দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ ঢাকার দোহার উপজেলার পালামগঞ্জ বাজার এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় আহত সাজু মন্ডল (২৪) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ির মদিনা মেডিকেল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মঙ্গলবার সকালে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। নিহত সাজু মন্ডল উপজেলার রাইপাড়া ইউনিয়নের লক্ষিপ্রসাদ গ্রামের নুরু মন্ডলের ছেলে। সে পালামগঞ্জ বাজারের ফার্নিচার ব্যবসায়ী ছিলেন।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পালামগঞ্জ কবরস্থানের পাশে মিলন শিকদারের জায়গায় দোকান উঠাতে গেলে বিলেরপাড় এলাকার আব্দুল হাকিম (আমিন) বাঁধা দেয়। ১২ অক্টোবর বুধবার সকালে সেখানে দুপক্ষের উপস্থিতিতে জমি পরিমাপ হচ্ছিল। সেখানে বাজারের ব্যবসায়ী সাজু মন্ডল ও আনোয়ার হোসেন মন্ডল উপস্থিত ছিল। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বিলেপাড় গ্রামের আব্দুল হাকিম আমিনের নেতৃত্বে বিলেরপাড়ের ফজল খানের ছেলে নান্টু, মধ্যলটাখোলার রহমআলীর ছেলে সোহাগ, লটাখোলা এলাকার জিল্লু মিয়ার ছেলে রবিউল, বিলেরপাড় এলাকার কামালসহ আরও কয়েকজন অর্তকিত হামলা করে সাজু মন্ডল ও আনোয়ার মন্ডলকে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে। আহতরা চিকিৎসা নিতে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে সেখানে গিয়েও আব্দুল হাকিমের বাহিনী দ্বিতীয় দফায় মারধর করে গুরুতর আহত করে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক গুরুত্বর আহত সাজুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। অবস্থার আরও অবনতি হলে যাত্রাবাড়ির মদিনা মেডিকেল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাজু মারা যায়।
এবিষয়ে মিলন শিকদার বলেন, পালামগঞ্জ কবরস্থান সংলগ্ন বড় ইকরাশী মৌজার ১৪৫৯ আরএস দাগের ২৭ শতাংশ জমি আমাদের পরিবারের রেকর্ডীয় সম্পত্তি। সেখানে দোকানঘর তুলতে গেলে বিলেরপাড়ের হাকিম বাধা দেয়। হাকিমের দাবি এই জমি তিনি লীজ সূত্রে মালিক। গত ১২ অক্টোবর বুধবার দুপক্ষের উপস্থিতিতে জমি পরিমাপ হচ্ছিল। বাজারের ফার্নিচার ব্যবসায়ী সাজু ও তার ভাই আনোয়ার চাউল নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে আব্দুল হাকিম ওরফে হাকিম আমিনের নির্দেশে তার ভাড়াটিয়া বাহিনী আমাদের উপর আক্রমণের চেষ্টা করলে আনোয়ার ও সাজু এগিয়ে আসলে তাদেরকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আমি দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
নিহত সাজুর বড়ভাই আনোয়ার হোসেন মন্ডল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, চাউল নিয়ে বাজার থেকে বাড়ি যাচ্ছিলাম। আব্দুল হাকিম ওরফে হাকিম আমিনের নির্দেশে তার ভাড়াটিয়া বাহিনী মিলন ভাইয়ের উপর আক্রমণের চেষ্টা করলে আমরা এগিয়ে যাই এবং ‘কেনো তার জমিতে দোকান উঠাতে দেয়া হবে না’ এবিষয়ে জানতে চাওয়ায় হাকিমের নির্দেশে তার লোকজন আমাদের দুই ভাইয়ের উপর অমানবিকভাবে হামলা করে। গুরুত্বর আহত ভাইয়ের চিকিৎসায় হাসপাতালে গেলে তারা হত্যার উদ্দেশ্যে আবারও হামলা চালায়। সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে মদিনা মেডিকেল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার ভাই সাজু মারা যায়। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই।
দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তফা কামাল মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার সকালে লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসলাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এঘটনায় পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। আসামীদের ধরতে পুলিশি অভিযান চলছে।