আবারও আস্বাভাবিক মৃত্যু। ঝরে গেলো একটি মানব সম্পদ। ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় মিম আক্তার (১০) নামের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলার বান্দুরা ইউনিয়নের পুরাতন বান্দুরা গ্রামের আলাউদ্দিনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মিম আক্তার জয়পুরহাট জেলার জয়পুরহাট উপজেলার ভাদশা গ্রামের আতাহার আলীর মেয়ে। তারা ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার পুরাতন বান্দুরা গ্রামে আলাউদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে মিমের বাড়ির লোকজন সকালের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকায় মিম আক্তার বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওরনা পেঁচিয়ে ফাঁসি দেয়। মিমের বড় বোন ঘরে ফিরে আড়ার সঙ্গে মিমকে ঝুলতে দেখে চিৎকার করে। পরে চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে মিমকে উদ্ধার করে উপজেলার বান্দুরা দেউয়ান ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক তার অবস্থা গুরুত্বর দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠান। পরে সেখানকার চিকিৎসক মিমকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মিমের মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে নিহতের বাবা আতাহার আলী নিউজ৩৯কে বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে কারো কোনো রকমের অভিমান বা ঝগড়া ছিল না। কী কারণে এ ঘটনা ঘটল তা আমরা কেউ বলতে পারছি না।’
নবাবগঞ্জ থানার তদন্ত কর্মকর্তা লাশ উদ্ধারের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘লাশের গলায় ওড়না পেচানোর কালো দাগ রয়েছে। বুধবার দুপুরে ময়না তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
মানুষ কেন আত্মহত্যা করে? এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আসিফ সজল নিউজ৩৯কে বলেন, মানুষের আত্মহত্যার কারন ও বড় অদ্ভূত। যেমন একটা সময় যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, কোন অবসন্ন দুপুরে ঘুম থেকে উঠার পর এতটাই নস্টালজিক অনুভূতি লাগত, ইচ্ছা করত সুইসাইডকরি বা সারারাত জেগে থাকার পর ভোর বেলা মনে হত আত্মহত্যা করি। এই অনুভূতি কেন হতআজো ও খুঁজে পেলাম না।
কেউ স্মৃতিকাতরতায় আত্মুহত্যা করে, কেউ প্রতারিত হয়ে করে, কেউ বা অনেক ঐশ্বর্য আর বিলাস বহুল জীবনে থেকে ও করে, অনেকে ইনসোমনিয়ায় ভুগে করে, সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে আত্মহত্যার প্রবনতা অহরহ, কেউ মরে যাওয়াটাকে অধিকার ও মনে করে কি অদ্ভূত মানসিক অনুভূতি, কেউ দেশের জন্য-কেউ ধর্মের জন্য জীবন উৎস্বর্গ করে আত্মহত্যা করে, কেউ সাইকোল্লজিক্যাল ডিসঅর্ডার থেকে করে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র থেকে করে, সামাজিক সংহতি কমে বিচ্ছিনতা বেড়ে গেলে করে, আর্থ-সামাজিক কারনে করে, নিজেরসম্মান-সম্ভ্রমের ভয়ে করে। আত্মহত্যার এই বিচিত্র অনুভুতির মত আরেকটা আইডেন্টিকালব্যাপার হল-আত্মহত্যার নানাবিধ উপায়। কেউ রেল লাইনে শরীরটা বিলিয়ে দেয়, কেউ গলায় দড়ি ঝুলায়, কেউ হারপিক খায়, ঘমের ওষুধ খায়, হাতের শিরা-উপশিরা ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলে, ছাদ থেকে লাফ দেয়, বন্দুকের গুলি ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করে, আগুনে ঝাঁপ দেয়, এই সবই মানুষ করতে পারে কারণ বেঁচে থাকার অনুভূতি হারিয়ে গেলে কার্যত সেই মানুষ মরেই যায়,আত্মহত্যা করে সে তার জীবনাবসানের আনুষ্টানিকতা সম্পন্ন করে মাত্র। বিখ্যাত মানুষদের মধ্যে এই প্রবনতা আরো বেশী। সাধারন মানুষের তুলনায় চিন্তাশীল মানুষ যেমন-কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ এই শ্রেনীর মানুষেরা সবচেয়ে বেশী আত্মহত্যা করে। এই সপ্তাহেই দেশে জনৈক গায়িকা আর বিদেশে বিখ্যাত কমেডিয়ান রবিন ঊইলিয়ামসের আত্মহত্যাই তার বড় প্রমাণ। কাকে পাবেন না আপনি এই তালিকায়- জীবনানন্দ, ভ্যানগঘ, আর্নেস্ট হেমিঙ্গওয়ে, ক্লিওপেট্রা, ভার্জিনিয়া উলফ, মেরিলিন মনেরো, সিল্ভিয়া প্লাথ, ইউকো মিশিমা, ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি, এ্যাডলফ হিটলার, টনি স্কট, কার্ট কোবেই, কত প্রিয় মানুষজন এই তালিকায় আছেন ভাবলেই অবাক লাগে।
আত্মহত্যা নিয়ে সবচেয়ে ভাল লেগেছে ফরাসী দার্শনিক ও সমাজতাত্বিক এমিল ডুর্কাইমের ‘দ্যসুইসাইড’ (১৮৯৭) বইটি। এই বইয়ে ডুর্কাইম প্রায় ১৭,০০০ আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করে একটা বিষয় প্রতিষ্টা করতে চেয়েছেন সেটা হল-‘আত্মহত্যা কোন মানসিক ঘটনা নয় এটা একটা সামাজিক ঘটনা’।আত্মহত্যার কারণ আগে সামাজিক পরে মানসিক। তিনি আত্মহত্যাকে চিহ্নিত করেছেন একটা সামাজিক ফ্যাক্ট হিসাবে।