নবাবগঞ্জে কবি কায়কোবাদের জন্ম জয়ন্তী পালিত

1693

নবাবগঞ্জ উপজেলায় মহাকবি কায়কোবাদের ১৫৮তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে।  বৃহস্পতিবার মহাকবি কায়কোবাদ সাহিত্য সংঘের উদ্যোগে উপজেলা চত্তরে আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে কবির জন্ম জয়ন্তী উদযাপিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কায়কোবাদ সাহিত্য সংঘের সভাপতি আব্দুল মুহিত দুলু। এছাড়া বাংলাদেশ লেখক পরিষদ জানিয়েছে তাঁর কর্মের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি ও তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করেছে।

‘মহাশশ্মান’ প্রণেতা মহাকবি কায়কোবাদের ১৫৯তম জন্ম বার্ষিকী ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। ১৮৫৭ খ্রি: ২৫ ফেব্রুয়ারি আজকের এই দিনে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫১ সালে ২১ জুলাই বার্ধক্য জনিত কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। পুরাতন আজিমপুর কবরস্থানে তাঁর সমাধি হয়।

কবি কায়কোবাদ ১৯০৪ সালে অমর কাব্য গ্রন্থ মহাশশ্মান লিখে মহাকবি উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।

‘কে ঐ শোনালো মোরে আযানের ধ্বনি, মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিলো কি সুমধুৃর, আকুল হইলো প্রাণ, নাচিলো ধ্বমনি। কি-মধুর আযানের ধ্বণি’। এই রূপ অসংখ্য কবিতাসহ আধুনিক শুদ্ধ বাংলায় গীতিকাব্য, কাহিনী কাব্য, কাব্য উপন্যাস রচনা করে গেছেন তিনি।

অন্য খবর  দোহারে ঈদ পুনর্মিলনী ও গাছের চারা বিতরণ

তিনি ছিলেন খাঁটি বাঙালি এবং মুসলমান। ১৮৫৭ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৯৪ বৎসর পর্যন্ত তিনি এই পৃথিবীর মাঝে বেঁচে থাকেন। জীবনের সুদীর্ঘ ৮২ বছরই তিনি বাংলা সাহিত্য নিয়ে চর্চা করেছেন।

কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ গুলো, মাত্র ১২ বৎসর বয়সে প্রথম কাব্যগ্রন্থ বিরহ বিলাপ প্রকাশিত হয় ১৮৭০ সালে। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ কুসুম কাননে, প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ সালে। এ দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর পরই তিনি কবি হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন। ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ অশ্রুমালা। এ অশ্রুমালা প্রকাশের পর থেকেই কায়কোবাদ সাহিত্য সমাজে প্রতিষ্ঠিত হন। কবি নবীন চন্দ্র সেন, সম্পাদক বঙ্গবাসী, ঢাকা গেজেট ও কলকাতা গেজেট অশ্রুমালায় ভূয়সী প্রশংসা করেন।

১৯০৪ সালে প্রকাশিত হয় কবির অমর কাব্য মহাকাব্যগ্রন্থ মহাশ্মশন, যা পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধের ঐতিহাসিক ঘটনা অবলম্বনে রচিত। তার শ্রেষ্ঠ রচনায় মহাকাব্য মহাশশ্মান। এ কাব্যগ্রন্থ মহাশশ্মান রচনার মধ্য দিয়ে কবি তার অসাধারণ, নিষ্ঠা, সাধনা ও বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন। পানি পথের এ যুদ্ধে মারাঠা শক্তি যদিও মুসলমানদের হাতে পরাজয় ঘটে কিন্তু প্রকৃত পে ভারতে হিন্দু-মুসলিম উভয় শক্তি দু’টিই দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ভারত বর্ষে ইংরেজদের আগমন ও আধিপত্য বিস্তার হয়। পুনঃরায় কিভাবে ভারতের স্বাধীনতা ফিরে আসতে পারে তারই বৈশিষ্ট বহন করে কবির মহাকাব্য মহাশশ্মানে।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ উদ্বোধন

এরপর তিনি শিব মন্দির, অমিয় ধারা, মহরম শরীফ বা আত্ম বিসর্জন কাব্য, শশ্মান ভষ্ম তার জীবদ্দশায় এ সকল গ্রন্থ প্রকাশ হয়ে থাকে। কবির মৃত্যুর পর প্রকাশ হয় প্রেমের ফুল, প্রেমের রানী, প্রেম পারিজাত, মন্দাকিনি ধারা ও গাউছ পাকের প্রেমের কুঞ্জ। এমনিভাবে কবির মোট ১৩টি কাব্যগ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে উপহার রেখে গেছেন।

কথিত আছে, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর কবির বেশ কিছু পান্ডুলিপি তার বংশধরদের মধ্য থেকে হাতছাড়া হয়ে যায়। তা আর ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়নি। ফিরে পাওয়া গেলে হয়তো বা নিশ্চয়ই বাংলা সাহিত্যের জন্য বাংলা ভাষাভাষী বাঙালী জাতির জন্য অনেক উপকারে আসত।

আপনার মতামত দিন