যদি কেউ দাড়ি না রাখে তাহলে সে কি গোনাহগার হবে?

295

আমাদের আগে জানতে হবে রাসূল (সা.)এর সুন্নত বলতে কি বোঝায়। রাসূল (সা.) এর ছোট/বড় সব আমল সবার জন্য ওয়াজিব নয়। বিশ্বনবীর কিছু সাধারণ আচার-আচরণ তাঁর সুন্নত হলেও এর সবগুলো পালন করা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। তবে রাসূল (সা.)এর কিছু আমল আছে যা সরাসরি ধর্মীয় নির্দেশ; কাজেই সেসব পালন করা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক বা ওয়াজিব। তার মানে দাঁড়াচ্ছে এই যে, রাসূলের সুন্নতকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগের সুন্নত সবার জন্য ওয়াজিব নয় এবং দ্বিতীয় ভাগের সুন্নতগুলো তাঁর প্রতিটি উম্মতের জন্য ওয়াজিব বা অবশ্যপালনীয় কর্তব্য।

এবার দেখা যাক, দাড়ি রাখা কোন্‌ পর্যায়ের সুন্নত। ঐতিহাসিক দলিল থেকে আমরা জানতে পারি, রাসূল (সা.) দাড়ি রাখতেন এবং এটি তাঁর সুন্নত হিসেবে পরিগণিত। কিন্তু এ আমলটি প্রথম পর্যায়ের সুন্নত হিসেবে পরিগণিত বলে সবার জন্য ওয়াজিব নয়। অর্থাত্‌ কেউ যদি দাড়ি না রাখে তাহলে সে হারাম কাজ করেনি। অবশ্য দাড়ি রাখার সমর্থনে ও দাড়ি কামানো হারাম বলে যেসব হাদিস বর্ণনা করা হয় সেসব যায়িফ বা দুর্বল হাদিস হিসেবে চিহ্নিত এবং এগুলোর সত্যতা নিয়ে হাদিস বিশারদদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।

দাড়ি কামানো সম্পর্কে একমাত্র যে হাদিসটির সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায় তা হল: রাসূল (সা.) বলেছেন: যে দাড়ি কামাবে সে মালাউন বা তার উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হয়। ইসলামি পরিভাষায় মালাউন সেই ব্যক্তিকে বলা হয় যে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত। কাজেই প্রতিটি মুসলমানের জন্য উত্তম হল দাড়ি না কাটা। কিন্তু এই হাদিসের ব্যাখ্যার মাধ্যমে দাড়ি কামানোকে হারাম ঘোষণা করা যাবে কিনা তা নিয়ে ফকিহ বা বিজ্ঞ আলেমদেরর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।

অন্য খবর  যে ১০টি ভুলের কারণে একজন মুসলিম মুহুর্তেই কাফের হয়ে যায়

বড় বড় আলেম, মুজতাহিদ ও সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতারা বলেছেন, এ হাদিসের ভিত্তিতে সতর্কতামূলকভাবে মুসলমানদের উচিত দাড়ি না কামানো।

প্রকৃতপক্ষে সতর্কতা তারাই অবলম্বন করেন যারা সত্যিকার দ্বীনদার ও মোত্তাকি। আমাদের প্রিয় শ্রোতাবন্ধুদের বলতে চাই, আপনারা প্রথমে ইসলামের ফরজ ও ওয়াজিবগুলোকে সঠিকভাবে আমল করার চেষ্টা করুন। যখন অবশ্যপালনীয় কর্তব্যগুলো পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষভাবে পালন করতে পারবেন তারপরই উচিত হবে মুস্তাহাবের প্রতি নজর দেয়া এবং মাকরুহ কাজ থেকে দূরে থাকা।
দাড়ি রাখা হচ্ছে মুস্তাহাব। তবে এটি এমন একটি মুস্তাহাব যার প্রতি বেশি বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অন্য কথায় দাড়ি কামানো মাকরুহ অর্থাৎ এ কাজ যতটা পারা যায় ত্যাগ করাই উত্তম। আমাদের মনে রাখতে হবে, মুস্তাহাব পালন ও মাকরুহ ত্যাগ করার প্রতি গুরুত্ব দিতে গিয়ে যে ফরজ বা ওয়াজিব কাজ বাদ পড়ে না যায়।

আর একটি বিষয় হল, ইসলামে বাহ্যিকভাবে পরিপাটি থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত উত্তম পোশাক পরে বাইরে বের হওয়া। একজন মুসলমান যে কোনো চেহারা ধারণ করে ইচ্ছেমতো পোশাক পরে জনসম্মুখে বের হতে পারে না। পাশাপাশি ইসলাম বাহ্যিক পরিপাটি থাকার চেয়ে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করে। আসলে মানুষের অন্তরের কলুষিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে তাকে আল্লাহর কাছে বেশি জবাবদিহী করতে হবে। কিন্তু কেউ যদি ছোট কোনো ভুল করে তাহলে কুরআনের আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেও করতে পারেন।

অন্য খবর  কাতারে কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি কিশোর প্রথম

সবশেষে প্রিয় শ্রোতাবন্ধুদের বলতে চাই, ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়ে আপনারা যে প্রশ্ন করেন, তা ধর্মীয় কর্তব্য পালনের ব্যাপারে আপনাদের আন্তরিকতাই ফুটিয়ে তোলে। আপনারা ধর্মীয় খুঁটিনাটি বিষয়গুলিও পালন করার চেষ্টা করে আল্লাহর অতি প্রিয় বান্দা হওয়ার চেষ্টা করছেন যেনে আমরা সত্যিই খুশি হয়েছি। আমরা আশা করছি, আপনাদের পাশাপাশি আমরাও এমন কোনো কাজ করব বা যাতে আমরা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হই। দাড়ি কামানো হারাম না হলেও যেহেতু এ কাজের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাই দাড়ি না কামানোই উত্তম।

আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল: অহঙ্কার, রিয়া বা লোকদেখানো ইবাদত গীবত এবং শিরকের মতো বড় বড় হারাম কাজ আমরা অহরহ করে যাচ্ছি এবং সারাজীবন এসব মস্তবড় গুনাহর কাজে ডুবে থেকেও আমরা সে সম্পর্কে উদাসিন হয়ে রয়েছি। পাশাপাশি ইসলামে অনেক নৈতিক সামাজিক দায়িত্ব আছে যা আমাদের পালন করা ওয়াজিব। যেমন: প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞানার্জন,অপরকে সহযোগিতা ও দানখয়রাত করা,কুরআনের অন্তর্নিহিত তাত্‌পর্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন ও তা অন্যকে শিক্ষা দেয়া ইত্যাদি হাজারো দায়িত্ব আছে যা আমাদের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। আমরা মহান আল্লাহর কাছে তার সন্তুষ্টি অর্জন এবং নিজেদের অন্তর ও বাহ্যিক আচরণকে পরিশুদ্ধ করার তৌফিক কামনা করছি।

আপনার মতামত দিন