দোহার-নবাবগঞ্জের গরুর রয়েছে আলাদা চাহিদা

335
দোহার-নবাবগঞ্জের গরুর রয়েছে আলাদা চাহিদা

ঢাকার দক্ষিনের পাশাপাশি দুইটি উপজেলা দোহার ও নবাবগঞ্জের গরুর আলাদা চাহিদা রয়েছে ঢাকায়। সম্পুর্ন প্রাকৃতিক উপায়ে লালিত-পালিত এই দুই উপজেলার গরুর সুনাম আছে সারা দেশেই। কোরবানীর ইদ সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন এই দুই উপজেলার গরুর খামারীরা। কোনো প্রকার ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ছাড়াই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

আর কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জের গরুর খামারিরা। প্রতি বছর ঈদে দেশীয় গরুর চাহিদা ভালো থাকায় খামারিদের পাশাপাশি পারিবারিকভাবে লালন পালন করছেন কৃষকরাও। প্রতি বছর এসব সুস্থ গরু নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ আশেপাশের জেলাগুলোর হাটে বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছেন খামারিরা। তবে এবার করোনার কারণে খামার থেকেই গরুগুলো বিক্রির চিন্তা ভাবনা করেছে খামারিরা।

দোহার উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিগত কয়েক বছর ধরে দোহার উপজেলায় দেশি জাতের প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মোটাতাজা করা এসব গরু কোরবানির বাজারে আলাদা কদর তৈরি হয়েছে। উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নে গরুর রিস্টু পুষ্টুকরণ (মোটাতাজাকরণ) খামার রয়েছে ২৫০টি।

এছাড়াও ডেইরি ফার্ম রয়েছে বড় ৭৪টি। উপজেলায় বড় ২১টি ও মাঝারি ৫৩টি সহ ছোট-বড় মিলিয়ে উপজেলায় মোট ১৫০৭ টি খামার রয়েছে।

দোহার উপজেলায় বিলাশপুরের খান ডেইরি ফার্ম, দোহার খালপাড় এলাকার রফ রফ ডেইরি ফার্ম, দোহার গ্রামের মা-বাবার দোয়া ডেইরি ফার্ম, ভাই-ভাই ডেইরি ফার্ম ঘুরে দেখা যায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পশুর যত্ন নিচ্ছেন খামারিরা। পশুগুলোকে রাখা হয়েছে শুষ্ক জায়গায়। ঘরের ভেতরে রয়েছে ফ্যান। খাওয়ানো হচ্ছে ঘাস, খড়, ভুসি ও খৈলসহ দেশীয় খাবার। গরু মোটাতাজাকরণে কোনো প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য খাওয়ানো হচ্ছে না বলে জানান খামারিরা। কৃত্রিমতা ছাড়াই গরু হৃষ্টপুষ্ট করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন খান ডেইরি ফার্মের মালিকরা।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে ভন্ড ফকিরের অপচিকিৎসায় প্রবাসীর মৃত্যু

দোহার উপজেলার বিলাশপুর এলাকায় অবস্থিত খান ডেইরি ফার্মের পরিচালক মো. রুবেল জানান, আমরা গরুর খাবারের ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নশীল। এখানে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার গরুকে খাওয়ানো হয়। সাধারণত গরুকে প্রাকৃতিক পন্থায় মোটাতাজা ও সুস্থ রাখতে খড়, লালি-গুড়, ভাতের মাড়, তাজা ঘাস, খৈল, গম, ছোলা, খেসারি, মাসকলাই, মটরের ভুসিসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দেয়া হয়। এ নিয়মে গরু মোটাতাজা করা হলে ক্রেতা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন না এবং এ ধরনের গরুর মাংস খেয়েও মানুষের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। মোটাতাজা করার জন্য কোনো প্রকার রাসায়নিক খাবার দেয়া হয় না।

তিনি আরো জানান, তাদের খামারে মোট ৮১টি গরু রয়েছে। যার মধ্যে গাভী ২০টি, ষাঁড় ৪০টি, বকনা ২১টি। এছাড়া ছাগল-ভেড়া মিলিয়ে রয়েছে ৪০টি। এসব গরুর আলাদা চাহিদা রয়েছে জানিয়ে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি। করোনাভাইরাসের কারণে এবার গরুগুলো বাড়ি থেকে বিক্রি করা হবে। ইতিমধ্যে বেশ সাড়াও পেয়েছেন বলে জানান তিনি। মাংসের পাশাপাশি উপজেলার দুধের চাহিদাও পূরণ করছে খান ডেইরি ফার্ম। ২০টি গাভী থেকে দৈনিক প্রায় ১৫০ লিটার দুধ উৎপন্ন হন বলে জানান খান ডেইরি ফার্মের পরিচালক রুবেল। দুধগুলো উপজেলার বিভিন্ন মিষ্টির কারখানার চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয়দের মাঝে সরবরাহ করা হয়।

অন্য খবর  দোহারে এশিয়ান টিভির ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।

দোহার উপজেলার মধ্যে খান ডেইরি ফার্ম একটি আদর্শ ফার্ম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন বলে জানান উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. শামীম হোসেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সহযোগিতায় ফার্মটি গড়ে উঠেছে। খান ডেইরি ফার্মের পরিচালক মো. রুবেল আরো জানান, ২০১৮ সালে তারা সাত ভাই যৌথভাবে ১৪টি গরুর নিয়ে নির্মাণ করেন খান ডেইরি ফার্ম। ছোট একটি শেডে ফার্মের কার্যক্রম শুরু হয়। মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে ৩টি শেডে বর্তমান গরু রয়েছে ৮১টি। মাত্র ১০ লাখ টাকা নিয়ে মূলধন শুরু করলেও মূলধন বাড়িয়ে তা এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। খামারে জার্সি, ফ্রিজিয়ান, শাহী ওয়াল, শংকর জাতের গরু রয়েছে।

এখন খামারে তারা ৩ ভাই এবং ৪ জন কর্মচারী গরুগুলো পরিচর্যা করেন থাকেন। কয়েকজন খামারি জানান, গত বছর ও তার আগের বছরগুলোতে ঈদুল আজহা সামনে রেখে এ অঞ্চলের কিছু কিছু অসাধু মৌসুমি ব্যবসায়ী গরুকে মোটাতাজা করতে স্টেরয়েড জাতীয় নানা ওষুধ ব্যবহার করেছে। অস্বাধু উপায়ে গরু মোটাতাজা করতে গিয়ে গরু মরে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে এবার খামারিরা প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ মনোযোগী হয়েছেন। এখন দোহারের বেশিরভাগ খামার মালিকরাই প্রাকৃতিক উপায়েই গরু মোটাতাজাকরণ করেন।  তাদেরও প্রত্যাশা খামার থেকেই বিক্রি হয়ে যাবে গরুগুলো।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. শামীম হোসেন বলেন, এ উপজেলার খামারিরা দেশীয় পদ্ধতিতে যত্ন নিয়ে গরু লালন-পালন করছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা খামারগুলোতে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। করোনার এমন দুর্যোগের মধ্যেও আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি।

আপনার মতামত দিন