দোহার থানার নামে ভূয়া ওয়ারেন্ট বের করার ফলে ১০ দিনের বেতন কর্তন করা হয়েছে আদাবর থানার এসআই ইয়াদুল হকের।
ছেলের আকিকা অনুষ্ঠান থেকে ডেভেলপার ব্যবসায়ী শাহীন আহমেদকে কথিত ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে আটক করেন পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) ইয়াদুল হক। এরপর মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আশ্বাসে পাঁচ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। কিন্তু ওয়ারেন্টে উল্লিখিত আসামি শাহীন ও তার বাবা সফিকুল হক এসআইকে ৫০ হাজার টাকা দেন। বাকি সাড়ে চার লাখ টাকা পরে পরিশোধ করবেন মর্মে লিখিতভাবে মুচলেকা দেন। এরপর কিছুদিন যেতে না যেতেই এসআই ইয়াদুল টাকার জন্য দফায় দফায় চাপ দিতে থাকেন। অনেকটা নিরূপায় হয়ে শাহীন আহমেদ ওয়ারেন্টে উল্লেখিত দোহার থানা ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলেই থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়ে।
প্রমাণ হয় ওয়ারেন্টটি আসলে ভুয়া। এভাবেই ভুয়া ওয়ারেন্টের মাধ্যমে শাহীন আহমেদ নামে এক ডেভেলপার ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের নামে হেনস্তা করেছেন এসআই ইয়াদুল। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত গড়িয়েছে। তদন্ত করেছে পুলিশ সদর দপ্তরও। এ বিষয়ে গত জুলাইতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দেশের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থা মারফত তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরও ঘটনার সত্যতা পেয়ে এসআই ইয়াদুল হকের ১০ দিনের বেতন কর্তন করেছে।
ঘটনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদাবর থানার এসআই ইয়াদুল হক গেল বছরের ১৩ই নভেম্বর রাজধানীর আদাবর থানার নবোদয় হাউজিংয়ের ৬/এ সড়কের ৬ নং বাড়ি থেকে ‘ওয়ার্ল্ড টাচ ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট’ নামক ভবন নির্মাণকারী একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহীন আহমেদকে গ্রেপ্তার করে। শাহীন আহমেদকে আটক করা হলেও তাকে থানায় না নিয়ে এসআই ইয়াদুল তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন রাস্তায় ঘণ্টা খানেক ঘুরিয়ে মোহাম্মদপুরস্থ শিয়া মসজিদ সংলগ্ন ইমু মোটরস নামে একটি গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টারে বসিয়ে রেখে শাহীন আহমেদ ও তার পিতা শফিকুল হককে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আশ্বাসে ৫ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করে।
সে সময় ওই ব্যবসায়ী নগদ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এবং দাবিকৃত বাকি টাকা পরবর্তীতে পরিশোধ করা হবে মর্মে মুচলেকা দিয়ে এসআই ইয়াদুলের হাত থেকে ছাড়া পান। পরে বাকি টাকার জন্য এসআই ইয়াদুলের চাপে অতিষ্ঠ হয়ে ভুক্তভোগীরা দোহার থানায় মামলার বিষয়ে খবর নিয়ে জানতে পারেন, এসআই ইয়াদুল কর্তৃক কথিত ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে দোহার থানায় বর্ণিত ভিকটিমের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২৫নং মামলার কোন অস্তিত্ব নেই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ওই থানায় মোট মামলা হয়েছে মাত্র নয়টি। এ বিষয়ে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে অনুসন্ধান করে এসআই ইয়াদুল কর্তৃক প্রদর্শিত গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সীল, স্বাক্ষর সবই ভুয়া মর্মে জানা যায়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদনে মন্তব্য আকারে বলা হয়েছে, আদাবর থানার এসআই ইয়াদুল বর্ণিত ব্যবসায়ী শাহীন আহমেদ ও তার পিতার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজির জন্যই ওই ভুয়া ওয়ারেন্ট ইস্যু করে মর্মে প্রতীয়মান হয়। এ কারণে এস আই ইয়াদুল হক কর্তৃক ভুয়া ওয়ারেন্ট তৈরি করে শাহীন আহমেদ নামের ব্যবসায়ীকে আটক ও চাঁদাবাজির বিষয়টি তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে শফিকুল হক মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন, পুরো ঘটনাটি আমি বলতে পারবো না। তবে এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। এখন ঘটনাটি কি অবস্থায় আছে তা আমার ছেলে বলতে পারবে।
এদিকে দোহার থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে দায়ের হওয়া ২৫ নম্বর মামলায় বাবা-ছেলেকে আসামি দেখানো হলেও ওই মাসে দোহারে মামলা হয়েছে মাত্র ৯টি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ১৯শে আগস্ট পুলিশের আইজির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য বলা হয়।
২৩শে সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ডিসিপ্লিন) মো. আলমগীর আলম ফিরতি এক চিঠিতে জানান, পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তা কর্তৃক বিষয়টি সম্পর্কে তদন্ত করানো হয়েছে।
একই বিষয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন-তেজগাঁও) কর্তৃক অনুসন্ধানপূর্বক দায়িত্ব অবহেলার অপরাধে তার ১০ দিনের বেতন কাটার আদেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন নতুন করে চিঠি দেয়ার প্রক্রিয়া করছে।