জল্পনা, কল্পনা শেষে বিতর্কিত দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান উপ-নির্বাচন শেষে নির্বাচিত হলেন দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিনোদন পত্রিকা আনন্দভূবনের সম্পাদক আলমগীর হোসেন। শতধা বিভক্ত দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন্দলকে পাস কাটিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। আর আলমগীর হোসেন তার নির্বাচনী প্রচারে যাকে সবচেয়ে কাছে পেয়েছেন তিনি ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টু। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলমগীর হোসেন উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার ফলে শফিকুল ইসলাম সেন্টুর রাজনৈতিক ভাগ্যের দুয়ার নতুন করে উন্মেচিত হয়েছে বলে মনে করছেন দোহারের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেন্টুর এই উত্থানে আওয়ামী লীগের ডাকসাইটের অনেক রাজনৈতিক নেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ।

শফিকুল ইসলাম সেন্টু দোহারের রাজনীতিতে কোন নতুন নাম নয়। এক সময় ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা। তার কর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত নিবেদিত নেতা হিসাবে। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে তিনি নিজ দলেও  ছিলেন উপেক্ষিত। সেন্টুর উত্থান মুলত ২০০১ সালে বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার পর থেকে। সালমান এফ রহমানের একান্ত কাছের লোক বলে পরিচিত পান  সেন্টু।

২০০১ সালে আওয়ামী লীগ বিএনপি জামায়াত জোটের কাছে পরাজিত হয়ে বিরোধী দলের আসনে বসলে শুরু হয় আওয়ামী নেতা কর্মীদের উপর নির্যাতন। এই নির্যাতন থেকে বাদ  যাননি তৎকালীন ছাত্র নেতা শফিকুল ইসলাম সেন্টু। সালমান এফ রহমানের আশীর্বাদে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন এবং তৎকালীন সরকার বিরোধী আন্দোলনে সামনের সারিতেই ছিলেন শফিকুল ইসলাম সেন্টু। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর সালমান এফ রহমানের জেলে যাওয়ার সাথে সাথে সেন্টুর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ফিকে হয়ে যায়।

অন্য খবর  মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ইছামতি নদী

পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলেও সালমান এফ রহমান আগ্রহ হারান দোহার উপজেলা কেন্দ্রীক রাজনীতিতে। উপরন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান খানের সাথে প্রথমে সুসম্পর্ক থাকলেও পরে মতবিরোধ ও দ্বন্দ্বে আর উত্তপ্ত সম্পর্কের জেরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতেই দোহারে অবাঞ্ছিত হয়ে পড়েন সেন্টু। দোহারে আসতে পারেন নি প্রায় ৫ বছর। উল্টো সাধারণ নেতাকর্মীরা তাকে ঢাকা থেকে বরণ করে আনার জন্য মোটর সাইকেল শোভাযাত্রার মাধ্যমে নবাবগঞ্জ হয়ে দোহারে প্রবেশ করার মুখে নবাবগঞ্জে বাধাপ্রাপ্ত হয়। পুলিশের সাথে সেই সংঘর্ষের কারনে দোহারে আসতে পারেন নি তিনি।

কিন্তু সময়ের পালাবদলে দোহার পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হন সেন্টু। মোটামুটি ভাবে শক্ত অবস্থানে চলে গিয়েছিলেন নির্বাচনের এক পর্যায়। কিন্তু আদালতের রায়ে নির্বাচন স্থগিত হলে সেই নির্বাচনে আপাতঃ থামে সেন্টুর রাজনৈতিক রথ। বরং সেই নির্বাচনের পর হটাৎ করেই সাধক ধারায় নিজেকে পরিচালনা করেন। উত্তর জয়পাড়ায় নিজের দরগা তৈরী করে “পীর” হিসাবে আবির্ভূত হন শফিকুল ইসলাম সেন্টু। অনেকে এখানেই শেষ দেখেছিলেন তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের।

কিন্তু রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। আর তাই সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান উপ-নির্বাচনে আবার রাজনৈতিক মঞ্চে একক আধিপত্য নিয়ে এবার হাজির প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও শেখ কামালের বন্ধু সালমান এফ রহমান। এতেই সাথে সাথে দোহারে তার একান্ত কাছের লোক বলে পরিচিত শফিকুল ইসলাম সেন্টুও হাজির হন প্রভাবশালী হিসাবে। ৯ বছর পর সালমানের আগমনী মঞ্চে পা ছুয়ে আশীর্বাদ নিয়ে দোহার উপজেলার রাজনীতির মঞ্চে এ এক নতুন সেন্টু। সালমান এফ রহমান মনোনিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলমগীর হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণায় সবচেয়ে এগুনো ব্যক্তি শফিকুল ইসলাম সেন্টু। দোহার উপজেলার প্রতিটি অলি-গলিতে ঘুরেছেন আলমগীর হোসেনকে নিয়ে। ফুলতলা থেকে নয়াবাড়ি আলমগীর হোসেনের সাথে সব সময় আনারসের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। ফলে তার এই রাজনৈতিক তৎপরতায় সালমান এফ রহমানের কাছে আরো কাছে পৌছে যান “পীর” খ্যাত সেন্টু।

অন্য খবর  দোহারে অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের উদ্বোধন

উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সালমান এফ রহমান দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল দূর করে নতুন করে ঐক্যবদ্ধ করে আওয়ামী লীগকে সাজানোর ঘোষণা বেশ কয়েকবারই দিয়েছেন নির্বাচনের সময়। সেই ঘোষণা মোতাবেক যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে হয়তো সালমান এফ রহমানের দোহারের এই রাজনৈতিক ঘুটি পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান ঘুটি হিসাবে শফিকুল ইসলাম সেন্টুর আগমন ঘটতে পারে বেশ জোরেশোরে। আর এই পট পরিবর্তনে বড় রকমের একটা মার খেতে পারে দোহারে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটা অংশ। যারা বিগত নির্বাচন গুলোতে প্রার্থী পছন্দ না হলেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। যাদের কারণে সম্ভবত  ২০০১ সালে সালমান এফ রহমানকে হারতে হয়েছে দুই হাজারেরও কম ভোটের ব্যবধানে।

ডিসেম্বরেই সরকার মেয়াদ উত্তীর্ণ পৌরসভার নির্বাচনগুলো দ্রুত করার চিন্তা ভাবনা করছে। এই দিক থেকে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন প্রার্থীর নামের সাথে জনমনে গুঞ্জন দলীয় প্রার্থী হতে পারেন শফিকুল ইসলাম সেন্টুও। তবে সময়ই বলে দেবে কে হচ্ছেন দোহার পৌরসভায় নিশ্চিত প্রার্থী।

আপনার মতামত দিন