ইসরায়েলে ‘ইহুদি-নাৎসি’ প্রবণতার উত্থান হচ্ছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিখ্যাত ইহুদি বুদ্ধিজীবী নম চমস্কি। গত সপ্তাহে আই টোয়েন্টিফোর নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজনৈতিক সমালোচক, ভাষাবিদ ও পণ্ডিত চমস্কি আরেক ইহুদি পণ্ডিত ইয়েশায়াহু লেইবোবিৎজ’র সতর্ক বাণীর পুনরাবৃত্তি করেন। চমস্কি নির্যাতিত ও অত্যাচারীর ভিত্তিতে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নিষ্ঠুর দখলদারিত্বের অমানবিক প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
লেইবোবিৎজকে এই বছর ইসরায়েল প্রাইজের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। তার বিষয়ে বলতে গিয়ে চমস্কি বলেন, ‘‘লেইবোবিৎজ সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ‘যদি দখলদারিত্ব চলতে থাকে তাহলে ইসরায়েলিরা ‘ইহুদি-নাৎসি’তে রুপান্তরিত হবে’।’’ চমস্কি তার ‘ইহুদি-নাৎসি’ শব্দটিকে একটি ‘শক্তিশালী পরিভাষা’ হিসেবে অভিহিত করেন। তার মতে, এইভাবে ইসরায়েলকে বর্ণনা করা হলে বেশিরভাগ মানুষই তা থেকে নিস্তার পাবে না। চমস্কি ব্যাখ্যা করেন, লেইবোবিৎজের এই অবস্থানের কারণেই তিনি রাগান্বিত না হয়েই ইসরায়েল সম্পর্কে কথা বলতে সমর্থ ছিলেন।
লেইবোবিৎজ ইসরায়েলের একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, প্রাণরসায়নবিদ ও পণ্ডিত ছিলেন। তিনি ১৯৯৪ সালে জেরুজালেমে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন যে, ইহুদি মানবিক মূল্যবোধের চেয়ে ইসরায়েল রাষ্ট্র ও জায়নবাদই বেশি পূজনীয় হয়ে উঠেছে। এছাড়া ফিলিস্তিনি এলাকায় ইসরায়েলের চালানো দখলদারিত্বকে তিনি প্রকৃতগতভাবে ‘ইহুদি-নাৎসি’ হিসেবে অভিহিত করেন।
১৯৫৩ সালে কিবয়া গ্রামে ভয়ঙ্কর ইসরায়েলি কমান্ডো ইউনিট ১০১ হামলা চালিয়ে ৬০ জনকে হত্যা করে। নিষ্ঠুরতার জন্য ওই ঘটনায় পরিচিত। ওই সময় লেইবোবিৎজ বলেন, ‘আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করতে হবে যে, আমাদের এই তরুণরা কোথা থেকে এসেছে, যাদের মধ্যে এই নৃসংশতা চালানোর বিষয়ে কোনও মানসিক সংশয় নেই? এই ধরনের কাজ করার জন্য ভেতরকার কোন প্রেরণা তাদের মধ্যে কাজ করেছে? এই তরুণরা কোনও উচ্ছৃংখল জনতা নয়, তারা জায়নবাদী সামাজিক শিক্ষার ফল।’
লেইবোবিৎজ’র কথা সঙ্গে সুর মিলিয়ে চমস্কি বলেন, ‘যদি আপনি কারও গলায় পা দিয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই তার বৈধতা দেওয়ার উপায় খুঁজতে হবে’। লেইবোবিৎজ’র সতর্কতার পুনরাবৃত্তি করে তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের দোষারোপ করা চলমান দখলদারিত্ব, মানুষকে অপমান করা ও ইসরায়েলি সরকারের সন্ত্রাসী হামলারই প্রতিফলন’।
ভাষাতত্ত্ববিদ নম চমস্কি বলেন, এখন ইসরায়েলি দখলদারির সমালোচনা করলেই তাকে দেশদ্রোহী অ্যাখ্যা দেওয়া হয়। এই ব্যাপারটির কারণে রাজনৈতিক বৈচিত্র্যতা থেকে বিকল্পপন্থীরা দৃশ্যত হারিয়ে গেছে। গাজা উপত্যকার পরিস্থিতির বিরোধিতার ঘটনায় বিরোধিদের সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নকরণকে একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। আর গাজা উপত্যকাকে তিনি একটি ‘বন্দি শিবির’ হিসেবে মনে করেন।
চমস্কি বলেন, ‘গাজার কথাই ধরুন। যদি আপনি ২০ লাখ মানুষকে একটি বন্দি শিবিরে আটকে রাখেন আর যদি সহিংস অবরোধ আরোপ করেন তাহলে তার কী প্রভাব পড়বে? আপনার নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে- আমি কি এই কাজকে বৈধতা দিচ্ছি? যেসব মানুষ এর বিরোধিতা করেন তাদের দেশদ্রোহী, আরবপ্রেমীসহ আরও নানা কিছু বলা হয়। আমি আপনাদের উদাহরণ দেবো না, আপনারা ইউরোপীয় ইতিহাসেও এই ব্যাপারটি লক্ষ্য করতে পারবেন।’
ইসরায়েলি সমাজে একটি সাধারণ ধারণা আছে যে, নিরাপত্তার কারণে পশ্চিম তীরে সামরিক উপস্থিতির দরকার রয়েছে। চমস্কি এই ধারণা বাতিল করে দিয়ে বলেন, এর উল্টোটাই সত্য। পশ্চিম তীরে সামরিক দখলদারিত্ব ইসরায়েলের নিরাপত্তাকে শুধু বিপদেই ফেলবে। তিনি বলেন, ‘যেকোনও ইসরায়েলি কৌশল বিশ্লেষককে জিজ্ঞেস করে দেখুন। তারা সবাই বোঝেন যে, পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব ইসরায়েলি নিরাপত্তার জন্য হুমকি’।
চমস্কি বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে পশ্চিম তীর থেকে সরে আসার বিনিময়ে আরব নেতারা শান্তির প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকবারই ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে নিরাপত্তা হুমকিকে বেছে নিচ্ছে।