ঢাকার দোহার উপজেলায় ঈদকে সামনে রেখে গন পরিবহনে চরম নৈরাজ্য চলছে। এদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে এপথ দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা। জানা যায়,দোহার টু-শ্রীনগর হয়ে গুলিস্থান পর্যন্ত চলাচলকারী পরিবহন দুটি নগর ও আরাম পরিবহন লিমিটেড। পরিবহন সমিতির ও পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রী সেবার শৃঙ্খলার পরিবর্তে যাত্রীদের হয়রানী ও ভোগান্তি বহুগুনে বৃদ্ধি করেছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। অপরদিকে ফিটনেসবিহীন হিসাবে গন্য অধিকাংশ পরিবহনগুলো চলছে এই রুট দিয়ে।
দোহার উপজেলায় ব্যাংক-বীমা,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,হাসপাতাল,উপজেলা পরিষদ,পৌরসভা,থানা,বিশ্ববিদ্যালয় সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা প্রতিদিনই ঢাকা গিয়ে এসে অফিস ও প্রয়োজনীয় কাজে স্থানীয়রা চলাচল করে থাকে এই রুটে। এসকল যাতায়াতকারী যাত্রীদের তুলনায় গনপরিবহনের সংখ্যা খুবই কম । তাছাড়া সময় নিয়ন্ত্রনের জন্য ঈদ উপলক্ষ বিশেষ কোন সার্ভিস চালু করা হচ্ছেনা। পাশাপাশি সড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা এক পরিবহন আরেক পরিবহনের গাড়ীকে আটকে রাখছে। ফলে যাত্রী সেবার মান নেই বললেই চলে এমন অভিযোগ প্রায় কয়েক হাজার যাত্রীদের। সাধারনত এই সব বাসের আসন ৩৬/৪৮ টি হলেও প্রতিটি বাসে শতাধিক যাত্রী নিয়ে বহন করে। যাত্রীভাড়া তুলনামুলক মাত্র ৫০ কিলোমিটারে যাত্রীদের ভাড়া ৯০ থেকে ১১০ টাকা।
দোহারের বাস সার্ভিসগুলোর মধ্যে আরাম পরিবহন লিমিটেড,নগর পরিবহন,জয়পাড়া পরিবহন,ডিএনকে পরিবহন ও ফুলতলা সেবা পরিবহন নামে পাঁচটি গনপরিবহনের প্রায় একশত বত্রিশ খানা বাস রয়েছে যা প্রায় তিন লক্ষাধিক জনসাধারনের জন্য অপ্রতুল। আবার এদের মধ্যে ফিটনেসবিহীন হিসাবে গন্য অধিকাংশ পরিবহনগুলো চলছে এই রুট দিয়ে। প্রশাসনকে ফাকিঁ দিয়ে প্রভাবশালী পরিবহন সমিতির ও পরিবহন শ্রমিকদের নেতা-কর্মিরা যাত্রী সেবার শৃঙ্খলার পরিবর্তে যাত্রীদের হয়রানী,ভোগান্তি ও পরিবহন সমিতির নামে প্রতিটি গাড়ি থেকে ১৩৫০ টাকা করে জিপি ফান্ডের নামে চাদাঁ উত্তোলন করছেন এই পাঁচ পরিবহনের নেতারা। কাউন্টার সার্ভিস এর নামে আরাম পরিবহন ও নগর পরিবহন পুরোটাই ভেল্কিবাজি করে যাত্রীদের সাথে। জয়পাড়া থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত বিরতিহীন কাউন্টার থাকলেও এর আগে-পরেও যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানামা করায় এবং আসন শেষ হওয়ার পরও যাত্রীদের দাড়িয়ে শুধু নয় একজনের সাথে আরেকজনের শরীর মিলিয়ে বহন করে থাকে। এছাড়াও সময়মতো গাড়ি চলাচল করে না। যাত্রীরা যেন মানুষ নয়,পন্যের সামগ্রীর মতো সাজিয়ে বাসের ছাদের উপর মালামাল তুলতেও ভুল হয় না এদের। সময় নিয়ন্ত্রনের নামে বেপরোয়াভাবে চলে তারা যার ফলে দূর্ঘটনা হয় সবচেয়ে বেশী। সন্ধ্যা হলেই এসব গাড়ীর চালক হিসেবে হয়ে উঠে গাড়ির হেলপাররা। পাশাপাশি দোহার জয়পাড়া-গালিমপুর হয়ে ঢাকা রুটে চলাচলকারী জয়পাড়া পরিবহনের ও ডিএনকে পরিবহন বাসগুলোর সময় নিয়ন্ত্রন না থাকায় এবং ফিটনেসবিহীন বাসগুলোর অবস্থা আরও করুন থাকায় এ পথ দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের হয়রানী ও ভোগান্তির শেষ নেই। এছাড়াও ফুলতলা সেবা পরিবহন সার্ভিসটির অবস্থা একই রকমের থাকায় যাত্রীদের হয়রানী ও ভোগান্তির শেষ নেই।
জয়পাড়া থেকে প্রতিদিন পদ্মা সরকারি কলেজে যাতায়াত করেন ইংরেজি প্রভাষক তারেক তিনি জানান, আমি যখন অটোরিকশা যায়ই তখন প্রায়ই দেখি দুটি পরিবহনের ছয়টি,চারটি বা দুটি বাস এক সাথে চলাচল করে একটি আরেকটিকে সাইড দেয় না। একটি আরেকটিকে ধরে রাখে আর এতে আমাদের সময়মত গন্তব্য স্থানে যেতে অনেক সমস্যা হয়।
এ বিষয়ে আরাম পরিবহনের পরিচালনা দায়িত্ব থাকা জামাল হোসেনকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি একটু অসুস্থ ঢাকায় থেকে ডাক্তার দেখিয়ে এসেছি তাই কথা বলতে পরিতেছি না পরে আপনার সাথে কথা বলবো।
এ বিষয়ে নগর পরিবহনের দায়িত্ব থাকা আবদুল রশিদ বলেন, আমাদের বাস লোকাল বাস তাই আমরা লোকাল যাত্রী উঠাই এবং নামাই। কিন্তু আরাম পরিবহন লিমিটেড তাদের বাস সিটিং সার্ভিস
তারা কাউন্টার ছাড়া যাত্রী উঠায় ও নামায়। আমাদের বাসের আগে তাদের বাস ছাড়া হয়। কিন্তু আমাদের বাস ছাড়ার পর তাদের বাস কিছু দূর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ কারনেই এক বাস আরেক বাসের সাথে চলাচল করতে দেখা যায়। এ নিয়ে অবেক বার বসা হয়েছে এবং চিঠিও দেওয়া হয়েছে কিন্তু কেন সমাধানে আসছে না আমরাও চাই এটির সমাধান। আর ঈদে ড্রাইভার ও হেলপারদের বকশিশ দিতে হয়।
এ বিষয়ে দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.মোস্তফা কামাল জানান, জনসাধারনের চলাচলের জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূন তবে চাদাঁবাজির বিষয়টি তার জানা নেই। পরিবহন মালিকরা অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আলমগীর হোসেন জানান, জনসাধারনের চলাচলের জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ন। প্রতিদিনই এ পথ দিয়ে ঢাকা টু দোহার এবং দোহার টু ঢাকা মুখে চলাচলকারীর সংখ্যা অনেক অনেক বেশী। আর এর সুযোগ লুফে নিচ্ছে এক শ্রেনীর লুটেরা। খুব শ্রীঘ্রই আমরা এর প্রতিকার করবো এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ী জব্দ করবো।