শরিফ হাসান, আল আমিন, স্টাফ রিপোর্টার, news39.net: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হলে, নিঃসন্দেহে দোহারের রাজধানী জয়পাড়া। আরও সংক্ষিপ্তকরে বললে, রতন ভাস্কর্য ও এর চারিপাশ। জয়পাড়া বাজার ও ব্যাংকপাড়া অনেকটা মতিঝিলের মতো। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের অদম্য ইচ্ছ্বা থাকে শহুর কেন্দ্রিক। হয়তো সেরকম ইচ্ছ্বা থেকে রতন ভাস্কর্য থেকে ৫০মিটারের মধ্যে গড়ে উঠেছে বিশাল আবর্জনার ভাগাড়। প্রশ্ন হচ্ছে, হে ময়লা! তুমি কার? ডেংগুর না চিকুনগুনিয়ার?
আপনি এই পথে চললে আপনাকে অবশ্যই নাকে-মুখে মাস্ক বা হাত দিতেই হবে। সুবিধে হলো, এই পথে কর্তাব্যাক্তিরা যাতায়াত করেন না। কেন্দ্র বলেই হয়তো পৌরসভার আবর্জনা এই কেন্দ্রীয় পয়েন্টেই ফেলে স্তূপ করা হচ্ছে। ফলে, মশা ও মাছির নিরাপদ চাষাবাদ হচ্ছে। এটি এখন মশার নিরাপদ অভয়স্থল। কিন্ত এই ময়লার দায়ভার কেউ নিতে চায় না। না পৌরসভা, না প্রশাসন। বলা চলে, অনেকটা চোখ বন্ধ করে চলা। এই বিষয়ে কোন কথা বললে খুব গরম পৌরসভা। আর প্রশাসন নিয়মিত মশার কামড় খেলেও যেহেতু দূর্গন্ধ নাকে যায়নি, তাই তাদের দেয়ালে ময়লা ফেলা হলেও, তারাও নির্বিকার। সমস্যা যতো সাধারণ জনগণের, আর সব দায়ভার যেন এমপি মহোদয়ের। তিনি বলবেন, তবেই না কিছু হবে।
মশার স্তূপ যেখানে, সেখানে চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন। অনেকেই এই পথে চলাফেরা করেন। বিশেষ করে, দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পিছনে মাঝিবাড়ীর তথা পৌরসভা ৫নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ জনগণের যাতায়াত এই পথে। পাঠকেরা আবর্জনা কেন কেন্দ্রীয় পয়েন্টে ফেলা হচ্ছে, সেটার লোকেশন দেখলেই বুঝবেন। ভাগাড়ের সামনে রতন ভাস্কর্য, জয়পাড়া সরকারী মডেল স্কুল, কেন্দ্রীয় শ্মশান ঘাট ও বেগম আয়েশা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পিছনে (১০ফিটের মধ্যে) দোহার প্রেসক্লাব, সরকারী টেলিফোন অফিস, আনসার ভিডিপি অফিস ও দোহার উপজেলা পশু হাসপাতাল, আর উত্তরে দোহার উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ এবং দক্ষিণে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই আবর্জনা স্তুপের সামনেই রয়েছে জয়পাড়া পরিবহনের বাস স্ট্যান্ড ও কিছু চায়ের দোকান। এখন পাঠক আপনারাই বলেন, ময়লার পাশেই এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, তাই এখন বিস্ময়কর!! কিছুটা সমস্যা যে কারো হয়নি, তা কিন্তু নয়। দোহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডাক্তার জসিম কিন্তু কিছু প্রচেষ্টা চালিয়েছেন নিজ অর্থায়নে।
ছোটবেলায় পড়েছিলেন, ঈশ্বর গুপ্তের বিখ্যাত কবিতা- রাতে মশা, দিনে মাছি, এই নিয়ে কলকতা আছি। দোহারের প্রাণকেন্দ্র জয়পাড়ার অবস্থাও একইরকম। নতুন করে, ডেঙ্গু আতংক বিরাজ করছে ঢাকাসহ সারাদেশে। আর দোহারে এই আবর্জনার স্তূপ হয়ে উঠেছে ডেংগু মশার নিরাপদ প্রজনন স্থান। সকলের আশংকা এইখান থেকে করোনা ও ডেংগুবিস্তার হতে পারে। একইসাথে চিকুনগুনিয়া বিস্তারের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইতঃমধ্যে নবাবগঞ্জ উপজেলায় করোনা এবং ডেংগু আক্রান্ত এক রোগীকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। কিন্ত সকল কতৃপক্ষই দায় এড়াতে চায়। এখন প্রশ্ন, আবর্জনা তুমি কার? সবশেষ, এই দায়ভার যেন জনসাধারণের। এমপি সালমান এফ রহমানের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া যেন এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ নেই।
এছাড়া, নিয়মিতভাবে, রেণ্ট-কারের চালক ও জয়পাড়া পরিবহনের ড্রাইভারদের, হেল্পারদের মূত্রবিসর্জন আবর্জনার এই পরিবেশকে করেছে আরও পূতিদূর্গন্ধময়। ফলে, চলাচলের জন্য এই রাস্তাটি হয়ে উঠছে অনুপযোগী।
দোহার পৌরসভার প্রকৌশলী মশিউর রহমান। মশিউর রহমানের বার বার বদলীর আদেশ অজানা কারণে স্থগিত হয়। সকল উন্নয়ন কার্যক্রমে তার তত্বাবধায়নে হয়। তিনি news39.net কে বলেন, এই ময়লার সরানোর কোন জায়গা নাই। পৌরসভার বাইরে কাজিরচরে আমরা জায়গা পাবো। সেখানে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ময়লা সরিয়ে নিবো।
এভাবে চলছে দোহার পৌরসভার নাগরিক সেবা। কথা বেশি বললে, অনেক বিরক্তিভাব দেখানো হয় কর্তাব্যাক্তিদের পক্ষ থেকে। এছাড়া, তথ্যসেবা দিবে চরম গড়িমসিতো আছেই।
দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ মাহমুদ নাঈম বলেন, বিষয়টি আমি পৌরসভাকে বলবো, অতিদ্রুত ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে নিতে।
নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে স্থানীয় চা’এর দোকানী বলেন, আর নিছে ময়লা সরায়ে। এসব নিয়ে তাগো মাথা ব্যাথা নাই। আমাগোও সইয়া গেছে। এরকম জায়গায় সবার চোখে সামনে যদি এইকাম ঘটে, তারপরও তারা চোখে না দেখে , তাইলে কিছু করার নাই। যেদিন সালমান রহমান দেইখা, ঠেলা দিবো, সেদিন বুঝবো। তার আগে না।
তাই, দোহার পৌরসভাবাসীর প্রশ্নঃ হে ময়লা! তুমি কার? কবেই বা তুমি দূরীভূত হবে? মানুষ ফেলবে একটু স্বস্তির নিঃশাস !!