২২ বছর পর যাচ্ছে ঢাকা জেলার দোহার পৌরসভার নির্বাচন। ২৭ জুলাই সকাল ৮ থেকে ৪ টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল সোমবার রাত ১২ টা পর্যন্ত ছিল প্রচার প্রচারনার শেষ সময় আর সেই শেষ মুহুর্তে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ৪৩ হাজার ভোটারের এ পৌরসভায় মেয়র পদে লড়ছেন আট প্রার্থী। তাদের মধ্যে পাচজনই ক্ষমতাসীন দলের আওয়ামী লীগ নেতা। অন্যদের মধ্যে দু’জন মধ্যে বিএনপির সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারেষ্টার নাজমুল হুদা পছন্দের প্রার্থী নুরুল ইসলাম ও ইসলামী শাষনতন্ত্র আন্দোলনের আমজাদ হোসেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনে প্রার্থীদের জয় পরাজয় নির্ধারণে নিয়ামক হয়ে উঠবে তাঁতিদের ভোট। এ পৌরসভায় বস্ত্র-বয়নশিল্প জড়িতদের ১৫ হাজারের বেশি ভোট রয়েছে, যা মোট ভোটের প্রায় এক তৃতীয়াংশ।
দোহার উপজেলা নির্বাচন কমিশন সূত্র জানা যায় , ২১টি কেন্দ্রের ১৩৪টি ভোটকক্ষে হবে এ পৌরসভার নির্বাচন। মোট ভোটার সংখ্যা ৪৩ হাজার ৬৬ জন। তাদের জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বসানো হবে ২০১টি। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাবুল (হেলমেট), বর্তমান কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক কাউন্সিলর আলমাছ উদ্দিন (জগ),দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম (চামচ), দোহার উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান আকন্দ (নারকেল গাছ), ঢাকা জেলা কৃষক লীগ নেতা মো, জামাল উদ্দিন (মোবাইল ফোন), বিএনএফ নেতা মো. নূরুল ইসলাম ব্যাপারী (ইস্ত্রি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরহাদ হোসেন (কম্পিউটার) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা আমজাদ হোসেন (হাতপাখা)। এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬১ এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মেয়র পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় ভাগাভাগি হবে আওয়ামী লীগের ভোট। যে কারণে জয়-পরাজয়ের প্রধান নিয়ামক হয়ে উঠবে তাঁতিদের ভোট। তাদের ভোট যার পক্ষে বেশি পড়বে, তিনিই মেয়র পদে জিতবেন। দোহার উপজেলা তাতী লীগের সভাপতি মোজাফফর হোসেন টিটুও এ মতের পক্ষে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, লটাখোলা, রায়পাড়া আংশিক ), উত্তর জয়পাড়া, খালপাড় ও বউবাজার এলাকার তাঁতিরা ঐক্যবদ্ধ। তাই আমরা যাকে যোগ্য বলে মনে করবো তাকেই নির্বাচনে ভোট দিব।
তাঁতিদের সংগঠন উইভার্স কো অপারেটিভ সোসাইটির খালপাড় ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী বারেক বলেন, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে মো. আলমাছ উদ্দিন, আবদুর রহমান আকন্দ ও মো. জামাল উদ্দিনের তাঁতি সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই এদের মধ্যেও ভোট ভাগ হতে পারে। তবে আগামীকালই বুঝা যাবে কে তাঁতিদের ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হবে।
২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ মুকসেদ মনে করেন, শেষ মুহূর্তে ভোটের মাঠের সব হিসাব বদলে যেতে পারে তাঁতি ভোটে।
দক্ষিণ জয়পাড়া বাসিন্দা মো. নাজিম হোসেন বলেন, দীর্ঘ ২২ বছর পর পৌরসভার নির্বাচন হচ্ছে। পৌর এলাকার মঙ্গল ও উন্নয়ন করার যোগ্যতা রাখেন এমন প্রার্থীকেই জনগণ বেছে নেবে বলে আমি মনে করছি।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের সময় অনেকেই অনেক ওয়াদা বা বলে আমি নির্বাচিত হলে ওমুক করবো তমুক করবো কিন্তু নির্বাচিত হলে তাদের আর মাঠে পাওয়া যায় না। এবার জনগণের উচিৎ যোগ্য এবং ভাল মেয়র ও কাউন্সিলরকে নির্বাচীত করা যারা আমাদের জনগণের জন্য কাজ করবে।
নির্বাচনের বিষয় দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তফা কামাল জানান, পৌরসভার ২১টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১২টি কেন্দ্রকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। যে কারণে ওই কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নজর রাখবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তিনি আরো বলেন, দোহার পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু,নিরপেক্ষ ও অবাধ করতে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্রিফিং দেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার জনাব মারুফ হোসেন সরদার। আর এটি অনুষ্ঠিত হয় জয়পাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। ব্রিফিং শেষে ইভিএম মেশিন ও নির্বাচনি সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়।
নির্বাচনের বিষয় দোহার উপজেলার রিটানিং অফিসার মোহাম্মদ আশ্রাফুল আলম জানান, আগামীকাল ২৭ জুলাই দোহার পৌরসভা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আর এই নির্বাচনকে সামনে রেখে দোহারে পৌর এলাকায় ২ প্লাটুন বিজিবি, ব্যার,নয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং নির্বাচন কমিশন থেকে তিনজন পর্যবেক্ষক এসেছেন। আমরা আজকে সকাল ১১ থেকে সব কেন্দ্রের মালামাল পৌঁছে দিয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যার ভোট সে দিবে অন্য কেউ দিলে আমরা সেই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হবে।