দোহারে প্রেম নিয়ে দ্বন্দ্বে ভয়াবহ সংঘর্ষ: প্রতিবেশীর মৃত্যু

    837

    স্পেশাল করসপন্ডেণ্ট; নিউজ৩৯: দোহারে প্রেম নিয়ে সংঘর্ষের জেরে একজন মারা গিয়েছে। মৃত ব্যাক্তির নাম মো. রাসেল, পিতার নাম – আব্দুর রশিদ (সাবেক মেম্বার), মইতপাড়া, দোহার । মৃত্যুর ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা ৭/৮ টি মোটর বাইক ভাংচুর করে ও ৭টি বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয়।


    ঘটনার সরেজমিন প্রতিবেদনে জানা যায়, দোহারের মালিকান্দা এন্ড মেঘুলা কলেজের একাদশ শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী – মনির ও সোহান প্রেমে পড়ে রাকা নামে একই কলেজের একই শ্রেণীর এক ছাত্রীর। সোহান ও মনিরের বাড়ী মইতপারায়, খালের এপার আর ওপার। আর রাকার বাড়ী নারিশায়। বিষয়টি নিয়ে তাদের মাঝে প্রথমে দ্বন্দ্ব ও পরে শত্রুতার সৃষ্টি হয়।

    বিষয়টি চরম আকার ধারণ করে, মনিরের সাথে রাকার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেলে ও সোহানের সাথে রাকার দূরত্ব সৃষ্ট হলে। রাকার কাছে সোহান ও মনিরের একে অপরের নামে বানোয়াট কথা বলেছে, এই অভিযোগে তাদের মাঝে শত্রুতা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে, রবিবার মনির ও সোহানের মধ্যকার কথা কাটাকাটি থেকে মনির সোহানকে মারধর করে।

    সোমবার সকাল ১০টার পরে, সোহানের মারধরের বিষয়ে জানতে ও ঘটনার মীমাংসার জন্য কথা বলতে মইতপাড়া আসে সোহানের পরিচিত শাকিল, সাইম মোল্লা, আল-আমিনসহ আরো অনেকে।

    অন্য খবর  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওই ৪টি ধারায় যা আছে

    কিন্ত সোহানের পক্ষ ও মনিরের পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা ও তর্কাতর্কির একপর্যায়ে উত্তেজনা থেকে উভয় দলেরর মধ্যে কথাকাটি, ধস্তাধস্তি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এসময় রাসেল নামে একজন জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


    রাসেলকে মাথায় ইটের আঘাত করা হয়েছে বলে তার স্বজনেরা অভিযোগ করেন। রাসেলের মৃত্যুর সংবাদ দ্রুত মইতপাড়া গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা এসময় উত্তেজিত হয়ে প্রতিপক্ষকে ধাওয়া দিলে তারা মটরবাইক ফেলে পালিয়ে যায়। উত্তেজিত জনতা তাদের ফেলে রাখা মটরসাইকেলগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ-র‍্যাব ঘটনাস্থলে পৌছে টানা তিন ঘন্টার চেষ্টায় সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং ২ জনকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন শাকিল (ছোট) ও রাজন।


    সংবাদ পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে দোহার সার্কেল এসপি মাসুম, এএসপি জহিরুল ইসলাম, দোহার থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ সাজ্জাদ হোসেন, ওসি (তদন্ত) আরাফাত রহমান, ফুলতলা পুলিশ ফাড়িঁর ইন-চার্জ জাহাঙ্গীর আলম, র্যা ব-১১এর সদস্যসহ মুকসুদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান খান ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে চেষ্টা চালান। দোহার ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থানে গিয়ে মটরসাইকেলের আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন । মটরসাইকেলগুলো দোহার থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

    অন্য খবর  দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন


    দোহার সার্কেল এসপি মাসুম আহমেদ বলেন, বন্ধুদের মধ্যকার বিবাদকে কেন্দ্র করে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত, প্রাথমিকভাবে আমরা তাদেরকে সনাক্ত করেছি এবং ২(দুই) জনকে আটক করেছি। অন্যদেরও আমরা দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনবো।
    জানা গেছে, ফুলতলা পুলিশ ফাঁড়ির ইন-চার্জ জাহাংগীর হোসেন আইও বা তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হচ্ছেন।
    দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডা. ওমর ফারুক নিউজ৩৯কে জানান, মৃতের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন নেই। হাতাহাতির ঘটনায় হয়তোবা স্ট্রোক করে করে মারা যেতে পারে। তবে মাথার পিছনে ফোলা ছিলো, সেখান থেকে কিছুটা রক্ত বের হয়েছে। এখন ময়নাতদন্ত শেষে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে যে সেটি কি আঘাত জনিত নাকি মাটিতে পড়ে যাওয়ার কারণে হয়েছে।

    ঢাকা জেলা ছাত্রলীগ দক্ষিণের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন সোহাগ নিউজ৩৯কে বলেন, আইন সবার জন্য সমান। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। আর এই ঘটনায় কেও যদি ছাত্রলীগকে ব্যবহারের অপচেষ্টা করে থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

    আপনার মতামত দিন