স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান- উস্তাদ নোমান আলী খান

1624

আমি আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। স্বামী – স্ত্রীর আয়াতে আল্লাহ তিনটি উপাদানের কথা উল্লেখ করেছেন, যে উদ্দেশ্যে তিনি স্বামী-স্ত্রী তৈরি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন – وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ – “আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।” (৩০:২১)

সবার আগে যে ব্যাপারটা তোমাদের জানা দরকার তা হলো, তিনি তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মধ্য থেকে। এর থেকে আমরা কী শিক্ষা গ্রহণ করবো? এর থেকে শিক্ষা হলো – আমাদের সঙ্গিনীরা আমাদের একটি অংশ। হ্যাঁ, আপনার স্ত্রী আপনার অংশ; সে স্বতন্ত্র একজন মানুষ, কিন্তু কিছু অর্থে সে আসলে আপনার সম্প্রসারিত একটি অংশ। তার জন্য যা ভালো তা আসলে আপনার জন্যেও ভালো। আপনার জন্য যা উত্তম তার জন্যেও আসলে তা উত্তম। যা আপনাকে কষ্ট দেয় তা তাকেও কষ্ট দেয়, আর যা তাকে কষ্ট দেয় সেটা আপনাকেও কষ্ট দেয়। এই অর্থে আপনারা দুইজন মিলে একজনে পরিণত হয়েছেন। এটা হলো – ‘মিন আনফুসিকুম’ এর শিক্ষা।

তারপর আল্লাহ বলেছেন – لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا – স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের উদ্দেশ্য হলো, তুমি যখন তার দিকে ফিরবে তুমি যেন প্রশান্তি, স্বস্তি এবং নিরুদ্বেগ স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করো। আমি বলিনি যে তুমি তার মধ্যে প্রশান্তি পাও; এমনকি তার কথা মনে হলেই তুমি এক ধরণের প্রশান্তি অনুভব করো। এমনকি তার কথা মনে হলেই…. যখন তোমার মন তার ব্যাপারে চিন্তা করতে শুরু করে, তুমি তখন প্রশান্তি অনুভব করো। তোমার জীবনে হয়তো সমস্যার অন্ত নেই, কিন্তু তোমার জীবন সঙ্গীর কারণে সেগুলো ম্যানেজ করা সম্ভব হয়।

অন্য খবর  দোহার সমিতির মন্ডপ পরিদর্শন

তারপর তিনি বলেছেন – وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً – “আর তিনি তোমাদের মধ্যে তীব্র ভালবাসা সৃষ্টি করেছেন।” আপনি আপনার জীবন সঙ্গীর জন্য যে ভালোবাসা অনুভব করেন তা আপনার নিজের কাছ থেকে আসেনি। সেই ভালোবাসা এসেছে আল্লাহর কাছ থেকে। আল্লাহ হলেন সকল ভালোবাসার মালিক। তিনিই স্বামী স্ত্রীর মাঝে এটা দিয়েছেন। খেয়াল করে দেখুন, তিনি কি ভালোবাসার কথা আগে বলেছেন নাকি শান্তির কথা আগে বলেছেন? তিনি শান্তির কথা আগে বলেছেন। ঠিক কিনা?

জানেন? এর মানে কী? আপনি যদি ভালোবাসা বজায় রাখতে চান তাহলে কী ঠিক রাখতে হবে আগে? শান্তি, পারিবারিক শান্তি। এই শান্তি যদি হুমকির সম্মুখীন হয়, আপনাকে সবার আগে এই হুমকি দূর করতে হবে। সারাক্ষণ ঝগড়া করে বলতে পারেন না – ‘বাই দা ওয়ে, আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি।’ এই ভালোবাসা দিন দিন দুর্বল হতে থাকবে এবং একসময় তা হারিয়ে যাবে। এরপর শুধু মৌখিক ভালোবাসা বিরাজমান থাকবে। একমাত্র ভালবাসা তখনি টেকসই হবে যখন এর ভিত্তিপ্রস্তর নির্মিত হবে শান্তির উপর। তথা, স্বামী স্ত্রীর এই সম্পর্কে অশান্তি না থাকা, শান্তি এবং নিরাপত্তা থাকা। এই সমস্ত ব্যাপারগুলো আগে নিশ্চিত করতে হবে, তবেই ভালোবাসা জীবিত থাকবে। এটা হল ভিত্তি।

অন্য খবর  আফগানিস্তানে নারীদের ‘পাতলা, আঁটসাঁট ও ছোট’ পোশাক নিষিদ্ধ 

এরপর তিনি বলেছেন – ‘ওয়া রাহমাহ।’ সবশেষে শুধু ভালোবাসা নয় বরং সেই ভালোবাসার ভিত্তিতে তিনি যত্ন সৃষ্টি করেছেন। এখানে রাহমাহ বলতে কী বোঝায়? আপনাকে এমনভাবে কথা বলতে হবে যেন সে আঘাত না পায়, এমন কাজ করতে হবে যার কারণে সে কষ্ট না পায়, স্বামীকে তার স্বাভাবিক অবস্থার বাইরে গিয়ে নিশ্চিত করতে হবে যেন তার স্ত্রী ভালো থাকে। স্ত্রীকে তার স্বাভাবিক অবস্থার বাইরে গিয়ে নিশ্চিত করতে হবে স্বামীর যেন কোনো অসুবিধা না হয়।

স্বামী স্ত্রী একে অন্যকে নিবিড়ভাবে জানার কারণে তাদের ভালো করেই জানা থাকে কোন কথাটি বা কাজটি তার সঙ্গীকে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত করে তুলবে।এই জানা থাকার কারণে কখনো কখনো আপনি এটি ব্যবহার করে থাকেন। ঝগড়ার সময় যে ব্যাপারটা তাকে বেশি আঘাত করবে আপনি ঠিক সেটাই বলে থাকেন। অথবা কোনো একভাবে জেনেছেন আপনার অমুক অমুক ভুলটি আপনার সঙ্গীকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছিলো। কিন্তু আপনি সেটা পরিবর্তনের কোনো তোয়াক্কা করেন না। “তাকে এটা মেনে নিতে হবে। আমি এমনই।” এমন মনোভাব সম্পর্কের মাঝে ‘রাহমার’ (দয়ার, যত্নের) অভাব প্রমাণ করে। ভালবাসা এখনো আছে কিন্তু ‘রাহমাহ’ নেই। বুঝতে পারছেন? সুতরাং, মহান আল্লাহ তায়ালা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে এই তিনটি ব্যাপার নির্ধারণ করে দিয়েছেন। শান্তি, তীব্র ভালোবাসা এবং সবশেষে যত্ন।

আপনার মতামত দিন