দোহার – নবাবগঞ্জ – শ্রীনগরবাসীর চাওয়া আড়িয়াল বিলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

1273

তারেক রাজীব, জোবায়ের শরিফঃ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় এখন দোহার – নবাবগঞ্জ – শ্রীনগরবাসীর আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের পক্ষে জনমত গড়ে উঠছে ব্যাপকভাবে। দোহার – নবাবগঞ্জ – শ্রীনগরবাসীর বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার উপদ্বেষ্টা সালমান এফ রহমানের নিকট চাওয়া আড়িয়াল বিলে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ।

উড়োজাহাজ চলাচল খাতে ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ঢাকার অদূরে বিশ্বমানের একটি নতুন বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর ২০১০ সালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এজন্য ঢাকা-মুন্সিগঞ্জের বেশ ক,টি উপজেলাজুড়ে থাকা আড়িয়াল বিলকে বেছে নেওয়া হয়।

কিন্তু তখন ‘বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারণে’ আড়িয়াল বিলের আশপাশের বাসিন্দারা ওই নির্মাণ প্রকল্পের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন করেন। কিন্তু এখন সেই এলাকায়ই বিমানবন্দর নির্মাণের পক্ষে জনমত গড়ে উঠছে। এমনকি এর পক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করে তারই মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদন পাঠানোরও প্রস্তুতি চলছে।

আড়িয়াল বিলের আশপাশের গ্রামগুলোর বাসিন্দারা জানান, দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন জলাশয় আড়িয়াল বিল। সরকার প্রথমে এখানে বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পর তাদের মধ্যে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল। গ্রামের বাড়িঘর ছেড়ে দিতে হবে, ক্ষতিপূরণের অনিশ্চয়তাসহ নানা বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়। কিন্তু সরকারের পদ্মাসেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পে পুনর্বাসন কার্যক্রম ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ দেখে এখন তারাই বিমানবন্দর নির্মাণের পক্ষ নিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে প্রকল্প এলাকায় যেন গ্রামের জায়গা না থাকে, সে দাবিও জানান তারা।

জানা যায়, আড়িয়াল বিলের বিস্তৃতি প্রায় এক লাখ ৬৬ হাজার ৬০ একরজুড়ে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য প্রয়োজন হবে ১০ হাজার ৯৫৫ একর জায়গা। এটি নির্মাণকালে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই বিলটিতেই আরেকটি প্রকল্প ‘বঙ্গবন্ধু সিটি’র জন্য ১৫ হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে।

অন্য খবর  ৬০ বছর পর ‘বন্ধুর’ সাথে দেখা: পাকিস্তানি প্রেসিডেন্টকে ক্ষমা চাইতে বললেন সালমান এফ রহমান

বিমানবন্দর নির্মাণে এলাকাবাসীর মতের বিষয়টি জানিয়ে ‘আড়িয়াল বিল রক্ষা কমিটি’র আহ্বায়ক শাহজাহান বাদল বলেন, ‘গ্রাম বাদ দিয়ে আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের দাবি আমাদের। গ্রামবাসী এই দাবির সঙ্গে রয়েছে। এখন যদি আবার বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য গ্রামে জায়গা দাবি করা হয়, তাহলে আবার আন্দোলন হবে। এই আন্দোলন গ্রামবাসীর অংশগ্রহণে হবে।’

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাস্তবায়ন কমিটি’র আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন তালুকদার বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনায় শুরু থেকেই গ্রাম বাদ ছিল। কোনো বাড়িঘর প্রকল্পের আওতাধীন ছিল না। গ্রামবাসীর এই দাবির সঙ্গে আমরা একমত। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য প্রয়োজন হবে ১০ হাজার ৯৫৫ একর জায়গা। ১৪ হাজার ৬০০ ফুট থাকবে রানওয়ে। যা দিয়ে উড়োজাহাজ এয়ারবাস এ-৩৮০ ওঠা-নামা করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য যারা বিরোধিতা করেছিলেন তারা এসে দুঃখ প্রকাশ করছেন। আমরা আমাদের কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে এগিয়ে যাবো। স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, বিলের লোকজনকে সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন কার্যক্রম চলবে।’

শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিমানবন্দর নির্মাণ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মসিউর রহমান মামুন বলেন, ‘এখানকার মানুষ আবার বিমানবন্দর চান, সেটি প্রধানমন্ত্রীকে জানানো এই কমিটির মূল উদ্দেশ্য। পদ্মাসেতুর জন্য পুনর্বাসন হয়েছে, রেল প্রকল্পেও সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে। এসব দেখেই তাদের আগ্রহ বেড়ে গেছে।’

বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ স্থগিত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় এখানে (বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প) যারা বিনিয়োগ করেছেন, তারাও দেখবেন কতো দ্রুত তাদের টাকা ফেরত পাবেন। সেদিক থেকে বিবেচনা করে দেখা গেছে, আড়িয়াল বিল বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য আদর্শ জায়গা।’

শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও কমিটির সদস্য ওয়াহিদুর রহমান জিঠু বলেন, ‘চলতি মাসের ২৭ তারিখে ষোলঘর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে একটি সভার আয়োজন করা হবে। জনগণকে সংযুক্ত ও জাগ্রত করা এর মূল লক্ষ্য। শ্রীনগর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। দেশে একটি বিমানবন্দর প্রয়োজন, ঢাকার কাছে এই স্থানটি ভালো হবে। বিমানবন্দরটি নির্মাণ হলে এই এলাকার অনেক উন্নয়ন হবে। এছাড়া সারাদেশের মানুষ উপকৃত হবে।’

অন্য খবর  দোহারে নিষিদ্ধ চায়না দোয়াইর কারখানায় অভিযান

কমিটির সদস্য ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম বলেন, ‘যারা আন্দোলন করেছিল তারা অন্য একটি অপশক্তি। যারা চেয়েছিলো উন্নয়নমূলক কাজটি না হোক। বাধা দেওয়ার জন্য আন্দোলন করেছিল। আড়িয়াল বিলের স্থানীয় লোকজন তাদের ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিল। এখন এখানে বিমানবন্দরের কাজ শুরু হলে গ্রামবাসী আন্দোলনে যাবে না। কেননা গ্রামবাসীই এখন বিমানবন্দর নির্মাণের দাবি নিয়ে এসেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহি বি চৌধুরী বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। আড়িয়াল বিলে মূলত যাদের জমি রয়েছে তাদের এই কমিটির কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। জনগণকে আরও সম্পৃক্ত করে জোরালোভাবে একত্রিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাবো।’

কমিটির সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তাহিয়াত হোসেন বলেন, ‘প্রত্যেকটি ইউনিয়নে গিয়ে সভা হবে। জমির মালিক থেকে শুরু করে সবাই এখানে থাকবে। যারা জমির মালিক তারাই মূলত এগিয়ে এসেছে। সরকারের প্রতি তাদের আস্থাও বেড়েছে অনেক।’

কমিটির সদস্য গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব) খান মো. নজিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফের আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য তৃণমূল পর্যায় থেকে দাবি জানানো হবে। অক্টোবর-নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদনটি পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’

২০১০ সালে আড়িয়াল বিল এলাকায় ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরের বছর জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হলে আন্দোলন শুরু করে আড়িয়াল বিল এলাকার মানুষ। আন্দোলনের মুখে তখন বিমানবন্দরের নির্মাণ প্রকল্পটি স্থগিত করা হয়।

আপনার মতামত দিন