সৌদি সরকারের ধরপাকড়ের কবলে পড়ে একদিনেই দেশে ফেরত এসেছেন ২০০ বাংলাদেশি। ফেরত আসার আগে তারা সৌদি সরকারের ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে অপেক্ষমাণ ছিলেন। দেশে ফিরে বিমানবন্দরে এদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ‘আকামা’ (কাজের বৈধ অনুমতিপত্র) থাকা সত্ত্বেও ফেরত পাঠানো হয়েছে তাদের। এ বিষয়ে নিয়োগকর্তাদের সহযোগিতা পাননি তারা। বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের একজন কর্মকর্তা তাদের ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) দিবাগত রাতে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০৪ ফ্লাইটটি হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।
দেশে ফেরা কর্মীদের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় বিমানবন্দরে খাবার পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর ব্যাপারে সহযোগিতা করেছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম।
ফিরে আসা কর্মীদের অভিযোগ, সৌদি আরবে বেশ কিছুদিন ধরে ধরপাকড়ের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। সেই অভিযানে বাদ যাচ্ছে না বৈধ আকামাধারীরাও (কাজের অনুমতিপত্র প্রাপ্ত)। ফেরত আসাদের অভিযোগ, কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে সৌদিপুলিশ তাদের গ্রেফতার করে, সেসময় নিয়োগকর্তাকে ফোন করা হলেও তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যান। ফলে আকামা থাকার পরও তাদের ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার দীর্ঘদিনধরে অবৈধভাবে থাকা কিছু বাংলাদেশিকেও আটক করে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
মাত্র পাঁচ মাস আগে সৌদি আরব গিয়েছিলেন কুড়িগ্রামের আকমত আলী। কিন্তু, তার সে স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন। তার অভিযোগ, আকামার মেয়াদ আরও দশ মাস থাকলেও তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন সেখানে ফোন করা হলেও সৌদি মালিক তার ব্যাপারে পুলিশকে কিছু বলেনি।
গোপালগঞ্জের সম্রাট শেখের ক্ষোভ, আট মাসের আকামা ছিল তার। নামাজ পড়ে বের হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং কোনও কিছুই না দেখে দেশে পাঠিয়ে দেয়।
ফেরত আসা সাইফুল ইসলামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। তার অভিযোগ, আকামার মেয়াদ দেখানোর পরও তাকে দেশে পাঠানো হয়। সাইফুল বলেন, ‘মাত্র ৯ মাস আগে সৌদি গিয়েছিলাম, আকামার মেয়াদও ছিল ছয় মাস।’
চট্টগ্রামের আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আকামা তৈরির জন্য আট হাজার রিয়াল জমা দিয়েছিলাম কফিলকে। কিন্তু, গ্রেফতারের পর কফিল কোনও দায়িত্ব নেয়নি।’
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘ফেরত আসা কর্মীরা যেসব বর্ণনা দিচ্ছেন, সেগুলো মর্মান্তিক। সাধারণ ফ্রি ভিসার নামে গিয়ে এক নিয়োগকর্তার বদলে আরেক জায়গায় কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লে অনেক লোককে ফেরত পাঠানো হতো। কিন্তু, এবার অনেকেই বলছেন, তাদের আকামা থাকার পরও ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিশেষ করে যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই অনেককে ফিরতে হচ্ছে, যারা খরচের টাকাও তুলতে পারেননি। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে এই দায় নিতে হবে। পাশাপাশি নতুন করে কেউ যেন গিয়ে এমন বিপদে না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্য মতে, এই বছর এখন পর্যন্ত ১৬ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি আরব । এরমধ্যে অক্টোবর মাসেই ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের সহযোগিতায় ৮০৪ জনকে ব্র্যাক সহযোগিতা করেছে। আর একদিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মী ফেরত এসেছে কাল শুক্রবার।