দোহার কি ঢাকা জেলার ছিটমহল??

4897
দোহার কি ঢাকা জেলার

‘দোহার’ শব্দটা শুনলেই বুকের গভীরে একটা অন্যরকম টান অনুভব করি সব সময়। আমাদের শিকড় আছে এখানে। ঢাকা জেলার অন্তর্গত ছোট্ট এই উপজেলা নিয়ে আমাদের গর্ব অনেক। বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের কাছে নিজেকে দোহারের ছেলে অর্থাৎ ঢাকার স্থানীয় ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতে আমাদের বুক গর্বে ফুলে ঊঠে। আমরা ঢাকা-১ নির্বাচনী আসনের বাসিন্দা। আহা কী অপার আনন্দ! এই সুখে আমরা অনেকেই বিভোর।

ঢাকার কথা সামনে আসলেই ভেসে ঊঠে সকল নাগরিক সুবিধা পূর্ণ মেগা শহর, কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য সেখানে আমাদের প্রিয় দোহারকে বানিয়ে রাখা হয়েছে রাজধানী ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন কোন নির্বাসিত এলাকা হিসেবে। রাজধানী হতে মাত্র ৪২ কিলোমিটার দুরত্বের (বাস্তবিক ২৯ কিলোমিটার) এই এলাকা যেতে সময় লাগে কমপক্ষে ২ ঘন্টা অথচ সুদূর ময়মনসিংহ কিংবা কুমিল্লা যেতে এই ২ ঘন্টা লাগে। ঢাকার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার এই বেহাল দশা আমি গত দেড় যুগ ধরে অপরিবর্তিত দেখছি। এই সময়ে বিভিন্ন সরকারের দলীয় বড় বড় মন্ত্রী-এমপি ছিলেন দোহারের অনেক গর্বিত সন্তান। কিন্তু তাদের কেউই কি কারনে এলাকার মূল যোগাযোগের উন্নয়নে মনযোগ দেননি তা আমার বোধগম্য নয়। কেউ কেউ এলাকার ভিতরের রাস্তা ঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন বলে আমরা অনেকেই তা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে আছি। মাঝে মাঝে আমি ভাবি আসলেই কি দোহার ঢাকা জেলায় অবস্থিত না মুন্সিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। কাগজে কলমে দোহারকে ঢাকা জেলার অংশ হিসেবে রাখা হলেও বাস্তবে এটাকে মনে হয়  মুন্সিগঞ্জের ভিতরে  ঢাকার ছিটহল।

অন্য খবর  হাসিনা-খালেদাকে জেদ পরিহার করতে হবেঃ নুরে আলম সিদ্দিক

আমার এক বন্ধু অনেক আক্ষেপ নিয়ে একদিন এক ব্যাংক কর্মকর্তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলেছিল। ঘটনাটা ছিল এইরকম- এক ব্যাংক কর্মকর্তা ঢাকায় বদলির জন্য অনেক দৌড়াদৌড়ি, নানা তদ্বির করে শেষ পর্যন্ত ঢাকার দোহারে পোস্টিং পেলেন। তিনি খোঁজ নিয়ে জানলেন তার নতুন কর্মস্থান জয়পাড়া, দোহার, ঢাকা। নতুন ব্রাঞ্চ থেকে তাকে জানান হল দোহারে আসার জন্য তাকে গুলিস্থান হতে আরাম পরিবহনে করে জয়পাড়া যেতে হবে। ত যথারীতি ভদ্রলোক আরাম পরিবহনে উঠলেন এবং বাসে কন্ডাক্টরকে বলেন, “ভাই আমি জয়পাড়া যাব। আমাকে সঠিক জায়গায় নামিয়ে দিয়েন।’’ বাস জয়পাড়া, ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। আধা ঘন্টা পর ভদ্রলোক দেখল বাস মুন্সিগঞ্জ জেলায় দিয়ে যাচ্ছে। একঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে বাস মুন্সিগঞ্জ জেলায় দিয়ে চলছে। দেড় ঘন্টা হয়ে যাচ্ছে তারপরও বাস মুন্সিগঞ্জ জেলা থেকে বের হচ্ছে না। তখন ভদ্রলোক বাসের কন্ডাক্টরকে ডেকে প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলল, “আমি বললাম ঢাকা, দোহার যাব, আমি জায়গাটা চিনি না । তারপর ও আপনি আমাকে মুন্সিগঞ্জে নিয়ে এসেছেন। আমাকে নামিয়ে দেন। আমি মুন্সিগঞ্জ যাব না।‘’ তখন বাসের কন্ডাকটর তাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছে নে যে, তিনি সঠিক বাসেই উঠেছেন এবং এই বাস ঢাকাই যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত অন্যান্য যাত্রীদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে ঐ ব্যাংক কর্মকর্তা তার কাঙ্খিত ঢাকা দোহারে পৌছে ছিলেন ঠিকই। কিন্তু হিসেব মিলাতে পারেন নি যেই ঢাকা যেতে মুন্সিগঞ্জ দিয়ে দেড় ঘন্টা চলতে হয় সেই এলাকা ঢাকা হয় কিভাবে???

অন্য খবর  পতাকা হোক চির অম্লান, সমুন্নত

এই হল আমাদের গর্বের ঢাকা-১ আসন। নারায়নঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজিপুরবাসীরা যেখানে অন্য জেলার বাসিন্দা হয়ে প্রতিদিন নিজের বাড়ির খাবার খেয়ে একঘন্টায় রাজধানী গিয়ে ব্যাবসা-বানিজ্য, পড়াশুনা করতে পারছে অনায়াসে সেখানে আমরা দোহারবাসী ঢাকার অধিবাসী হয়েও মেসে থেকে বুয়াদের অখাদ্য রান্না খেয়ে ব্যাবসা-বানিজ্য, পড়াশুনা করতে হচ্ছে। জিপিও থেকে মাত্র ২৯ কিলোমিটার দূরে কিন্তু যেতে শ্রীনগর হয়ে ৫৮ কিলোমিটার আর কেরাণীগঞ্জ দিয়ে গেলে ৪২ কিলোমিটার ঘুরে। এর চেয়ে কষ্ট, এর চেয়ে অপমান আর হতে পারে না! এই দুর্ভোগের শেষ কবে?

বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি উন্নয়ন খাত বিষয়ক উপদেষ্টা, বর্তমান ও সাবেক এমপি-মন্ত্রী, সব দলের নেতা কর্মী সহ দোহারের প্রত্যেককের এই বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার এখনই সময়। আমার বিশ্বাস আপনারা একটু মনোযোগী হলে, পরিবহন নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রনে কার্যকর ভূমিকা রাখলে এখনই এক ঘন্টায় ঢাকা যাওয়া–আসা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আমারা বাড়িতে থেকেই রাজধানীতে পড়াশুনা, ব্যাবসা-বানিজ্য করতে পারব। আমাদের অন্য কোন চাওয়া নেই। আমরা মুন্সিগঞ্জের ভেতর ঢাকার ছিটমহল হিসেবে থাকতে চাই না।  আমাদের একটাই দাবী-

ঘুরাও উন্নয়নের চাকা,

দোহারকে বানাও সত্যিকারের ঢাকা।

 

লেখক: আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

আপনার মতামত দিন