শরিফ হাসান, স্টাফ রিপোর্টার; নিউজ৩৯ঃ নেই ফিটনেস, নেই লাইসেন্স, না আছে চালকের, না আছে গাড়ির, চলছে বেপরোয়া, করে না আইন বা প্রশাসনের পরোয়া, এর নাম যমদূত মাহেন্দ্র বা বালুর ট্রাক বা ট্রলি। দোহারে করোনা মহামারিতে চলছে ইট-বালু – মাটির রমরমা ব্যবসা। আবাদি কৃষি রেকর্ডি জমি থেকে শুরু করে সরকারি জমির মাটিও বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। দোহার উপজেলার নারিশা, মুকসুদপুর ইউনিয়নে প্রায় প্রতিটি গ্রামে যেদিকে চোখ যায় শুধু মাটিকাটা আর ভরাট! আর রাস্তায় আছে যমদূত বালু বা মাটির ট্রাক ও মাহেন্দ্র। এছাড়া টানছে ইট, সিমেন্ট, বোল্ডার ব্লক।
আগে যেখানে মাটি কাটা ও ভরাট হতো শ্রমিক কিংবা ড্রেজারে, এখন তা হচ্ছে ট্রাক ও মাহেন্দ্রে। দোহার উপজেলা প্রশাসন মাঝে মাঝেই ড্রাজারে হানা দেয় ভূমিদস্যু ও মাটিখোরদের ধরতে। প্রায়শই করা হচ্ছে জেল-জরিমানা। কিন্তু এতেও থেমে নেই তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড।
এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রধান অংশ রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ানো কয়েকশত ফিটনেসবিহীন, লাইসেন্সবিহীন ট্রাক ও মাহেদ্র! এ যেন সাক্ষাৎ যমদূত। গত ৩ বছরে মুকসুদপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫ জন মারা গিয়েছে মাহিন্দ্রের চাপায়। বার বার দিনে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিলেও, এসব ভারি যানবাহন চলছে অবাধে। কিসের যেন এক অদৃশ্য বল তাদের পিছনে!
দোহার উপজেলার মুকসুদপুর ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দুবলী বাজার ও মৌড়া গ্রামের রাস্তাগুলোও অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন ট্রাক মাহেন্দ্রের দখলে। চালকদের কারো নেই কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিটি রাস্তায়।
মাটি, বালি, খোয়া, ইটাসহ যেকোন মালামাল পৌঁছে দিচ্ছে যেকোন গন্তব্যে। মালামাল বহনকালে মালের উপরে ঢাকনা বা ত্রিপোল ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা মানছেনা যমদূত এই দানবরা। এই কারণে রাস্তায় বাড়ছে দুর্ঘটনা, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। রাস্তা হয়ে উঠছে অন্যান্য যানবাহনের জন্য চলাচলের অনুপযোগী।
দোহার উপজেলার দুবলী গ্রামে সর্বত্র ফসলি জমির মাটি কেটে সড়ক পথে উন্মুক্তভাবে তা বহন করে চলেছে মাহেন্দ্র গুলো। এদের কারণে মুকসুদপুর ইউনিয়নের দুবলী, মৌড়া গ্রামের বিভিন্ন রাস্তার শাখা, প্রশাখায় চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে চরম আতংকে মাহেন্দ্র বা ইট-বালুর ট্রাক মানেই দূর্ঘটনা, মৃত্য। এমন আতংকে সবাই।
এসব গাড়ির বড় আকারের চাকা, গতি ও বেপরোয়া ভর্তি করে আপলোড করার কারণে আশপাশের ঘর-বাড়ি, দোকান আর গাছপালাও এখন ধুলায় ছেয়ে গেছে। চলাচলের সময় ধুলার জন্য কিছুই দেখা যায় না। এমনকি শ্বাস নিতেও কষ্ট হয় চালক ও যাত্রীদের।
অনেক সময় বহনকারী বালি, মাটি ও ইটের ছোট্ট কণা পিছনে বা সাইডে অন্যচালক ও যাত্রীদের চোখে পড়ে সড়ক দূর্ঘটনায় অনেকে আহতও হচ্ছে।
এই নিয়ে মাঝে মাঝেই অন্যযাত্রী ও চালকদের সাথে হাতাহাতি হচ্ছে মাহেন্দ্র, ট্রাক চালক ও মালিকদের।
আর রাস্তা ঘাটের ক্ষতিতো হচ্ছেন। নতুন নতুন রাস্তাগুলোও দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে, পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে, ইট ও মাটির রাস্তাগুলোতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে এদের কারণে। রাস্তায় মাটি পড়ে ধুলোর সৃষ্টি হচ্ছে।
আর সে মাটিতে সামান্য পানি পড়লেই রাস্তা হয়ে উঠে আরও ভয়ংকর। মাটি পানি মিস্রিত কাঁদায় দুই চাকার চালক যাত্রীরা পিচলে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হচ্ছে অহরহ।
এদের মালিক ও ঠিকাদাররা শক্তিশালী হওয়ায় জনসাধারণ এদের সামনে অসহায়। অনেকে অভিযোগ করলেও, প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না কেউই। ধুলোবালির সাথে যুদ্ধ করেই চলতে হচ্ছে তাদের।
ফলে শ্বাসকষ্ঠ, চুলকানি, হাঁপানিসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
চিকিৎসকদের মতে, শ্বাসনালী দিয়ে এসব ধুলোবালি প্রবেশের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সারের মতো জটিল রোগও হতে পারে মানুষের।
স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াসীম ও অন্য অন্যরা জানান, আমরা দুবলী বাসি এই মহেন্দ্র কারনে অতিষ্ঠ হয়ে পরেছি। তাছাড়া জয়পাড়া থেকে আসার সয়ম আমাদের দুবলী বাজারে টুকার দুটি রাস্তাছিল তার মধ্যে একটি রাস্তা মাহেন্দ্রা চলাচলের ফলে ভেঙে যায়। আর সেই জন্য রাস্তাটি এখন চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয়ে পরছে। তার কারনে তারা বিকল্প রাস্তা ধরেছে এ রাস্তাটিও ভেঙে গেলে আমাদের চলাচলের জন্য অনেক সমস্যা হবে। তাই আমরা আপনাদের মাধ্যমে দোহার প্রশাসনকে জানাতে চাই যে কৃষি জমি থেকে মাটিকাটা বন্ধ করে আমাদের দুবলী বাজার ও মৌড়া গ্রামকে যাতে তারা রক্ষা করে।
এ বিষয় দোহার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্রের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমরা আপনাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি এই বিষয় আমরা ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো। আর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমরা সেই পদক্ষেপ নিব।
এলাকাবাসীর দাবি, এর বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে জনসাধারণের জানমাল রক্ষার্থে এগিয়ে আসবে দোহার উপজেলা প্রশাসন। তাদের মতে, উপর মহলের সঠিক একটি সিদ্ধান্তই বদলে দিতে পারে দোহার উপজেলার মুকসুদপুর ইউনিয়নের দুবলী ও মৌড়ার পরিবেশ।