দোহার পৌরসভা (২য় পর্ব): উপসম্পাদকীয় – আব্দুর রহমান আকন্দ

1016

কিছু মনে না করলে দোহার পৌরসভা নিয়ে বর্তমানে যে আইনী জটিলতা আছে তার দায়ভার অনেকটা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার উপরও বর্তায়। জানি না এর জন্য নাজমুল হুদার কী লাভ হয়েছে। তবে আইনের আশীর্বাদপূষ্ট ১৫ বছরের অভিজ্ঞ(!) মেয়র আব্দুর রহিম মিয়া কিন্তু সব সময় ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকেই দায়ী করে থাকেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর  সরকারের সহযোগিতায় আর্থিক অনুদান, লোকবল ও অবকাঠামোগত ভাবে অনেক সহযোগীতা পেয়েছে দোহার পৌরসভা। যাই হোক অতীতকে পিছনে ফেলে আমরা কিভাবে এই পৌরসভার আইনী জটিলতা শেষ করে সামনের দিকে অগ্রসর করতে পারি সেদিকে দৃষ্টি রাখা জরুরি।

একটি পৌরসভার সাধারণ নাগরিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি অবশ্যই পৌরসভার নজর রাখতে হবে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এর মধ্যে অন্যতম। যা বিগত ১৫ বছরে এই পৌরসভা করতে পারে নি। অথচ পার্শ্ববর্তি থানা নবাবগঞ্জের আগলা ইউনিয়ন একটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় এই ইউনিয়নের বেশিরিভাগ বাসিন্দাকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের আওতায় নিয়ে এসেছে। ১৫ বছরের অভিজ্ঞ পৌর পরিষদকে অনুরোধ করবো লজ্জাকে উপেক্ষা করে তাদের পরামর্শ গ্রহন করার জন্য।

গ্যাস সরবরাহ আধুনিক পৌরসভার একটি অন্যতম চাহিদা। এই দাবির যৌক্তিকতা হচ্ছে ঢাকার অতি সন্নিকটে দোহার অবস্থিত। তবে এটি একটি জাতীয় সমস্যা বলে দোহার পৌরবাসীর কিছু করার নেই বলে পৌরবাসী এই বিষয়টি সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখেন।

যাইহোক প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার যে ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকা দরকার তা লিখতে গেলে যে কতবার “নাই” শব্দটি লিখতে হবে তাই নিয়ে আমি নিজেই লজ্জিত।

বিগত দুই বছর আগে মহাজোট সরকার পৌরবাসীর পৌরসভার সুবিধা প্রদানের জন্য যে দোহার পৌরসভার বাজার উন্ননের প্রকল্পের মাধ্যমে জয়পাড়া বাজারের ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করে এবং ব্যবসায়ীদের জন্য একটি পৌর মার্কেট নির্মিত হয়েছে এবং পৌরসভার রাস্তায় ব্যবহার করার জন্য ১২শত বাতির ব্যবস্থা করে।

অন্য খবর  জয়পাড়া বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে সাজ্জাদ হোসেনের কুশল বিনিময়

যেকোন পৌর এলাকাকে পরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলার জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান থাকা উচিৎ। মাস্টার প্ল্যান একটি পরিকল্পিত পৌরসভা গড়ে তোলার জন্য অতীব জরুরি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আজ ১৫ বছর হয়ে গেলেও দোহার পৌরসভা আজও একটি মাস্টার প্ল্যান আলোর মুখ দেখাতে পারে নি। শুধু হই, হচ্ছে বলে গড়িয়ে গেছে ১৫ বছর সময়। জানিনা বর্তমান পৌর মেয়র ও তার পরিষদ এর কি জবাব দেবেন। কারণ জনগন তাদের নির্বাচিত করেছিল ৫ বছরের জন্য। আজ ১৫ বছর অতিবাহিত হলো কিন্তু সেদিক থেকে মনে হচ্ছে জনগনের কাছে তাদের জবাবদিহিতা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না। এক যুগের বেশি সময় ধরে নির্বাচনবিহীন ভাবে দায়িত্বে থাকা এই পৌরসভার পরিষদের বিরুদ্ধে আমরা এই প্রশ্ন করতেই পারি। তাই পৌর পরিষদের উচিৎ অতি দ্রুত এই মাস্টার প্ল্যান সম্পন্ন করে এই মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া। যেকোন প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী পৌরসভার ভিতরে তিন থেকে চার লেনের রাস্তা থাকতে হয়। যেমন ৬০ ফুট থেকে ৮০ ফুট পরিমান সুপ্রশস্থ রাস্তা, এছাড়া যেকোন দুর্যোগ বা দুর্ঘটনার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য প্রধান সড়ক থেকে বাড়ি পর্যন্ত ১২ থেকে ১৫ ফুট প্রশস্থ রাস্তার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এর কোনটা আমাদের এই পৌরসভায় আছে কিনা তা আমার জানা নেই। মাস্টার প্ল্যান নাই বলে অপরিকল্পিত ভাবে যে যার মতো ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন বলে জয়পাড়া বাজারে এখন সব সময় যানজট লেগেই থাকে। এর কারন অপ্রশস্থ রাস্তা ও পৌর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রন না থাকা। যে স্থাপনা গুলো এখন তৈরি হয়েছে তা ভাঙ্গা সম্ভব হচ্ছে না যে কারনে প্রতিনিয়তই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে দোহার পৌরবাসী।

অন্য খবর  জনগণ হত্যা করে কোন গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে

আমি ব্যক্তিগতভাবে দোহার পৌরসভার মেয়র আব্দুর রহিম মিয়া, নির্বাহী প্রকৌশলী ও কয়েকজন কাউন্সিলরকে অনুরোধ করেছিলাম যেহেতু জয়পাড়া বাজারের এই অবস্থা তাই বিকল্প হিসাবে বাশতলা থেকে করম আলীর মোড় হয়ে থানার মোড় হয়ে কাজীর চর পর্যন্ত রাস্তায় এখনও যেহেতু বড় কোন স্থাপনা তৈরি হয় নি তাই এই রাস্তাটাকে ৮০ ফুট প্রশস্থ করার পরিকল্পনা এখনই নেয়া উচিৎ।  এবং রাস্তার মাঝখানে আধুনিক ডিভাইডার স্থাপন করে দোহারে আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা চালু করা হোক। তাই অবিলম্বে সড়ক ও জনপদ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, জেলা প্রশাসন সহ সকলের সাথে আলোচনা করে রাস্তার ধারে নির্দিষ্ট পরিমান স্থান রেখে স্থাপনা তৈরি করার জন্য কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা দরকার। পাশাপাশি যে সকল রাস্তার পাশে অবস্থিত খাল ও নালা দখল করে অবৈধ দখলদাররা ভরাট করে বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছেন সে সকল মৃত ও ভরাট খান দখল মুক্ত করে ৬০ ফুট প্রশস্থ রাস্তা করা সম্ভব। যা ভবিষত প্রজন্মের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কারন আগামী ২০ বছর পর দোহার পৌরসভার চিত্র হয়তো এমন থাকবে না। এর জনসংখ্যা হবে দ্বিগুন। অতএব জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে যদি এখনই কোন পরিকল্পনা না নেয়া হয়।

আব্দুর রহমান আকন্দ
সাধারণ সম্পাদক
দোহার উপজেলা যুবলীগ
সর্বশেষ নির্বাচিত জিএস
জয়পাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদ ১৯৯৬

প্রথম পর্ব

আপনার মতামত দিন