দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন

1144

মানুষ মানুষের জন্য/ জীবন জীবনের জন্য/ একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না/ ও বন্ধু….

একজন সরকারি কর্মকর্তা যিনি জনগণের সেবক, একই সাথে একটি উপজেলার প্রধান হিসাবে এবং জন-বান্ধব প্রশাসক হিসাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন দোহার উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা কে এম আল-আমিন । মঙ্গলবার দোহার উপজেলা প্রশাসনে নিজ কার্যালয়ে সহকারি কমিশনার(ভূমি)এর উপস্থিতিতে একজন মৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে চাকুরী দিলেন। সে সময় চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠান জয়পাড়া ক্লিনিক এণ্ড ডায়াগনস্টিক এর ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন সহ অন্যান্য মালিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা মোকছেদ আলী। চাকুরী করতেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস পিয়ন হিসেবে।স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে কোনো মতে সংসার চালাতেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি ভাতা ও চাকিরর বেতন তা দিয়ে কোনো মতে চলে যেত ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া ও সংসারের দৈনন্দিন খরচ। এরই মধ্যে গত তিন বছর আগে বড় মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে জমানো সরকারি তহবিল থেকে টাকাও উঠিয়ে ফেলেন। চাকরি জীবনে সৎ ও নিষ্ঠাবান এই মুক্তিযোদ্ধা, শত প্রতিকূলতার মাঝেও চালিয়ে গিয়েছেন সন্তানদের পড়ালেখা।  মেয়ে শিল্পী আক্তারকে পড়ছে জয়পাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এর ডিগ্রী শ্রেণিতে আর ছেলে নবাবগঞ্জ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জের শোল্লায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

কিন্তু গত ২ ফ্রেব্রুয়ারি আকস্মিকভাবে মৃত্যু হয় মোকছেদ আলীর।সংসারে আয়ের একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে হতাশায় ডুবে যায় পুরো পরিবার। মৃত্যুর কারণে সরকারি চাকরির বেতন ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা কাগজপত্র জটিলতায় পুনরায় চালু হতে সময় লাগবে। ততদিন কিভাবে চলবে পরিবারটি।

এমন অবস্থায় এই পরিবারের পাশে দাঁড়ান দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম, আল-আমীন। গত শনিবার প্রয়াত মোকছেদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারটিকে আশ্বস্ত করেন তাদের পাশে তিনি থাকবেন। বেতন ও ভাতা চালু না হওয়া পর্যন্ত মোকছেদের স্ত্রী-সন্তানরা যাতে খেয়ে-পড়ে চলতে পারে সে ব্যবস্থা করে দিবেন তিনি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার সকালে মোকছেদের মেয়ে শিল্পী আক্তারকে নিজের অফিসে ডেকে এলাকারই একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান – জয়পাড়া ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেণ্টারে ৭ হাজার টাকা বেতনে সম্মানজনক একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেন দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আল-আমীন। চাকরির পাশাপাশি দুই ভাই-বোন যাতে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে সে ব্যবস্থাও করেন তিনি।

আবেগে আপ্লুত শিল্পি নিউজ৩৯কে বলেন, “২/৪ খাওয়ার জন্যও আব্বা ঘরে রেখে যেতে পারেনি। আব্বার বেতন-ভাতা চালু হলে হয়তো সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এমন দুঃসময়ে ইউএনও স্যার আমাদের পাশে না দাড়ালে আমাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যেত। সংসারও চালাতে পারতাম না। ওনি আমাদের জন্য যা করলেন এটা কোনো দিনও ভুলব না। আব্বার কাছে শুনেছিলাম স্যারের কথা, সত্যি সত্যি স্যার একজন ভাল মানুষ। ”

অন্য খবর  দোহারে সরকারি জমি দখলমুক্ত করলো প্রশাসন

এ ব্যাপারে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আল-আমীন বলেন, মোকছেদ আলী একজন ভাল ও সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি ঢাকাও ছুটে গিয়েছিলাম। পরে বাড়িতে গিয়ে পরিবারটির দুরবস্থা  দেখে তাদের পাশে দাড়িয়েছি। যাতে মোকছেদের ছেলে-মেয়ে পড়ালেখাটা চালিয়ে যেতে পারে। ওদের বাবার স্বপ্ন যেন পূরণ হয়।

 

আপনার মতামত দিন