আমি নিশ্চিত নির্বাচনের তফসিলে বিএনপি নির্যাতনের আলামতগুলো কাজে লাগাবে – ব্যাঃ নাজমুল হুদা

416
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা - ফাইল ফটো

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মাঠে থাকা বিএনপির পরিকল্পিত ট্রাপে সরকার পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি আমলের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী এবং বিএনএ-র চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।

শনিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলায় প্রচারিত টকশো ‘ফেস টু ফেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রতি বৃহস্পতিবার ও শনিবার রাত ১২টায় ফেস টু ফেস অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়।

নবুয়াত রহমানের পরিচালনায় ‘নির্বাচনের রাজনীতি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে নাজমুল হুদা ছাড়াও অতিথি ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক ড. মাহফুজ উল্লাহ ও প্রতিদিনের সংবাদের সম্পাদক আবু সাঈদ খান।

শনিবার নয়াপল্টনে বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে বিএনপির কালো পতাকা প্রদর্শনের অনুষ্ঠানে পুলিশি বাধার বিষয়ের কথা তুলে ধরে উপস্থাপক জানতে চান- রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে। এমন প্রশ্নে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিএনপির ট্রাপে পড়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি যে ট্রাপটি করেছে সরকার ডেফিনেটলি সেই ট্রাপে পড়ে যাচ্ছে। তারা মারমুখী না কিন্তু। তারা শান্তিপূর্ণ ডিফেনসিভ রোল প্লে করছে।’

বিএনএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইচ এন্ড এভরি ইভেন্ট ইট ইজ ক্যালকুলেটেড এজ এন্ড ইনভেস্টমেন ফর দি থ্রি মান্থস দ্যাট ইউ গেট বিফোর ইলেকশন। ওই তিন মাস তারা যে সম্পূর্ণ উম্মুক্তভাবে রাজনীতি করবে এখন যে আলামত যেগুলো যোগাড় হচ্ছে যেমন পুলিশের নির্যাতন, পেটানো এগুলো তাদের কালেকশন। এটা করার জন্য তারা রীতিমত পরিকল্পনা করে এগুচ্ছে।’

নাজমুল হুদা বলেন, ‘জনগণ জানতে পারছে তারা (বিএনপি) নিয়মতান্ত্রিকভাবে পদ্ধতিতে আন্দোলন করছে। কোনো রকমের উস্কানি দিচ্ছে না। তারপরও পুলিশ বাধা দিচ্ছে, ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এটা জনগণের কাছে পরিষ্কার। কিন্তু দেশের মানুষের চোখ খুলে গেছে। কোনটা কি সেটা বুঝতে পারে। একদিকে যেখানে একটি দল প্রকাশ্যে নির্বাচনী অভিযান চালাচ্ছে, ভোট চাইছে। কিন্তু অন্য একটি দলকে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না। এই জিনিসগুলো খুব ভালোভাবে প্রতিপাদ্য হচ্ছে। এগুলো কাজে লাগিয়ে আমি বিশ্বাস করি বিএনপি আগামী নির্বাচনে যাবে। সবকিছু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আলামত হিসেবে আগামীতে আসবে।’

অন্য খবর  রপ্তানী হচ্ছে দোহারের লুঙ্গি

সরকারকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তারা (বিএনপি) এই আলামতগুলো কাজে লাগাবে।’

বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা দেয়ার ঘটনায় রাজনীতির গতিধারা কোন দিকে যাচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে ড. মাহফুজ উল্লাহ বলেন, ‘আজকে যে চিত্র দেখলাম এটা বর্তমান সরকারের অসহিঞ্চু রাজনীতির এবং মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। সরকার যেভাবে বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির উপর যে রকমভাবে দমনপীড়ন চালাচ্ছে, যেভাবে পুরো রাষ্ট্রকে একটি পুলিশি চেহারা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, তাতে বিরোধীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এটা ভুলে যাওয়া উচিত না। সবশেষ বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ইতিমধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর যে ধরণের উস্কানিমূলক কথাবার্তা আমরা শুনতে পারছি যদিও এগুলো আমরা আমলে নিচ্ছি না।’

