দোহারের নতুন আকর্ষণ বাহ্রা বাঁধ

ঢাকা শহরের খুব কাছেই দোহার উপজেলার অবস্থান। এই উপজেলার একেবারে পশ্চিমে নয়াবাড়ী ইউনিয়নটি পুরোটাই পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। যেখানে কিছুদিন আগেও ছিল পদ্মার ভায়াবহ ভাঙ্গন এবং সাথে ছিল মানুষের ভিটেমাটি হারানোর কান্না ও হাহাকার। গত বছর ভাঙ্গন রক্ষায় সারে ৩ কি:মি: বাধের জন্য একনেক বৈঠকে ২১৭ কোটি টাকার বাজেট পাশ হয়। বর্তমানে চলছে সেই কাজের প্রাথমিক ডাম্পিং এর কাজ। ডাম্পিং প্রায় শেষ পর্যায়ে। কাজ শুরুর সাথে সাথে এলাকাটি হয়ে উঠেছে মানুষের বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু। পদ্মা পাড়ের পুরো সারে ৩ কি: মি: এলাকা বালুর বস্তা ডাম্পিং করায় নদীর তীর দিয়ে মানুষ পুরো এলাকা হেটে যেতে পারে। তাই নগরজীবনের ব্যস্ততা ও কর্মব্যস্তময় টানা সপ্তাহ কাটানোর পর একটু প্রশাস্তির  জন্য  প্রকৃতির খুব কাছ থেকে পদ্মা নদীর উত্তাল ঢেউ উপভোগ, স্প্রিটবোর্ট, ট্রলার ও নৌকায় ভ্রমণ করতে  চাইলে  আপনি ঘুরে আসতে পারেন পরিবার, বন্ধুবান্ধবসহ নয়াবাড়ী “বাহ্রা ঘাট” থেকে। পদ্মার অপরূপ বিস্তর্ণ জলরাশি এবং নদীর বুকে জলেদের সারি সারি নৌকার ছুটে চলা দেখলে মনে হবে আপনি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে অবস্থান করছেন। আবার এখান থেকে আপনি সূর্যাস্তও দেখতে পাবেন।

“বাহ্রা ঘাট” এর কিছু কথা

এই “বাহ্রা ঘাট” এর কথা কিছুদিন আগেও তেমন কেউ জানত না। এখন ভ্রমণপিপাসু সকল পর্যটকদের মুখে মুখে বাহ্রাপোর্টের নাম শোনা যায়। বর্তমানে জনপ্রিয় পর্যটন স্থানে পরিণত হয়েছে নয়াবাড়ী ইউনিয়নের “বাহ্রা ঘাট”। এখানে খুব সকালবেলা আসলে দেখতে পাবেন পদ্মার বুক থেকে সারারাত ধরে জেলেদের ধরা ইলিশ মাছসহ বিভিন্ন প্রকার মাছের বাজার। আপনি চাইলে সেই তরতাজা টাটকা মাছ কিনতেও পারবেন।

বাহ্রাপোর্টের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করবার উপযুক্ত সময় হলো বর্ষাকাল। তবে শুকনা মৌসুমেও এর সৌন্দর্যের কমতি নেই। চিরচেনা সেই উত্তাল পদ্মা  দেখা না গেলেও এখন দেখা যাবে পদ্মা নদীর শান্ত রূপ। সন্ধ্যায় পদ্মার পাড়ে বসে সূর্যাস্ত উপভোগ করলে আপনার বাহ্রাপোর্টে আসা সার্থক মনে হবে। মূলত এ কারণেই হয়তো অনেকে কুয়াকাটার সাথে তুলনা করে থাকেন।

