ঢাকা-নবাবগঞ্জ-দোহার-শ্রীনগর সড়ক (জেডকেডি) প্রশস্তকরণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। ৪৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ আগামী ২১ ফেব্রুয়ারিতে শেষ করার কথা থাকলেও গত তিন মাসে হয়েছে মাত্র ২-৩ কিলোমিটার কাজ।
আবার কাজ হচ্ছে জোড়াতালি দিয়ে। ধীরগতির কাজের পাশাপাশি যেনতেনভাবে কাজ করায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী রোববার জড়ো হয়ে সড়কের পাশে নির্মিত গার্ডার লাথি মেরে ভেঙে ফেলেছে। বেইজমেন্ট তৈরি করে গার্ডার নির্মাণ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা করেনি।
এছাড়া নামকাওয়াস্তে সিমেন্ট ব্যবহার করে বালুর ওপর ইট বসিয়ে গার্ডার নির্মাণ করা হচ্ছিল। নাম প্রকাশ না করে সওজের এক কর্মকর্তাও নিম্নমানের কাজ করার কথা স্বীকার করেছেন। সওজের তত্ত্বাবধানে হাইটেক প্রতিষ্ঠান সড়ক নির্মাণের এই কাজ করছে।
স্থানীয়রা বলছেন, দোহার, নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এই সড়ক। গত তিন মাস ধরে কাজ শুরু হলেও সড়ক নির্মাণে অবহেলা ও অনিয়মের বিষয়টি সবারই নজর কাড়ছে। বাজার ও নিচু এলাকায় কাজ শুরু করলেও রাতের আঁধারে নিুমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছিল।
তারা বলছেন, কাজ শুরুর আগে স্থানীয় এমপি সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম সংশ্লিষ্টদেরকে গুণগত মান বজায় রেখে সড়ক সংস্কারের কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ সংক্রান্ত সভায় সালমা ইসলাম এমপিকে সওজের মুন্সীগঞ্জ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গুণগত মান বজায় রাখার অঙ্গীকারও করেছিলেন।
কথা হয় নবাবগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সাহিদুল হক খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বেইজ না করেই রাস্তার ওপর থেকে সড়কের দুই পাশে দেয়াল (গার্ডার) নির্মাণ করা হচ্ছিল। সড়কের ওপর ইট বসিয়ে সামান্য সিমেন্ট দিয়ে বালু ঢেলে তৈরি করা হচ্ছিল এই গার্ডার। জনগণের পায়ের চাপেই এগুলো ধসে পড়ছে। অপচয় কাকে বলে!
নবাবগঞ্জ বাজার পয়েন্টে শহীদ মিনারের সামনে ও নিমতলায় গিয়ে দেখা যায়, হালকা চাপেই রাস্তার দুই ধারে নির্মিত গার্ডার ভেঙে যাচ্ছে। রাস্তা যতটা প্রশস্ত করার কথা ছিল বিভিন্ন স্থানে সেখানে ছাড় দেয়া হয়েছে। ফলে রাস্তা সরু হওয়ার পাশাপাশি অনেক জায়গায় সড়ক বাঁকা হয়ে গেছে। ফলে বিপুল অর্থে সড়ক প্রশস্তকরণের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও যান চলাচলে দুর্ভোগ থেকেই যাবে।
পরিবহন ব্যবসায়ী আবদুল জলিল বলেন, যেভাবে কাজ হচ্ছে তাতে দুর্ভোগ রয়েই যাবে। সরকারি টাকার অপচয় ছাড়া কোনো উন্নয়ন দেখছি না। রাস্তায় বড় বড় গর্ত থাকায় গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।
নিম্নমানের কাজ ও কাজের ধীরগতি নিয়ে কথা হয় হাইটেক প্রতিষ্ঠানটির তদারককারী প্রকৌশলী তুষার সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, কাজের মান ঠিক রেখেই সব করা হচ্ছে। তবে এত বড় ব্যস্ত সড়কে কাজ করতে গেলে কিছু সমস্যা হতেই পারে। আমরা সব দেখে দ্রুত কাজটি সমাপ্ত করার চেষ্টা করব।
উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়কে কাজ হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি সওজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে রাতের আঁধারে দায়সারা কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ম্লান করতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঠিকাদার গুণগত মান বজায় না রেখেই কাজ করছে। তিনি কাজের মান বজায় রেখে দ্রুত তা শেষ করার দাবি জানান।
জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথের মুন্সীগঞ্জ রেঞ্জের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ আলম বলেন, সিডিউলের বাইরে কেউ কাজ করতে পারবে না। এমনটি হলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জনগণের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই আমরা ঠিকাদারকে সঠিক সময়ে মানসম্পন্ন কাজ করার তাগিদ দিয়েছি। তবে অনিয়ম বা অবহেলা করলে কেউ ছাড় পাবে না।