কোরবানি শব্দটির অর্থ হলো নৈকট্য লাভ করা। উৎসর্গ করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সঠিক সময়ে নির্ধারিত নিয়মে ও সময়ে মহান আল্লাহপাকের নামে হালাল পশু জবাই করাই হলো কোরবানি। কোরবানির প্রথা প্রথম জানা যায় আদম (আ.) এর যুগে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুহাম্মদ, তুমি তাদের কাছে আদমের দুই পুত্রের গল্প যথাযথভাবে শুনিয়ে দাও। গল্পটি ছিল এই, যখন তারা দুইজন আল্লাহর নামে কোরবানি পেশ করল, তখন তাদের মধ্যে একজনের কাছ থেকে কোরবানি কবুল করা হলো, আরেকজনের কাছ থেকে কবুলই করা হলো না’ (সুরা মায়েদা-২৭)। কোরবানি হলো হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নাত। আল্লাহ বলেন, ‘হে বৎস আমি স্বপ্নে দেখি- আমি যেন তোমাকে জবাই করছি, বলো এ ব্যাপারে তোমার অভিমত কী? সে বলল, হে আমার আব্বাজান, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তা পালন করুন। অতঃপর তারা দুজনই আল্লাহর ইচ্ছার সামনে আত্মসমর্পণ করল এবং জবাই করার উদ্দেশ্য কাত করে শুইয়ে দিল। তখন আমি তাকে ডাক দিয়ে বললাম, ইবরাহিম তুমি অবশ্যই তোমার স্বপ্নকে সত্য প্রমাণ করেছো। নিঃসন্দেহে আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কার দিয়ে থাকি। এটা ছিল তাদের জন্য একটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা মাত্র। আমি ছেলের পরিবর্তে একটা বড় কোরবানির জন্তু তাকে দান করলাম।’ (সুরা আস সাফফাত, আয়াত ১০২-১০৭)। সুবহানাল্লাহ। এই ছিল কোরবানির ইতিহাস। আল্লাহ রব্বুল আলামিন কোরআনের অন্য আয়াতে বলেন, ‘আপনি বলুন অবশ্যই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ, সবকিছুই মহান প্রতিপালকের জন্য’ (সুরা আনআম-১৬২)।
সুতরাং আমাদের মনে রাখতে হবে বড় পশু কোরবানি দেওয়ার মধ্যে কোনো বড়াই বা আত্মঅহমিকা নেই। কোরবানি হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। সুরা হজে আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির জন্যই আমি পশু কোরবানির এ নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে করে সেই লোকেরা সেসব পশুর ওপর আল্লাহতায়ালার নাম নিতে পারে, যা তিনি তাদের দান করেছেন, তোমাদের মাবুদ হচ্ছেন একজন, অতএব তোমরা তাঁরই সামনে আনুগত্যের মাথা নত কর (আয়াত ৩৪)। ‘মনে রেখো আল্লাহর কাছে কিন্তু কখনো কোরবানির গোশত রক্ত পৌঁছায় না, বরং তার কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়াটুকু’ (আয়াত ৩৭)। সুতরাং সম্পদ বা টাকা পয়সার আধিক্যের জোরে বড় বড় পশু জবাই দিলে কোরবানি হবে না। কোরবানি হতে হবে তাকওয়াপূর্ণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোরবানির দিন পশু কোরবানির চাইতে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় আর কোনো আমল নেই। কেয়ামতের দিন জবাই করা পশুকে তার শিং ও খুরসহ হাজির করা হবে। কোরবানির পশুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা খোলা মনে এবং সন্তুষ্টচিত্তে কোরবানি কর’ (মিশকাত)।
শরিয়তের পরামর্শ অনুযায়ী হৃষ্টপুষ্ট, বেশি গোশত, নিখুঁত, দেখতে সুন্দর পশু কোরবানি করা উত্তম। তাছাড়া কোরবানির পশু হতে হবে সব দোষ ত্রুটিমুক্ত। অসুস্থ বা খুঁতযুক্ত পশু কোরবানি করা উচিত নয়। গরু ও মহিষের দুই বছর এবং উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। তাহলে কোরবানি সঠিক হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছে না আসে’ (ইবনে মাজাহ)। কোরবানির মাংস কীভাবে বণ্টন করা হবে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তাও বলে দিয়েছেন, ‘অতঃপর জবাই শেষে তা যখন একদিকে পড়ে যায় তখন তোমরা তার গোশত থেকে নিজেরা খাও এবং আহার করাও ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্ত এবং যারা তোমার কাছে সাহায্যপ্রার্থী হয়’ (সুরা হজ-২২)। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে কোরবানির গুরুত্ব বুঝে কোরবানি আদায় করার তৌফিক দান করুন।
♦ লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার