিন আজমানে দেয়। দোহার-নবাবগঞ্জের কয়েকশত প্রবাসী সেদিন আজমানে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে এক হয়েছিল প্রবাসীরা। সেদিন দুবাই এর হাই কমিশনারের কাছে দোহার-নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্টের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল স্মারকলিপি।  সেদিন দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান প্রয়াত কামরুল হুদা ও নবাবগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আসফাকের সাথে লাইভ কনফারেন্সিং এর ব্যবস্থা করেছিলেন এই উদ্যমী তরুন। সেই লাইভ কনফারেন্সিং এ যোগ দিয়েছিলেন ঢাকা-১ সংসদীয় আসনের এমপি সালমা ইসলামও। প্রবাসীদের পক্ষ থেকে তারা তুলে ধরেছিলেন দোহার-নবাবগঞ্জের এই প্রাণের দাবি জনপ্রতিনিধিদের কাঝে।

অন্য খবর  আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার হরহামেশা পরিবর্তন

শুধু এই লাইভ কনফারেন্সিং নয়, তারা পাশে থাকার চেষ্টা করেছে দোহার-নবাবগঞ্জের অসহায় মানুষের পাশে থাকারও। দোহার-নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্টের সাধারন মানুষের জন্য নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ থেকে শুরু করে পাশে ছিলেন সব সময়। সেটা অর্থনৈতিক ভাবেই হোক বা শারীরিকভাবেই হোক। তারা পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন সব সময়।

এক দিকে আজমান প্রবাসী ভাইরা যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে দোহার-নবাবগঞ্জের মাটিকে রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ঠিক তখনই কুয়েত থেকে দোহার-নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্ট এর আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন দোহারেরই সন্তান হাবিবুর রহমান হাবিব। কুয়েতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করা দোহারের এই সন্তান কুয়েতে জনমত গঠন ও অনলাইনে প্রবাসী ভাইদের সাথে সাথে দোহার-নবাবগঞ্জে সাধারন মানুষের এই জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা নিয়ে ফেসবুকেও লিখালিখি করে গেছেন ।  সেই সাথে ব্যানার পোস্টার, নদী ভাঙ্গন ও বন্যা কবলিত মানুষদের ত্রান সহায়তা, ভাঙ্গন কবলিত শীতার্ত মানুষদের  পামে দাড়াতে দোহার-নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্টের মাধ্যমে সব সময় ছিলেন দোহারের মানুষের পাশে।

এছাড়াও আমেরিকা প্রবাসী নাদিম কায়সারের কথা না বললেই নয়। পদ্মা বাধের আন্দোলনে প্রখম থেকেই বিভিন্ন ধরনের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এই তরুন। দোহার-নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্টের শুরু থেকেই আর্ত মানবতার সেবায় নাদিম কায়সারকে সব সময় পাশে পেয়েছে দোহার নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্ট।

আজ কোন পরিবর্তনই একলা ফলাফল নিয়ে আসে না। পরিবর্তন হয় সবার হাত হয়ে। আজ দোহার সেই পরিবর্তনের পথে হাটছে। ২০১৪ সালে দোহারে যেখানে দোহারে সামাজিক সংগঠন হিসাবে মাঠে একটি সংগঠনও ছিল না সেই দোহারে আজ মাঠে কাজ করছে ১০টিও বেশি সংগঠন। পরিবর্তনটা এভাবেই আসছে দোহারে। যার কৃতিত্ব শুধু দোহার-নবাবগঞ্জ বাসীর নয়, যার কৃতিত্ব দোহার-নবাবগঞ্জের প্রবাসে থাকা শিপন মোল্লা,  নুর ইসলাম, সারোয়ার পারভেজ সুমন, নাদিম কায়সার বা মো: বোরহানদেরও কম নয়।

আছিফুর রহমান

ছাত্র, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আপনার মতামত দিন