বিএনপি তাদের নেতার মুক্তি আশা করবেন এটা অযৌক্তিক না এমন মন্তব্য করে মাহফুজ উল্লাহ বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের জন্য হলেও হত। এটার গুণগত দিক বিচার করছি না। কিন্তু একটা প্রতিবাদ করতে পারবে না আপনি আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন এটা কোন দেশে বাস করছি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা না দেয়ার বক্তব্য ও নয়াপল্টনে পুলিশের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রতিদিন ঢাকা শহরে কত হাজার মানুষ ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকে। পুলিশ কি তা কোনো সময় দেখে? জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকরা অবস্থান করলেন কিসের অনুমতি নিয়েছেন?

মাহফুজ উল্লাহ বলেন, ‘এই সমস্ত কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার সাংঘাতিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড় গেছে। তারা এখন কিভাবে এটা ফায়সালা করবে। তারা ভাবছে বিএনপিকে পিটুনি দিলে তারা আক্রমণাত্মক ভূমিকা নেবে। তখন অতীতের মত মারধর, মামলা দিয়ে সবাইকে জেলে পুরে নির্বাচন করবে। কিন্তু এরমধ্যে একটি সম্ভাবনাকে উঁকি দেয়, তাহলো ২০১৮ সালে নির্বাচন হবে। আর আওয়ামী লীগ নেতাদের গোপন অভিলাস আছে তাহলে আবারো আগের মত নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকা।’

অন্য খবর  দোহারে প্রবাসীর ওপর হামলায় গ্রেফতার ১

নির্বাচনে বিএনপি আসবে এমন ধারণার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারাতাদের মত করে নির্বাচন করে। তবে আমার যতটুকু মনে হয় বিএনপি নির্বাচনে যাবে। তারা সরাসরি বলেনি নির্বাচনে যাবে না। যদিও তারা তাদের নেত্রীকে নিয়ে নির্বাচনে যাবে।’

বিএনপির বর্তমান কর্মসূচির দিকে ইঙ্গিত করে এই সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, ‘আমি নিশ্চিত বিএনপি কোনা হিংসাত্মক কর্মসূচিতে যাবে না। এটা তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তাদের পেটাবেন, সভা সমাবেশ করতে দিবেন না। পুলিশ কমিশনারকে আমি বলতে চাই, আপনারা যেদিন বিএনপির গণঅনশন ছিল তখন তো চারটা পর্যন্ত অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা কেন ভেঙে দিলেন কেন? তারা তো কোনো সমস্যা করেনি।’

নয়াপল্টনের কর্মসূচিতে পুলিশি বাধার সমালোচনা করে মাহফুজ উল্লাহ বলেন, ‘এটা সভ্য বা শালীন ব্যবস্থা না। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের সহ্য সীমা থাকতে হয়। বিশেষ করে নির্বাচনী বছরে এসে একটি সরকার যদি তার সহ্য ক্ষমতাকে হারিয়ে ফেলে সেটাই হলো সরকারের দুর্বলতা।’ তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির তালিকা দাবি করেন।

টক শোকে অংশ নেয়া সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, ‘প্রতিবাদের অধিকার গণতান্ত্রিক অধিকার। পুলিশের কাজ হলো এদের নিরাপত্তা দেয়া। তাদের অধিকার সংরক্ষণ করা, হরণ করা না। এদিকে অধিকার হরণ করা হচ্ছে। পুলিশ তো কারো দলের কর্মচারী নয়। পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। সে হিসেবে তার কাছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি হওয়ার কথা না। তাদের তো সবার অধিকার রক্ষা করা উচিত। এখন পুলিশকে যদি দলীয়ভাবে ব্যবহার করা হয় সেটার তো লক্ষণ ভালো না। পুলিশ যখন নিজেই যখন ভায়োলেট করে তাহলে এই পুলিশকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে?’

বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিকে নিরামিষ আন্দোলন অবহিত করে এই সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, হয়তো তারা আগামী দিনে ফুল নিয়েও দাঁড়াতে পারে। পুলিশকে ফুল দিয়ে আলিঙ্গন করবে।

আগামী নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ করতে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।

আপনার মতামত দিন