বাহ্রা ঘাটে কীভাবে আসবেন

ঢাকা শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকেই গুলিস্থান যাওয়ার সরাসরি বাস পেয়ে যাবেন। গুলিস্থানের সুন্দরবন স্কায়র মার্কেট এর সামনে ওভার ব্রিজ এর নিচে থেকে নগর পরিবহনে সরাসরি বাহ্রাপোর্টে আসতে পারবেন ভাড়া প্রতিজন ৯০ টাকা। আবার গোলাপ শাহর মাজারের সামনে থেকে কার্তিকপুরের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ছেড়ে যায় যমুনা পরিবহন। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। কার্তিকপুর থেকে ৩ কি:মি: পশ্চিমে বাহ্রাপোর্টে আসতে অনেক গাড়ী পাবেন। ঢাকা থেকে বাসে বাহ্রাপোর্টে আসতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।

অন্য খবর  দোহারে সীমিত পরিসরে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

এ ছাড়া ঢাকার বাবুবাজার ব্রীজ এর গোড়া থেকে কেরানীগঞ্জের  কদমতলী হয়ে সিএনজি নিয়েও যাওয়া যায় । জনপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা ভাড়া। কার্তিকপুর বাজার আসে। এরপর অটোরিকশাতে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় সোজা বাহ্রাপোর্টে। রিকশায় গেলে ৩০ টাকা। প্রাইভেট কার বা মাইক্রো বা বাইক নিয়েও যাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কদমতলী থেকে নবাবগঞ্জের রুট ধরে টিকরপুর-গালিমপুর হয়ে দোহারের বাশতলা হয়ে সোজা বাহ্রা ঘাটে আসা যায়। মানিকগঞ্জ থেকেও সরাসরি আসা যায় বাহ্রা ঘাটে। আর ব্যক্তিগত বাহন হলে তো আপনার স্বাধীন মতোই চলে যেতে পারবেন। আর যদি কেউ একেবারে ব্যাকপ্যাক ভ্রমণ করতে চান তাহলে ২০০-৩০০ টাকায়ও ঘুরে আসা সম্ভব বাহ্রা ঘাট থেকে। বাহ্রা ঘাটে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রো পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা আছে।

বাহ্রা পোর্ট

বাহ্রা ঘাটে যা দেখবেন

বাস বা গাড়ি থেকে বাহ্রা ঘাটে নেমে কিছু সময় নিয়ে একটু ঘুরে নিতে পারেন বাহ্রা ঘাটের পরিবেশ ও সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণে। আমার মনে হয় সময়ের অভাবে যারা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে যেতে পারেন না তাদের একবার হলেও এই জায়গায় আসা দরকার। এত সুন্দর জায়গাটার বর্ণনা লিখে হয়তো সেভাবে বোঝানো যাবে না। এখানে আসার পর ট্রলার বা নৌকা নিয়ে আপনি চর শালিপুর সহ বিভিন্ন খোলা চরের নানান জায়গায় ঘুরে বেরাতে পারবেন। সেই সব চরে আছে জনবসতি। মনে হয় সুনিবিড় একটি স্থান। সেই চর গুলোতে সময় কাটানোর পর বেশ ফ্রেশ লাগবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

বাহ্রা পোর্ট

ঢাকার পাশে হওয়ার কারণে প্রচুর মানুষ এখানে ঘুরতে আসে। খেয়ানৌকা, ট্রলার অথবা স্পিডবোট নিয়ে বিশাল পদ্মার বুকে ভেসে বেড়াতে পারবেন আপনি। ঘাটের পাশাপাশি দেখে যেতে পারবেন মিনি কক্সবাজার মৈনট ঘাট, আদনান প্যালেস পার্ক, নবাবগঞ্জের জজবাড়ি, উকিলবাড়ি, আনসার ক্যাম্প,  খেলারাম দাতারবাড়িসহ আরও কিছু দর্শনীয় স্থান। ঘাটে গিয়ে একটু এগোলেই দেখতে পাবেন সুন্দর ভাবে গোছানো সারি সারি নৌকা ও স্পিডবোট বেঁধে রাখা আছে। পদ্মার মাঝে অপার সৌন্দর্য নিয়ে জেগে ওঠা চরে যাওয়ার জন্য। মূলত জেগে ওঠা চরই আসল সৌন্দর্য। আর তাই নৌকা দরদাম করে উঠে পড়ুন, এক ঘণ্টা চুক্তিতে খেয়ানৌকা ছোট ৩০০-১০০০ টাকা বা ট্রলার ৬০০-১৫০০  টাকা আর স্পিডবোট ১৮-২০ মিনিটের জন্য ২০০০ টাকা । আর ১০ মিনিটের জন্য ১০০০ টাকা। অবশ্যই দামাদামি করে নেবেন। এ ছাড়া স্পিডবোটে বাহ্রা ঘাট থেকে ফরিদপুরের হাজিগঞ্জ যেতে হলে জনপ্রতি ১৬০ টাকা করে গুনতে হবে। ১০ থেকে ১২ জন নিয়ে চলতে পারবে। কয়েকজন মিলে শেয়ারে ভাড়া করলে সবচেয়ে ভালো হবে।

