বেসরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) হিসেবে দেশে মাদকাসক্ত অন্তত এক কোটি। ৫ বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩০ লাখ। গবেষকরা জানিয়েছেন, জিরো টলারেন্সের কথা বলা হলেও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। অভিযোগ আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যোগসাজশেই চলছে মাদক ব্যবসা। খুব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা, কোকেন ও ক্রিস্টালের মতো ভয়ংকর মাদক।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ থেকে ২০২৩-এর জুলাই পর্যন্ত মাদকাসক্ত হয়ে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে (রিহ্যাব) গেছেন অন্তত ৫০ হাজার মাদকসেবী। ৫ বছরে রিহ্যাবে চিকিৎসা নেওয়া নারী মাদকাসক্ত বেড়েছে ৫ গুণ। আর ১৫ ও তার কম বয়সী মাদকাসক্ত বেড়ে হয়েছে তিনগুণ, সংখ্যায় যা ৪৭ হাজার ৩৭৬ জন।
মানসের চেয়ারম্যান ও জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের উপদেষ্টা সদস্য ডা. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, ‘করোনার সময় যখন সবকিছু বন্ধ ছিল, তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাদকের কেনা-বেচা প্রচুর হারে বেড়েছে। এখন এক কোটি মাদকসেবী। একেকজন বছরে ৫৬ হাজার টাকা খরচ করে। সব মিলিয়ে ৮০ হাজার কোটি টাকা খরচ মাদকের পেছনে।’
মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণার ভেতরেই আশংকাজনক হারে বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হেরোইন, প্যাথেডিন, মরফিন আরও যেগুলো আছে সেগুলোর কোনোটাই আমাদের দেশের না। আমরা তো মাদক বানাই না। মিয়ানমার, ভারত থেকে আসে। আর চাহিদা বেশি বলেই আটকানো কঠিন। আমরা চেষ্টা করছি।’
চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে—এমন স্লোগানে র্যাব কর্মতৎপরতা বাড়ালেও কমেনি মাদক চোরাচালান। র্যাব বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে সম্ভব নয় এ যুদ্ধ করা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে সমাজ ও পরিবারের দায়িত্বও রয়েছে। সবাই এক প্লাটফর্মে এসে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি তখনই বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে মাদকের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। দেশে ডিমান্ড এত বেশি বলেই বেশি বেশি মাদক আসে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে।’
কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসার উদাহরণ টেনে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন জরুরি।