জাপান সবসময়ই আমার হৃদয়ে: শেখ হাসিনা

    100

    পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপান সফরকে সামনে রেখে ছোটবেলা থেকেই দেশটি নিয়ে আগ্রহ থাকার কথা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকেই তার এই আগ্রহের সৃষ্টি। তিনি বলেন, “ছোটবেলায় জাপানকে নিয়ে আমার বেশ আগ্রহ ছিলো। আমি জাপানি চিত্রকলা, ক্যালেন্ডার, স্ট্যাম্প, পুতুল প্রভৃতি সংগ্রহ করতাম।” গত ২৭ মে জাপানের জাতীয় দৈনিক জাপান টাইমসে প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রীর এক প্রবন্ধ থেকে একথা জানা যায়।

    তিনি বলেন, “আমার বাবার কাছ থেকেই এটা আমি পেয়েছি। বাংলাদেশকেও একদিন আরেকটি জাপান হিসেবে গড়ে তোলার তার আকাঙ্ক্ষার কথা আমার জানা ছিলো। জাপানে আশা এবং সম্প্রীতির এক নতুন যুগের যে সূচনা হয়েছে। এই নতুন সময় আমাদের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসুক, সম্পর্ককে আরও গভীর করে তুলুক এবং আমাদের শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ এবং উন্নত পৃথিবী গড়ে তোলায় সহায়ক হোক।”

    শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে সবসময়ই পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।

    ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে প্রথম দিকে স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশগুলোর অন্যতম দেশ হিসেবে জাপান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং জাপানি স্কুল শিশুরা তাদের টিফিনের অর্থ বাঁচিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো।

    তিনি বলেন, “আমাদের জাতীয় পতাকার মধ্যেও সাদৃশ্য রয়েছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায়ই বলতেন জাপানের পতাকা তাকে সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের পতাকায় সবুজের বুকে লাল সূর্য লাখো শহীদের আত্মত্যাগেরই প্রতিচ্ছবি।”

    অন্য খবর  জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমা, এবারও দু’পক্ষের মুখ দেখাদেখি বন্ধ

    প্রধানমন্ত্রী প্রবন্ধে লেখেন, “বঙ্গবন্ধু সবসময় আমাদেরকে জাপানের কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে শিল্পোৎপাদনের পথে যাওয়ার বিবর্তনের প্রতি লক্ষ্য করতে, বিশেষ করে খামার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে উৎসাহ যোগাতেন। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জাপান সফরের সময়ই আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের শক্ত ভীত গড়ে ওঠে।”

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের অসামান্য আর্থসামাজিক উন্নয়ন বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে বিস্ময় জাগিয়েছে।

    তিনি বলেন, জাপান-বাংলাদেশ পাবলিক-প্রাইভেট সংলাপ দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্পর্ককে শক্তিশালীকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দুই দেশের সরকার টু সরকার সহযোগিতায় পিপিপির মাধ্যমে ৬টি প্রকল্প রয়েছে।

    ব্যবসায়িক শর্ত শিথিল করা দেশে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পূর্ব শর্ত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই কারণেই একই স্থান থেকে বিনিয়োগকারীদের সবরকম সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতেই দেশে ২০১৮ সালে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সব চেয়ে বেশি নমনীয় এবং সহায়ক বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করছে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তাঁর সকল ক্ষেত্রেই বিদেশী এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগকে স্বাগত জানায় এবং বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়েও কোন বিধি-নিষেধ নেই।

    অন্য খবর  শুভ জন্মদিন মিস্টার এমপি

    তিনি বলেন, “বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিপুল পরিমাণ শুল্ক রেয়াত এবং আর্থিক প্রণোদনার সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। পৃথিবীর ৩২টি দেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি রয়েছে এবং জাপান সহ ২৮টি দেশের সঙ্গে দ্বৈত কর মওকুফের চুক্তি রয়েছে।”

    ২০২২ সাল বাংলাদেশ এবং জাপান কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আস্থাশীল যে, শান্তি এবং উন্নয়নে আমাদের উভয়ের মূল্যবোধ এবং অঙ্গীকার আমাদের জনগণের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। আর আমাদের দুই দেশের জাতীয় পতাকার আমাদের সেই লক্ষ্য অর্জনের পথেই সুদৃঢ় বন্ধনে বেঁধে রাখে।”

    ২৯ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা রয়েছে। এ বৈঠকে বাংলাদেশকে জাপানের ২২০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি সই হতে পারে।

    এ ছাড়া টোকিওতে ৩০ ও ৩১ মে অনুষ্ঠিতব্য দুদিনব্যাপী ‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।

    জাপান সফর শেষে ৩০ মে সৌদি আরব রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ৩১ মে অনুষ্ঠিতব্য ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও সালমান এফ রহমান পবিত্র শব ই কদর রাতে মক্কাতে ওমরাহ পালন করবেন।

    আপনার মতামত দিন