তারেক রাজীব,নিউজ৩৯ঃ সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সাংসদ সালমান এফ রহমানের আন্তরিক উদ্যোগে মামলা তুলে নেয়ার পর ৩ মাসের মধ্যে পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলো উচ্চ আদালত। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন মংগলবার দীর্ঘ ১৯ বছর পর দোহার পৌরসভার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছেন। তফসিল নিম্নরুপঃ
রিটার্নিং অফিসারের নিকট মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখঃ ১২ই সেপ্টেম্বর,২০১৯
রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখঃ ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯
প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষ তারিখঃ ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
ভোটগ্রহণের তারিখঃ ১৪ই অক্টোবর, ২০১৯, সকাল ৯.০০ টা থেকে বিকাল ৫.০০ পর্যন্ত
উল্লেখ্য দোহার উপজেলার জয়পাড়া, রাইপাড়া, সুতারপাড়া ও মাহমুদপুর ইউনিয়নের আংশিক নিয়ে ২০০০ সালে গঠিত হয় দোহার পৌরসভা। ওই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর সীমানা ও ভোটার তালিকা নিয়ে মামলা হওয়ায় দীর্ঘ ১৯ বছর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সম্প্রতি পৌরসভা নিয়ে করা মামলা বাদীরা তুলে নেয়ায় ৩ মাসের মধ্যে পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর গঠিত বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
দোহার উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানায়, দীর্ঘ সময় দোহার পৌরসভার নাগরিকরা তাদের পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে উচ্চ আদালতের নির্দেশে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দোহার-নবাবগঞ্জ ঢাকা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সার্বিক উন্নয়ন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, দোহার পৌর এলাকার ভোটাররা তাদের দীর্ঘদিনের হারানো ভোটাধিকার ফিরে পাচ্ছেন। যা অনেক আনন্দের বিষয়। দোহার উপজেলার উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে এ নির্বাচন একটি মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে বলে তারা মনে করেন।
পৌরসভার নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর সীমানা জটিলতা, কতিপয় দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধি এবং অভ্যন্তরীণ বিভেদে লিপ্ত কতিপয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার হস্তক্ষেপে দীর্ঘ ১৯ বছর তারা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন।
পৌরবাসীর অভিযোগ, নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ভয়ে কতিপয় জনবিচ্ছিন্ন জনপ্রতিনিধিরা তাদের দুর্নীতিকে আড়াল করতে বিভিন্ন উপায়ে ১৯ বছর নির্বাচন হতে দেননি। ফলে পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন পৌরবাসী।
২০১৩ সালে দোহার পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের ৩ দিন পূর্বে চরলটাখোলা গ্রামের মৃত আবদুল হালিমের ছেলে আবদুস সোবাহান ও কাঁঠালিঘাটা গ্রামের মৃত ফায়জদ্দিন বেপারীর ছেলে মজিবর রহমান পৌর এলাকার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন। ফলে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। মুঠোফোনে আবদুস সোবাহানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, দোহার পৌর এলাকার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে তিনি মামলা তুলে নিয়েছেন।
এছাড়া কাঠালিঘাটা গ্রামের মৃত ফায়জদ্দিন বেপারীর ছেলে মজিবর রহমান ভোটার তালিকা ও পৌরসভার সীমানা নিয়ে মামলা করায় দোহার পৌরসভা নির্বাচনের পথে এগিয়ে যেতে পারেনি বলে পৌরবাসীদের অভিযোগ।
পৌরসভার বর্তমান মেয়র আলহাজ আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, পৌর এলাকার সীমানা নিয়ে আমার জানামতে ৪টি মামলা হয়। যথাসময়ে নির্বাচন হলেও বয়স হয়েছে। এখন আর ভালো লাগে না। প্রতি অর্থবছরে লোক দেখানো কোটি কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হলেও বাস্তবের সঙ্গে তার কোন মিল নেই। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি দেখানো হয়। জনগণ পৌরসভার সাথে থাকতে চায় না। তারা নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করে না। আমি তাহলে কিভাবে উন্নয়ন করবো।
দোহার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশের কপি গত ৭ আগস্ট আমরা হাতে পেয়েছি। নির্দেশ হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে।
দোহার নির্বাচন কার্যালয় জানায়, ২০১৩ সালের ১৮ এপ্রিল দোহার পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ২৫ মে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তফসিল ঘোষণার পরপর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে মেয়র পদে ১৫ জন ও নয়টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৭৬ জন ও তিনটি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাই, প্রার্থিতা বাতিল ও প্রত্যাহারের পর প্রতীক বরাদ্দ পান ৭৪ জন প্রার্থী। নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছিলেন প্রার্থীরা। এক যুগ পর নির্বাচন হওয়ায় ভোটাররাও ছিলেন নতুন জনপ্রতিনিধিকে বেছে নেওয়ার অপেক্ষায়। সেই মুহূর্তে ৭ মে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড মাহমুদপুর ইউনিয়নের চর লটাখোলার বাসিন্দা আবদুস সোবহান বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদন করেন।