- খুনী শফিক আমার ছেলে রে ফোন কইরা বাসায় নিছে। ওগো বাড়িতে যাওয়ার পর খুনী জাকির ইনজেকশন দিয়া আমার ছেলেরে মাইরা দুয়ারে (উঠানে) ফালাইয়া রাখছে। এরপর ওগো দলের স্বজিব নামের একটা ছেলে আমাগো বাড়িতে আইয়া আমাগো খবর দেয়। শফিকগো বাড়িতে গিয়া দেখি আমার পোলারে মাইরা অজ্ঞান কইরা ফালায় রাখছে। কেউ আমার ছেলেরে হাসপাতালে নেয়নি। অইখ্যানে জাকির, জুয়েল মাষ্টার, স্বজিপসহ আরো অনেকে ছিল। কিন্তু কেউ আমার ছেলেরে বাচানোর চেষ্টা করেনি। উল্টা ছেলেরে ধরতে গেলে জাকির আমার স্বামীরে ধমক দিইয়া ওর কাছে যাইতে কয়। বলে এখানে সাইন দে, নইলে তোর ছেলেরে দেব না। আপনারাই বলেন, আমার ছেলে রে যদি ওরা না মারত, তাইলে কেন ওরা আমার ছেলেরে নেয়ার জন্য স্বাক্ষর নিলো? কেন ওরা আমার ছেলেরে ধরলো না। এভাবে মানববন্ধনে কান্না জড়িত কন্ঠে নিহত জাকিরের বৃদ্ধ মা পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, পুলিশ বাবারা, আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। আজ যদি আমার যায়গায় আপনার মা থাকতো, তখন কি করতেন? আমারে যারা সন্তান হারা করেছেন, তাগো আটক করেন। ওগো আটক না করতে পারলে আমারে আটক করো।
- সোমবার সকালে নবাবগন্জ উপজেলার নয়নশী ইউনিয়নের খেজুরবাগ গ্রাম বাসীর উদ্যেগে নিহত জাকির হত্যাকারীদের আটক ও বিচারদাবীতে আয়োজিত মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যক গ্রামবাসী অংশ নেন। তারা জাকির হত্যায় জড়িত আসামীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে বক্তৃতা করেন। থানা পুলিশের নিকট, পুত্র হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাকিরের মা-বাব, ভাই-বোনসহ এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য যে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর জাকিরকে ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। এমন অভিযোগ করে ৪-৫ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ১ মাস ২ দিন পার হলেও এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলে অভিযোগ করেন জাকিরের পরিবার। - জাকিরের পিতা আবুল কালাম বক্তৃতায় বলেন, বাবার আগে ছেলের বিদায় বড়ই কষ্টের। পৃথিবীতে এর চাইতে বড় শোক আর নেই। আমরা এখন জীবিত থাকতেও মৃত। আসামি শফিক ও জাকির আমার ছেলেকে বাসায় ডেকে নিয়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য সামগ্রী খাইয়ে মারধর করে শফিকের বসত বাড়িতে ফেলে রাখে। ওরাই আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। কিন্ত এখনো কোনো আসামি ধরা পড়েনি। আসামি জাকিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। হত্যা করেও ওরা প্রকাশ্যে ব্যবসা করছে। আমরা গরিব বলে কি বিচার পাব না।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নে চর শৈল্যা গ্রামে ডেকে নিয়ে নেশা জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য খাওয়ানো হয় বলে অভিযোগ জাকিরের পরিবারের। পরের দিন ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাকির হোসেন।জাকিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। ঘটনায় ১০দিন পর পুলিশ জাকিরের সস্ত্রীকে বাদী করে মামলা নেয়। মামলায় আসামী করা হয় পুরান তুইতালের মো. শফিক ও আফজালনগরের মো. জাকিরসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনের নামে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেন। কিন্তু ঘটনার এক মাস দুদিন অতিবাহিত হলেও এখনো কোন আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
আপনার মতামত দিন