অন্য খবর  দোহারের আলোচিত আসাদ হত্যা মামলার চার্জশীট আদালতে দাখিল

বাহ্রা পোর্ট

কোথায় থাকবেন

পর্যটকদের থাকার জন্য বাহ্রা ঘাটের সাথেই বোর্ডিং আছে তবে পরিবেশ খুব ভালো নয়। আবার স্থানীয় কোনো বাসিন্দার বাড়ি ম্যানেজ করতে না পারলে দিনে এসে দিনেই ফিরে যেতে হবে। তাই ঢাকা বা দেশের যেকোনো স্থান থেকে বেড়াতে গেলে বাহ্রা ঘাটে থাকার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।

কোথায় খাবেন

বাহ্রা ঘাটে এসে রুপালি ইলিশ খাওয়ার স্বাদ নিতে ভুলবেন না। বেশির ভাগ মানুষেরই ইচ্ছে থাকে পদ্মার তীরে বসে পদ্মার রুপালি ইলিশ খাওয়ার। বাহ্রা ঘাটের পাশেই বেশ কিছু  ভালো মানের ভাতের হোটেল আছে। এসব খাবার দোকানে বড় সাইজের রুপালি ইলিশ খেতে চাইলে আগেই অর্ডার দিতে হবে। প্রতি পিস ইলিশের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বোয়াল ৮০-১০০ টাকা, চিংড়ি ৮০-১০০ টাকা, পদ্মার নদীর বিভিন্ন ধরনের গুড়া মাছ ৬০-৯০ টাকা। প্রতি প্লেট ভাত ১০ টাকা। আর নৌকা ভ্রমনের পর খাওয়াটা এককথায় অসাধারণ লাগবে।

যেভাবে ঢাকায় আসবেন

ঢাকা থেকে অনায়াসেই দিনে গিয়ে দিনেই আবার ফিরে আসা যাবে বাহ্রা ঘাট থেকে। বাহ্রাঘাট  থেকে ঢাকার উদ্দেশে শেষ বাসটি ছেড়ে যায় সন্ধ্যা সারে ৭ টায়। যদি আপনি সারে ৭ টায় বাসে চড়েন রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে ঢাকায় ফিরে যেতে পারবেন।

বাহ্রা পোর্ট

সতর্কতা

বাহ্রা ঘাট এখন যথেষ্ট কোলাহলময়। তবে হ্যাঁ এখানে ছিনতাই হওয়ার মতো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম। তবুও সতর্কভাবে থাকাই ভালো। সাঁতার না জানলে গোসল করার সময় বেশি গভীর পানিতে যাবেন না। খাবারের প্যাকেট অথবা সিগারেট প্যাকেট, পানির বোতল বা ড্রিংন্সের বোতল অথবা যেকোনো প্রকার ময়লা যেখানে সেখানে ফেলবেন না। আর যেকোনো ধরনের সাহায্যের জন্য পাশেই অবস্থিত মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়িতে যোগাযোগ করতে পারেন।

আপনার মতামত দিন