ঠিকাদারের গাফিলতিতে গোবিন্দপুর-নয়নশ্রী সড়ক এখন নালা

301

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার যন্ত্রাইল ইউনিয়নের গোবিন্দপুরের ডাক্তারবাড়ি থেকে নয়নশ্রী ইউনিয়নের বালিরডিগরের অরুণের বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার মাটির রাস্তা পাকা করা হবে। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। বর্তমানে সড়কটি প্রশস্ত নালায় (ড্রেন) পরিণত হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীসহ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পথচারী ও এলাকাবাসী।

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৪ নভেম্বর উপজেলার যন্ত্রাইল ইউনিয়নের ছোট গোবিন্দপুর ডাক্তারবাড়ি থেকে বালিরডিগরের অরুণের বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার মাটির রাস্তা পাকাকরণের কাজটি উপজেলা প্রকৌশলী অফিস থেকে দরপত্রের মাধ্যমে মেসার্স ভূঁইয়া অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। পরে মাটি কাটার যন্ত্র (ভেকু) দিয়ে রাস্তাটির মাটি খুঁড়ে রাখা হয়। এরপর আর কাজই করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মাটি খুঁড়ে রাখায় সড়কের কোথাও কোমরপানি, কোথাও হাঁটুপানি জমেছে। সড়কের দুই পাশে মাটির স্তূপ, মাঝখানে কাদাপানি জমে আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তিন-চার মাস ধরে রাস্তার ঠিকাদার মাটি কেটে এ অবস্থা করে রেখেছেন। রাস্তাটি বর্তমানে নালায় পরিণত হয়েছে। কোনো যানবাহন তো দূরের কথা, মানুষও হাঁটাচলা করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে লোকজন গোবিন্দপুর বাজার থেকে বিকল্প রাস্তা দিয়ে তিন কিলোমিটার ঘুরে বালিরডিগর যাচ্ছেন। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দিয়ে দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজ, মহব্বতপুর হাইস্কুল, ধাপারি বাজার এবং বিভিন্ন ব্যাংক-বিমার কাজে প্রতিনিয়ত মানুষ নবাবগঞ্জ সদরে আসা-যাওয়া করেন। এ ছাড়া এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেন্ট থ্রেকলাস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে যেতেও সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সড়কটি পাকা না হওয়ায় নিয়মিত দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণকে। বিশেষ করে সামান্য বৃষ্টিতেই দুর্ভোগ বেড়ে যায়। সড়কে পানি জমে এ রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আর উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনেও ভোগান্তি পোহাতে হয় এ অঞ্চলের কৃষকদের। সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকালের বৃষ্টিতে মাটির ওই সড়কে পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এই এক কিলোমিটার মাটির সড়কটি পাকা হলে প্রায় ১০ গ্রামের মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে সুগন্ধি কালিজিরা ধানের বাম্পার ফলন

স্থানীয় বাসিন্দা শামসুউদ্দিন বলেন,  ‘রাস্তার মাটি খুঁড়ে রাখায় আমাদের চলাচলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে রাস্তার কাজ বন্ধ। এভাবে থাকলে আমরা হাঁটাচলা করব কীভাবে?’

বান্দুরা হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শশাঙ্ক ভূষণ পাল চৌধুরী বলেন, ঠিকাদার রাস্তাটি খুঁড়ে রেখেছেন। এটি বর্তমানে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। জনবহুল এলাকার রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় কয়েক হাজার মানুষ দীর্ঘদিন থেকে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, রাস্তার মাটি কেটে ফেলায় ড্রেনের মতো হয়ে এতে অনেক পানি জমে আছে। শিশুরা যেকোনো সময় পানিতে পড়ে বড় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে।

বালিরডিগর গ্রামের শ্যামল গমেজ বলেন, গ্রামের নিকটবর্তী বিদ্যালয় সেন্ট থ্রেকলাস উচ্চবিদ্যালয়ে চলাচলের জন্য এই রাস্তা একমাত্র ভরসা। কিন্তু সড়কটির মাটি কেটে রাখায় রাস্তাটি ড্রেনে পরিণত হয়েছে। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা এক কিলোমিটারের রাস্তা তিন কিলোমিটার ঘুরে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

সেন্ট থ্রেকলাস বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাথী গমেজ বলে, ‘বৃষ্টি হয়ে রাস্তাটি নালায় পরিণত হয়েছে। হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে যায়। ফলে স্কুলে যেতে গেলে আমাদের ভিজে যেতে হয়। আমাদের জন্য হলেও রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।’

অন্য খবর  দোহারে করোনা উপসর্গ নিয়ে একজনের  মৃত্যু

এ বিষয়ে কথা বলতে মেসার্স ভূঁইয়া অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক মো. তোফায়েল ভূঁইয়ার মুঠোফোনে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর সহযোগী মো. তৌফায়েল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাই (তোফায়েল) দেশের বাইরে গেছেন। তিনি এলে কাজ শুরু করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তি হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। শিগগিরই তাঁর চুক্তি বাতিল করে পুনরায় টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি সম্পূর্ণ করা হবে।’

আপনার মতামত দিন