প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় অভিযান জোরদার হলেও শীর্ষ মাদক কারবারিরা থেকে যাচ্ছে আড়ালেই। ধরা পড়ছে শুধু মাদকসেবী ও খুচরা বিক্রেতারা। এখন দুই উপজেলায় মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চলছে। গত দুই সপ্তাহে র্যাব-পুলিশের অভিযানে দোহারে অন্তত ১৬ জন ও নবাবগঞ্জে অন্তত ২৫ জন গ্রেপ্তার হলেও এই তালিকায় নেই শীর্ষ কোনো ইয়াবা বা মাদক কারবারির নাম।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাব-পুলিশ মাদক কারবারিদের আলাদা তালিকা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এলাকাভিত্তিক কারবারিদের তালিকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব তালিকায় দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকজন মাদক কারবারির নাম রয়েছে।
অভিযানের খবরে ইতোমধ্যে গা-ঢাকা দিয়েছেন ৪-৫ জন মাদক কারবারি। অভিযানে যাদের নাগাল পাচ্ছে না পুলিশ ও র্যাব। অনুসন্ধানে জানা যায়, দোহার-নবাবগঞ্জে বড় দুই-তিনজন মাদক কারবারি বিভিন্ন সময় ধরা পড়লেও আইনি ত্রুটি কিংবা রাজনৈতিক প্রভাবে তদন্তে দুর্বলতার কারণে তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। এমনকি মামলা থেকে খালাসও পায়। বারবার জামিন পাওয়ার পর প্রভাব খাটিয়ে তারা সাক্ষীদের আদালতে হাজির হওয়া থেকে বিরত রাখে অথবা তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে বাধা সৃষ্টি করে। এভাবে আসামিরা শেষ পর্যন্ত খালাস পেয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোহারের রাইপাড়া, জামালচর, শিলাকোঠা, বাহ্রা, নাগেরকান্দা, করিমগঞ্জ, চরকুশাই, খানবাজার, পালামগঞ্জ, পোদ্দারবাড়ী, লক্ষ্মীপ্রসাদ, লটাখোলা বিলের পাড়, বেলদারপট্টি, চর জয়পাড়া, ওয়ান ব্যাংক সড়ক, অবকাশ সিনেমা হলের গলি, ভূতের গলি, থানার মোড়, ঋষিপাড়া, ইকরাশি চটপটির দোকানের সামনে, চালনাই সড়ক, খাড়াকান্দা, উত্তর জয়পাড়া চৌধুরিপাড়া, ঝনকি, মধুরচর, বিলাসপুর, মৈনট ঘাট, সুতারপাড়া, নিকড়া, নারিশা, উত্তর ও দক্ষিণ শিমুলিয়া, ফুলতলা, মুকসুদপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মাদকের কয়েকটি সিন্ডিকেট রয়েছে।
এলকাগুলো থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, সারা দিনই এসব এলাকাগুলোতে মাদকসেবী ও খুচরা বিক্রেতাদের আনাগোনা থাকলেও সন্ধার পর থেকে তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মাদকের এ বিকিকিনি ও সেবন চলে রাত ১০-১১ টা পর্যন্ত। এলাকার লোকজন ভয়ে মুখ খুলতে চাননা। এসব এলাকার ঘরের আড়ালে বা গলির ভেতর ঢুকে মাদক বিকিকিনি চলে দেদার। বিষয়টা এমন, ‘যারা খাচ্ছে তারাই বিক্রি করছে। বিক্রি করা মাদকের লাভের টাকায় নিজের মাদক সেবনের খরচ তুলে নিচ্ছে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, দোহার উপজেলার মুকসুদপুর ইউনিয়নের পাইনা সুমন, মাহমুদপুর ইউনিয়নের ইসমাইল কাজী, চর লটাখোলা এলাকার মো. আজিজুল, বিলাসপুর ইউনিয়নের পূর্ব চরের মো. আজাদ, বাঁশতলা এলাকার আনোয়ারুল আজিম, চরকুসাই এলাকার ফালু দফাদার, আমির সাধু, রাইপাড়া এলাকার মো. সাগর মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে যার যার এলাকায় সুপরিচিত। যাদের মধ্যে অনেকেই র্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরেও রয়েছেন। এছাড়া এরা সবাই মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িত আছেন। যাদের অনেকেই একাধিকবার মাদকের ছোট-বড় চালান সহ ধরা পরেছে। এদের বিরুদ্ধে কলম ধরতেও অনেক মিডিয়া কর্মী সাহস পায় না। কেউ কেউ আবার পুলিশের কাছে সম্প্রতি মাদক অভিযানে ধরা পড়েছে আবার অনেকেউ রয়েছে পুলিশের নাগালের বাইরে। কেউ কেউ আবার গা ঢাকা দিয়েছে সম্প্রতি। দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘বিদ্যমান আইনে মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ কারো কাছে মাদক না পাওয়া গেলে সে যত বড় কারবারিই হোক, তাকে ধরা যায় না। তবে আমরা বড় কারবারিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছি। পুলিশ ও র্যাব বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।’
অপরদিকে নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, নবাবগঞ্জে মাদকবিরোধী অভিযানে অন্তত ২৫ জন আটক হয়েছে। যাদের মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করেছি।